একবেলা পঁচা খাবার খেয়ে ছয়মাস ধরে টানা নির্যাতনের ভার আর সইতে পারেনি শিশু আলামিন। সর্বশেষ শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) স্বামী-স্ত্রীর পৈশাচিক বর্বরতায় হার মানে সে।
রোববার (২৪ ডিসেম্বর) রাতে রাজধানীর আদাবরের শেখেরটেক এলাকার ৪ নম্বর রোডের একটি বাসা থেকে শিশু আলামিনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। আলামিন ময়মনসিংহের ভরাডুবা এলাকার কৃষক রুহুল আমিনের ছেলে।
ওইদিন রাতেই আদাবর থানায় আলামিনের চাচা হারুন অর রশীদের দায়ের করা মামলায় গৃহকর্তা জোবায়ের, তার স্ত্রী সাইয়েদা, শ্বাশুড়ি আনজু আরা পারভীন এবং শ্যালক সাকিব আহমেদকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
পরদিন সোমবার জোবায়ের, সাইয়েদা ও সাকিব আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাদের দেওয়া জবানবন্দিতে আলামিনের ওপর নির্যাতনের বর্ণনা উঠে আসে।
আসামিদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, শনিবার সকালে কাজে ভুলের দায়ে আলামিনকে একদফা রড দিয়ে বেধড়ক পেটান সাইয়েদা। সন্ধ্যায় গৃহকর্তা জোবায়ের বাজার নিয়ে আসলে বাজারগুলো গুছিয়ে রাখতে বললে অসুস্থ্য আলামিন অস্বীকৃতি জানায়। এবার এ অপরাধে স্বামী-স্ত্রী দুজন মিলে আবারো পেটান তাকে।
রাত ৮টার দিকে নিজের শিশু সন্তানের ফিডার ধুয়ে আনতে বললে ফিডারটি আলামিনের হাত থেকে পড়ে যায়। এতে সাইয়েদা চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করেন। স্ত্রীকে খুশি করতে আলামিনকে মাথায় তুলে ছুঁড়ে মারেন জোবায়ের। এতে আলামিনের মাথায় আঘাত লাগে এবং রক্ত ঝড়তে থাকে। তাতেই দমে যাননি জোবায়ের, এ অবস্থাতেই রড দিয়ে পেটাতে থাকেন তিনি। এ পর্যায়ে আলামিন অজ্ঞান হয়ে গেলে তাকে টয়লেটে রেখে পানির টেপ ছেড়ে দিয়ে আসেন।
রাত ১টার দিকে জোবায়ের টয়লেটের দরজা খুলে আলামিনকে ডাক দেন। কোন সাড়া-শব্দ না পেয়ে আলামিনের ঘাড়ে জোরে লাথি মারেন তিনি। এতে আলামিন টয়লেটের একপাশ থেকে অন্যপাশে ছিটকে পড়ে। আলামিনকে এ অবস্থায় রেখেই টয়লেটের দরজা বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়েন সবাই।
পরদিন রোববার সকালে জোবায়েরের শ্বাশুড়ি টয়লেটের দরজা খুলে দেখেন আলামিন ওই অবস্থাতেই পড়ে আছে। তখন তিনি জোবায়েরকে ঘুম থেকে ডেকে তুলেন। জোবায়ের এক ফার্মেসির ডাক্তার নিয়ে আসলে ডাক্তার জানান, আলামিন মারা গেছে।
এরপর গৃহকর্তা আলামিনের বাড়িতে ফোন দিয়ে বলেন, আলামিন খুব অসুস্থ্য। সন্ধ্যায় স্বজনরা এসে আলামিনকে মৃত দেখতে পান। তখন জোবায়ের আড়াই লাখ টাকার বিনিময়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু খবর পেয়ে পুলিশ আলামিনের মরদেহ উদ্ধার করে এবং তাদের চারজনকে গ্রেফতার করেন।
আদাবর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীন শেখ বাংলানিউজকে বলেন, গত ৬ মাস আগে জোবায়ের সাইয়েদা দম্পতির একটি সন্তান হয়। তাকে দেখাশোনা করার জন্য মাসিক তিন হাজার টাকার বিনিময়ে আলামিনকে বাসায় আনেন জোবায়ের। তারপর থেকে তার সঙ্গে পরিবারের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। তাকে বাসার বাইরেও যেতে দেওয়া হতোনা। কখনো স্ত্রী, কখনো স্বামী, কখনোবা তারা দুজন মিলেই আলামিনকে মারধর করতেন। ছয়মাস ধরে টানা নির্যাতনের ফলে আলামিনের শরীরে এমন কোনো স্থান ছিলো না যেখানে ক্ষত চিহ্ন নেই।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৭
পিএম/ওএইচ/