চট্টগ্রামের পাহাড়তলী রেলওয়ে কারখানার ইয়ার্ডে পড়ে ছিল রেলকোচগুলো। সেগুলোকে ধবধবে সাদা জমিনে জাতীয় পতাকার রং লাল-সবুজ রেখায় সজ্জিত করে বিশ্বমানে উন্নীত করা হচ্ছে।
১৯৯৮ সালে আমদানি করা জার্মান প্রযুক্তির আইআর কোচগুলোর নির্মাতা ইরানের ওয়াগন পার্স কোম্পানি। সে সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে মিটারগেজ লাইনে সূবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেন চলতো কোচবহরটি দিয়ে। পরে সূবর্ণ এক্সপ্রেসের কোচ পাল্টে দেওয়ায় এগুলো পরিত্যক্ত ও জরাজীর্ণ অবস্থায় পাহাড়তলী কারখানায় পড়েছিল পাঁচ বছর।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, ইরানি কোচগুলোর সুপার স্ট্র্যাকচার (মূল কাঠামো) নষ্ট হলেও আন্ডারফ্রেম বা বগি ছিল মোটামুটি সচল। ফলে ওই কোচগুলো নতুনরুপে পুনর্বাসনের (রিহ্যাবিলেটেশন) উদ্যোগ নেয় কর্তৃপক্ষ। বর্তমান বিশ্ব বাজার দর অনুসারে একটি মিটারগেজ কোচের দাম প্রায় পাঁচ কোটি টাকা। রাজস্ব খাতে সেগুলোর পুনর্নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে গড়ে মাত্র ৮০ লাখ টাকা করে। সেক্ষেত্রে কোচপ্রতি সাশ্রয় হচ্ছে ৪ কোটি ২০ লাখ টাকা। অর্থাৎ ১৮টি কোচ সচলে সরকারের বৈদেশিক মুদ্রা বাঁচবে ৭৫ কোটি ৬০ লাখ টাকার মতো।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, কারখানাটিতে নিয়ে আসার পর রেল ভবন নির্দেশ দেয় যে, আমদানি নির্ভরশীলতা কমাতে ওই কোচগুলো সৈয়দপুরেই পুনর্বাসন করতে হবে। শুরু হয়ে যায় বিশাল কর্মযজ্ঞ।
সূত্র জানায়, ১৮৭০ সালে ১১০ একর জমিতে প্রতিষ্ঠিত কারখানার ২৬টি হেভি রিপিয়ারিং শপে (উপ-কারখানা) শুরুতে ১০/১২ হাজার কর্মচারী থাকলেও বর্তমানে কর্মরত ১ হাজার ৫৬৮ জন। শূন্যপদের সংখ্যা ২ হাজার ৪৫৩টি। দীর্ঘদিন লোক নিয়োগ না করায় এবং বিভিন্ন শপের কর্মচারীরা অবসরে যাওয়ায় জনবল সংকট চরম আকার ধারণ করেছে।
এর মাঝেই কারখানাটির হেভি রিপিয়ারিং শপ ছাড়াও বগি শপ, ক্যারেজ শপ ও পেইন্ট শপে চলছে কোচগুলোর মেরামত কাজ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কোচগুলোতে অত্যাধুনিক ও আরামদায়ক চেয়ার (আসন) ও আধুনিক লাইট সংযোজন এবং মেঝেতে মাইল্ড স্টিলের পরিবর্তে স্টেইনলেস স্টিল ও ফ্লোরম্যাট ব্যবহার করা হচ্ছে। অসৎ উদ্দেশ্যে চেইন টেনে কেউ যেন ট্রেন থামাতে না পারেন, সেজন্য মান্ধাতা আমলের ব্যবস্থার পরিবর্তে অ্যালার্ম চেইন পুলিং কন্ট্রোলার ও টয়লেটে আধুনিক কমোডের ব্যবহারসহ মুঠোফোন ও ল্যাপটপ চার্জের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে।
সৈয়দপুর কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক (ডিএস) মুহাম্মদ কুদরত-ই-খুদা জানান, ১৮টি কোচের মধ্যে ইতোমধ্যেই মেরামত শেষ হওয়া তিনটিসহ ১২টি সংযোজিত হবে লালমনিরহাট-ঢাকা রুটের লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনে। পুরনো কোচ পাল্টে ট্রেনটি চলবে নতুনগুলো দিয়ে। বাকি ৬টি রিজার্ভ থাকবে। আগে লালমনি এক্সপ্রেসের সর্বোচ্চ গতি ছিল ঘণ্টায় ৬৫ কিলোমিটার। আধুনিকায়নে কোচের বগিগুলোর গতি ৮০ কিলোমিটারে উন্নীত হচ্ছে। ফলে অল্প সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে ট্রেনটি।
তিনি জানান, পুনর্বাসিত হতে যাওয়া কোচগুলোর ৮০ শতাংশের কাজই নতুন। নকশাতেও (ব্লু প্রিন্ট) আধুনিকতা আনা হয়েছে। সেগুলোর পরিদর্শনে এসে টেকনিক্যাল খুঁটিনাটি দেখে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
তিনি বলেন, ‘শিগগিরই আমরা আরও বেশি সংখ্যক কোচ নির্মাণ করতে পারবো। এতে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে’।
বাংলাদেশ সময়: ০১৫৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৭
এএসআর