বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁও এলজিইডি মিলনায়তনে ‘শিশুর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করি’ শীর্ষক ১৫তম চাইল্ড পার্লামেন্ট অধিবেশনে শিশুদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
দেশের ৬৪ জেলা প্রতিনিধি ও ১৬টি বিশেষ অঞ্চলের শিশুসহ দেড় শতাধিক শিশু প্রতিনিধির অংশগ্রহণে এবারের চাইল্ড পার্লামেন্ট অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।
সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশ, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ শিশু একাডেমী যৌথভাবে চাইল্ড পার্লামেন্ট অধিবেশনের আয়োজন করে।
অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইনমন্ত্রী বলেন, শিশু অপহরণ, গুম, হত্যাসহ শিশুদের প্রতি সকল ধরনের নির্যাতন একই সূত্রে গাথা। তাই এ ধরনের অপরাধে জড়িত সকল অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে, যেন ফের সংঘটিত না হয়।
শিশুরা বিভিন্ন প্রশ্নের মাধ্যমে শিশু আইন’২০১৩ কার্যকর ও বাস্তবায়নে লোকবল, কারিগরি সহযোগিতা ও বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি জানায়।
বাজেট বাড়ানোর বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘শিশু বাজেট বাড়ানোর বিষয়ে অর্থমন্ত্রীকে আমি অনুরোধ করবো’।
রাস্তাঘাট, পরিবহন ও নিজ বাড়িতেও শিশুরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এসব নির্যাতনের ফলে শিশুরা ক্ষোভ, বিদ্বেষ ও হতাশার মধ্যে বড় হচ্ছে। এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের বিষয়ে আনিসুল হক বলেন, আইনের চেয়েও শিশু নির্যাতন বন্ধে পিতা-মাতা ও শিক্ষকের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। সন্তানের সঙ্গে পিতা-মাতার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করতে হবে। শিশুর প্রতি পারিবারিক সহিংসতা বন্ধে সামাজিকভাবে প্রতিরোধ করতে হবে এবং সর্বপ্রথম বাবা-মাকে সচেতন হতে হবে।
তিনি বলেন, ‘শিশু সংক্রান্ত আইন বাস্তবায়নে ও শিশু অধিকার নিশ্চিত করতে যা যা করা প্রয়োজন, সবই করবো। শিশু ধর্ষণ, যৌন নির্যাতন ও বিভিন্ন হয়রানিমূলক ঘটনার দ্রুত ট্রাইব্যুনাল করে বিচারের আওতায় আনা হচ্ছে। আগের চেয়ে মামলার দীর্ঘসূত্রতা কমেছে। শিশু নির্যাতন করে কেউ পার পাবে না। শিশুই দেশের নেতৃত্বে থাকবে, তাদেরকে উন্নত রাষ্ট্রের উপযোগী করে গড়ে তোলার দায়িত্ব আমাদের সকলের’।
শিশুদের মধ্যে ইন্টারনেটের ব্যবহার বেড়ে গেছে। চাইল্ড পার্লামেন্টের জরিপে দেখানো হয়েছে, ৮৪ শতাংশ শিশু ম্যাসেঞ্জার ও ফেসবুক ব্যবহার করে। এর মধ্যে ৮২ শতাংশ শিশু হয়রানির শিকার হয়। তারকা চিহ্নিত এমন প্রশ্নের উত্তরে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘ইন্টারনেটের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে শিশু নির্যাতনের নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। আমরা আইনের মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। খুব দ্রুত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করতে যাচ্ছি। এছাড়া পর্নোগ্রাফি আইন রয়েছে। এ আইন সম্পর্কে বাবা-মাকে সর্তক হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি’।
চাইল্ড পার্লামেন্টের স্পিকার মেফতাহুন নাহার বলে, ‘পার্লামেন্টে আমরা শিশু সহায়ক পরিবেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শিশুদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নীতিনির্ধারকদের কাছে তুলে ধরি। ইতোমধ্যে ১৪টি অধিবেশন সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন করেছি। সেখানে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিনোদন, সুরক্ষা, জাতীয় বাজেটে শিশুদের জন্য বরাদ্দ, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে শিশুদের ব্যবহার বন্ধ করাসহ সাম্প্রতিক বন্যায় শিশুদের শিক্ষাক্ষেত্রে ক্ষতি ইত্যাদি বিষয়গুলো সরকারের কাছে তুলে ধরা হয়’।
চাইল্ড পার্লামেন্টে উপস্থিত ছিলেন সেভ দ্য চিলড্রেনের চাইল্ড রাইটস্ গভর্নেন্স বিভাগের প্রধান লায়লা খন্দকার, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর অর্লা মারফী, চাইল্ড রাইটস অ্যান্ড প্রটেকশন বিভাগের প্রধান তানিয়া নুসরাত জামান প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৭
এমসি/এএসআর