সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) বড়দিন উপলক্ষে আয়োজন করা হয়েছে প্রার্থনা সভা, কেক কাটা, কীর্তন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধু সড়কের সাধু পৌলের গির্জা ও সিরাজউদ্দৌলা সড়কের ব্যাপ্টিস্ট চার্চকে সাজানো হচ্ছে বর্ণিল সাজে।
জেলা খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি পিন্টু পলিকাপ পিউরিফিকেশন বলেন, ''ইতোমধ্যে সিটি করপোরেশন থেকে আমাদের রঙয়ের কাজ করে দেওয়া হয়েছে। আগের দিন রোববার (২৪ ডিসেম্বর) বিকেল ৫টায় প্রার্থনার মধ্যদিয়ে আমাদের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। সোমবার বড়দিনের দিন সকাল সাড়ে ৮টায় প্রার্থনা হবে, সাড়ে ১০টায় আমরা অতিথিদের নিয়ে কেক কাটবো। আমরা মেয়রকে ও সংসদ সদস্যদের প্রতি বছর দাওয়াত করি, আমাদের অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক রাব্বি মিয়া ও জেলা পুলিশ সুপার মঈনুল হক উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করছি।
মূলত সকালে প্রার্থনা অনুষ্ঠানের পর সবাই বাইরে উৎসব করে, আমাদের এখানে পর্যাপ্ত জায়গা নেই বলে বিভিন্ন রেস্টুরেন্টগুলো সাজিয়ে নানা আয়োজন করা হয়। ''
সভাপতি বলেন, আমাদের অনুষ্ঠানে নিরাপত্তার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল আশ্বস্ত করেছেন।
তিনি বলেন, এবার আমাদের পোপ এসেছিলেন। তিনি বিশেষ ভাবে আমাদেরকে রোহিঙ্গাদের বার্তা দিয়ে গেছেন। বলে গেছেন তাদের জন্য সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে। পার্শ্ববর্তী দেশের দিকে যেন আমরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে তাদের গ্রহন করি, সেটি বলেছেন। বিশ্বজুড়ে শান্তির বার্তা ও রোহিঙ্গাদের সহযোগিতা ও তাদের জন্য প্রার্থনার বার্তাই এবার পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, 'খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী দুটি গোত্রের (ক্যাথলিক ও ব্যাপ্টিস্ট) জন্য নারায়ণগঞ্জ শহরে দুটি গির্জা রয়েছে। ক্যাথলিকদের জন্য শহরের ১৩৫ বঙ্গবন্ধু সড়কে সাধু পৌলের গির্জা ও ব্যাপ্টিস্টদের জন্য সিরাজউদ্দৌলা সড়কে ব্যাপ্টিস্ট চার্চ। ব্যাপ্টিস্ট চার্চটি ১৮৪৫ সালে প্রতিষ্ঠিত। চার্চ প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে রেভারেন্ড রামচরণ ঘোষের নাম বিশেষভাবে উল্লেযোগ্য। এ চার্চে ধর্মীয় আচার ছাড়াও বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজকর্মও হয়ে থাকে। এগুলোর মধ্যে চিকিৎসা সেবা, মাতৃসদন, শিক্ষাদান উল্লেখযোগ্য। অন্যদিকে সাধু পৌলের গির্জা ১৯৪৯ সালে ইতালিয়ান ফাদার জন সে ক্যাথলিক গির্জা প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি গির্জার নাম দেন সাধু পৌলের গির্জা। '
জেলা খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রেভারেন্ড মি. সৌরভ দেউড়ী বলেন, 'নারায়ণগঞ্জে স্থানীয় খ্রিস্টানদের সংখ্যা হাতে গোনা, এদের মধ্যে অনেকেই ঢাকায় উৎসব পালন করতে চলে যান, আবার অনেকে আমাদের সঙ্গে পালন করেন। আমাদের আলোকসজ্জা ও ক্রিসমাস ট্রি সম্পন্ন হচ্ছে। '
ব্যাপ্টিস্ট চার্চের সম্পাদক অরবিন্দ হালদার জানান, সকাল সাড়ে ১০টায় প্রার্থনার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে গীর্জায়। দুপুর ১টায় কেক কাটার মধ্য দিয়ে উৎসবের সমাপ্তি হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শহর ছাড়াও ফতুল্লার সস্তাপুর, পাগলা, দেলপাড়া, বন্দরের লক্ষ্মণখোলা, সিদ্ধিরগঞ্জের চিটাগাং রোড, সদর থানার গোগনগর এলাকায় খ্রিস্টানদের বাস। তাদের বেশির ভাগই চাকরিজীবী। বিশেষ করে গার্মেন্টস, বায়িং হাউস, চাইনিজ রেস্টুরেন্ট ও বিউটি পার্লারে কর্মরত। নারায়ণগঞ্জে ক্যাথলিক ও ব্যাপ্টিস্ট ছাড়াও খ্রিস্টানদের কয়েকটি ক্ষুদ্র সম্প্রদায়ের লোকও রয়েছে। তাদের জন্য নারায়ণগঞ্জে কোনো চার্চ নেই। তারা বাসায় কিংবা অফিসে অথবা চাইনিজ রেস্টুরেন্টে বড়দিন উপলক্ষে অস্থায়ী গির্জা তৈরি ও ক্রিসমাস-ট্রি সাজিয়ে থাকেন।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ জানান, আমার ওয়ার্ডের দুটি গির্জা অবস্থিত। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে প্রতি বছরের মত আলোকসজ্জা ও রঙয়ের কাজ করে দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া দুটি শুভেচ্ছা গেটও নির্মাণ করে দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৭
বিএস