এ দু’টি ঘটনাই জানান দিচ্ছে, এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে চলন্ত গাড়িতে বিস্ফোরণের মত ভয়াবহ ঘটনা আরও ঘটতেই থাকবে।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানির তথ্যমতে, সারা দেশে সিএনজি চালিত যানবাহন প্রায় সোয়া দুই লাখ।
তবে, মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের বিষয়ে ভ্রুক্ষেপ নেই গণপরিবহনগুলোর চালক ও মালিক এবং নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের। অনেক চালক-মালিকই জানেন না ঠিক কবে তার গাড়িতে গ্যাসের সিলিন্ডার লাগানো হয়েছে বা কখনো পরীক্ষা করা হয়েছিল কি না।
শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর শাহবাগে ৮ নম্বর গাড়ির সহকারী যাত্রীর জন্য হাঁক-ডাক দিচ্ছিলেন। কথা প্রসঙ্গে পুরাতন ওই গাড়িটির চালক জহিরুল জানান, তিনিই গাড়িটির মালিক। ৬ বছর আগে সেকেন্ডহ্যান্ড গাড়িটি কিনেছেন।
এই সাত বছরে সিলিন্ডার একবারও পরীক্ষা করা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, এখন লাগানো দুটি সিলিন্ডারসহই গাড়িটা কিনছিলাম। তহন দেখছি সিলিন্ডারগুলা নতুন লাগাইছিল। পরে কোন ডিসটার্ব দেয় নাই তাই আর পরীক্ষা করাই নাই।
৫ বছর পর পর পরীক্ষা করানোর নিয়মের কথা তার জানা নেই। মোবাইল কোর্ট হলে পুলিশ ধরলে কয়েকবার জরিমানা দিয়েই পার পেয়েছেন বলেও জানান তিনি।
শাহবাগ এলাকায় মিরপুর-সদরঘাট রুটে চলাচলকারী বিহঙ্গ পরিবহনের চালক তাজুল ইসলাম বলেন, কোম্পানির গাড়ি কোম্পানি দেখাশোনা করে। আমরা এইসবের খোঁজ রাখি না।
পুরাতন সিলিন্ডারে বিস্ফোরণের ঝুঁকি থাকে? জানেন কি না, জবাবে তিনি জানান, ঠিক কবে এই গাড়িটিতে সিলিন্ডার লাগানো হয়েছিল তা সঠিক জানা না থাকলেও তা ৫ বছরের বেশি এ বিষয়ে তিনি নিশ্চিত। কোন সমস্যা ছাড়া নির্ধারিত সময়ের পর সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটবে বলে তার জানা নাই। তবে বেশি কিছু জানার হলে মালিকের সঙ্গে কথা বলার অনুরোধ করেন তিনি।
নিয়মানুযায়ী গাড়ির একটি গ্যাস সিলিন্ডারের মেয়াদ পাঁচ বছর। এরপর নিরাপত্তার স্বার্থে মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার পুনঃপরীক্ষা করা উচিত। প্রয়োজন হলে সিলিন্ডার বদলে ফেলা উচিত। কিন্তু সচেতনতার অভাব এবং আইনি বাধ্যবাধকতা না থাকায় বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা প্রায় সবার মধ্যেই।
গাড়িতে লাগানো সিলিন্ডার পরীক্ষা করে বিস্ফোরক অধিদফতরে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হয় না। বিস্ফোরক অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, এ পর্যন্ত মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাস সিলিন্ডারসহ গাড়ির সংখ্যা দেড় লাখেরও বেশি হলেও মাত্র ১০ থেকে ১৫ হাজার গাড়ি পরীক্ষার হালনাগাদ রিপোর্ট তাদের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে।
নিয়মিত গণপরিবহনে যাতায়াতকারী ব্যাংক কর্মকর্তা জাহিদ বলেন, প্রতিনিয়ত প্রয়োজন থেকেই আমাদের যাতায়াত করতে হয়। গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ভয়ে তো আমরা ঘরে বসে থাকতে পারবো না। কর্তৃপক্ষ যদি যথাযথ পদক্ষেপ না নেয় তাহলে আমাদের কী করার আছে।
এ বিষয়ে ডিএমপি ট্রাফিক উত্তর বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) প্রবীর কুমার রায় বলেন, মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে প্রতিনিয়তই মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়িকে জরিমানাসহ ডাম্পিংয়ে পাঠানো হয়। এছাড়া, এ বিষয়ে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের নিয়মিত অভিযান চলমান আছে।
গত ২০ ডিসেম্বর রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে একটি যাত্রীবাহী বাসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এর আগে ১৩ ডিসেম্বর রাজধানীর মগবাজার ফ্লাইওভারের উপর অগ্নিকাণ্ডে আরেকটি বাস পুড়ে যায়। দুটি ঘটনাতেই কোন যাত্রী হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও শাহবাগের ঘটনায় বাসের ড্রাইভারের হাত ও পা পুড়ে যায়। ঘটনার পর পর সংশ্লিষ্টরা জানান, গ্যাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরণে বাসগুলোতে আগুন লেগে যায়।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৭
পিএম/আরআই