শুধু আয়েশা একা নয়, ওই রাস্তা দিয়ে হেঁটে কিংবা গাড়িতে যিনিই যাচ্ছেন তিনিই নাক চেপে ধরে কোনোমতে জায়গাটা পার হচ্ছেন। তবে বিপাকে পড়ছেন রিকশা কিংবা খোলা গাড়িতে যারা যাচ্ছেন তারা।
এতোক্ষণ বলা হচ্ছিলো রাজধানীর মগবাজার বিটিসিএল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনের জায়গাটির কথা। ওয়্যারলেস রেলগেট পার হয়ে কিছুদূর সামনে এগোলেই রাস্তার উপর চোখে পড়বে একটি বড় ধরনের ময়লার ভাগাড়। পাশেই বিটিসিএল অফিসার্স কোয়ার্টার। একদিকে কোয়ার্টারের দেওয়াল, অন্যদিকে রাস্তা। বড় ধরনের দু’টি ডাস্টবিন বসানোর কোনো জায়গা সেখানে নেই।
কিন্তু বছরের পর বছর ওই রাস্তার উপরেই রাখা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা। ময়লা ফেলা হচ্ছে আশপাশেও। শুধু কি তাই, ময়লা সেখানে ফেলেই শেষ নয়, পরিচ্ছন্নকর্মীরা ফেলে দেওয়া ময়লা থেকে বাছাই করে প্রয়োজনীয় বস্তু নিয়ে ভরছেন বস্তায়। তাতে আরো বেশি জাযগায় ছড়িয়ে পড়ছে ময়লা ও দুর্গন্ধ।
মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় সেখানে গিয়ে দেখা যায়, বিটিসিএল আইডিয়াল স্কুলের ১২শ শিক্ষার্থী, অফিসার্স কোয়ার্টারে বসবাসকারী বাসিন্দা আর বিটিসিএল এর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীর (ভিএইচএফ) কার্যালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারীরা বেশ ভোগান্তিতে পোহাচ্ছেন।
বিটিসিএল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক মো. মজিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ডাস্টবিনের কারণে আমাদের স্কুলের বাচ্চারা আসা-যাওয়ার পথে বেশ সমস্যায় পড়ছে। বেশি সমস্যা রাস্তাটা ওই জায়গায় সরু হয়ে গেছে। ফলে সব সময় যানজট লেগেই থাকে। বাচ্চারা নিরাপদে হেঁটে স্কুলে আসতে পারে না। তাছাড়া ক্লাস চলাকালে দুর্গন্ধের কারণে জানালা খোলা যায় না। গরমের সময় দুর্গন্ধ আরও বাড়ে।
স্কুলের ধর্ম শিক্ষক মোখলেছুর রহমান ও আইটি শিক্ষক বিল্লাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ডাস্টবিনটি সরানোর জন্য অনেকবার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আমরা বছর দু’য়েক আগে স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে মানববন্ধনও করেছিলাম। স্কুলের দেয়ালের পাশে ডাস্টবিনটির দুর্গন্ধে আমরা বসতে পারি না। শিক্ষার্থীদের আসা-যাওয়ার সমস্যাতো আছেই। তবুও সরানো হচ্ছে না।
বিটিসিএল অফিসার্স কোয়ার্টারের গার্ড বজলুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, এই কলোনির ডি-৯ নম্বর ভবনটি একদম ডাস্টবিনের পাশে। ওই ভবনের বাসিন্দারা কখনই জানালা খুলতে পারেন না।
উপবিভাগীয় প্রকৌশলীর কার্যালয়ের টেকনিশিয়ান সিরাজুল ইসলাম বলেন, সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় আমাদের। আমরা সারাদিন এখানে থাকি। দুর্গন্ধে টিকতে পারি না।
সত্তরোর্ধ ডা. মোদাচ্ছের হোসেন থাকেন মধুবাগের নিজের বাড়িতে। তিনি বলেন, চলাফেরা খুবই কষ্টকর। তবুও চলতে হয়। বর্ষাকালে পথচারীদের বেশি সমস্যা হয়।
কড়াইল বিটিসিএল কলোনির বাসিন্দা সমর বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত এই ভোগান্তি পোহাচ্ছি। আমার মেয়ে এই স্কুলে পড়ে। তাদের ক্লাসেও দুর্গন্ধ যায়।
জায়গাটি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের অধীনে। ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইঞ্জিনিয়ার তৈমুর রেজা খোকনের মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, এটা নিয়ে আমরা দীর্ঘদিন ধরে সমস্যায় আছি। অনেক চেষ্টা করা হচ্ছে সরিয়ে নেওয়ার। কিন্তু জায়গার অভাবে পারছি না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বরাবর জায়গা চেয়ে চিঠিও দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই চিঠির কার্যক্রম আর এগোয়নি। পাশেই বিটিসিএল এর জায়গা। সেখানে ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীরা অবৈধ ঘর তুলে ভাড়াও দেন। কিন্তু আমাদের আধুনিক ময়লার ভাগাড় নির্মাণের জন্য আড়াই তিন কাঠা জমি দিতে চাচ্ছে না।
বাংলাদেশ সময়: ১১২৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৭
এমএইচ/এএ