তবে খুলনার ফুডব্লগারস নামে একটি সংগঠনের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নগরবাসীর মনে জাগিয়েছে নতুন আশা। কনকনে শীতে খেজুরের কাঁচা রস আর হরেক রকম পিঠা নিয়ে তারা আয়োজন করেছেন রসমেলা।
শীতের সোনালি রোদে টাটকা রসের স্বাদ আর পিঠা-পায়েস খেতে মেলার দ্বিতীয় দিন শনিবার (৬ জানুয়ারি) সকালেই ভোজনরসিকরা ভিড় জমিয়েছেন মেলা প্রাঙ্গণে। মহানগরীর উমেশচন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরিতে এ রসমেলা শুরু হয়েছে শুক্রবার (৫ জানুয়ারি)। গাছ থেকে সদ্য নামিয়ে আনা ঠাণ্ডা খেজুর রস মেলা প্রাঙ্গণে আসতে না আসতেই শেষ হয়ে যাচ্ছে বলে জানান মেলা কর্তৃপক্ষ।
মেলায় আসা ক্রেতা ও দর্শনার্থীরা বাংলানিউজকে জানান, খাঁটি রস ও হরেক রকমের পিঠা, পুলি ও পায়েসের মৌ মৌ গন্ধে যেন মন ভরে যাচ্ছে চারপাশ।
অনেকে স্মৃতিচারণ করে বলছেন, শীত মৌসুম এলেই গ্রাম-গঞ্জে রসের পিঠা-পায়েসের ধুম পড়ে যেতো। রাতে গাছ থেকে রস নামিয়ে খাওয়ার মজাই ছিল আলাদা। শীত শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্রামে গাছিরা রস সংগ্রহের জন্য খেজুর গাছ পরিচর্যার জন্য ব্যস্ত থাকতেন। গ্রামের সেসব দৃশ্য শহুরে জীবনে মেলে না। রস আগের মতো আর কিনতেও পাওয়া যায় না। রসমেলার আয়োজন করায় অনেকই খাঁটি রস ও রসের পিঠা খেতে পারছেন। মেলায় আসা সরকারি হাজী মুহাম্মদ মুহসিন কলেজের ছাত্র মো. আবু সাঈদ খান বাংলানিউজকে বলেন, নাগরিক পরিমণ্ডলে খেজুরের রস নিয়ে এ আয়োজন খুব ভালো উদ্যোগ। রসমেলার কথা শুনেই এখানে চলে এলাম। দেখি বাহারি নামের রকমারি পিঠা। পিঠা মেলায় এসে ভালো লাগছে। মেলায় নানা ধরনের পিঠা রয়েছে। এতে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য ফুটে উঠেছে। প্রতিটি ঋতুরই রয়েছে আলাদা বৈশিষ্ট্য। মানুষের মনের ওপর ঋতু এবং প্রকৃতির রূপ-রস-গন্ধ গভীরভাবে মিশে আছে। ষড়ঋতুর এদেশে অন্য ঋতুর চেয়ে শীত খানিকটা এগিয়ে উৎসবের জন্য।
সরকারি সুন্দরবন আদর্শ কলেজের ছাত্র ইশতিয়াক মাহমুদ শাওন বলেন, মেলায় এসে অনেক রকমের পিঠা দেখলাম এবং খাওয়ার সুযোগ হলো। যে কয়েকটা পিঠা খেয়েছি তা অনেক সুস্বাদু লেগেছে। মেলায় এসে আনন্দও হলো, পিঠাও খাওয়া হলো।
রবি আজিয়াটা লিমিটেডের সেলস ম্যানেজার এম ডি ওয়াহেদুল আলম জানান, এমন নতুন আইডিয়া নিয়ে ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনার যে চেষ্টা তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। এজন্য খুলনা ফুডব্লগারসকে ধন্যবাদ জানাতেই হয়। এমন আয়োজন যেন আরো হয় এমনটাই আশা।
রূপার রান্না ঘরের স্বত্বাধিকারী রূপা খাতুন বলেন, আমাদের স্টলে রসের পাশাপাশি রসের তৈরি রস চিতই পিঠা, পাটিসাপ্টা, রসমঞ্জুরি, নকশি পিঠা, গোলাপ পিঠা, জামাই কুলি, দুধ চিতই, পাকন, চুসি, রসের পায়েস, দুধ কুলি পিঠা রয়েছে। তিনি জানান, বিক্রি খুব ভালো হচ্ছে। বিশেষ করে রসের আইটেমগুলো।
গোপালগঞ্জ পিঠা ঘরের পরিচালক ফাহিমা নাজ দিশারী বলেন, আমাদের স্টলে রসমেলায় দুধ পুলি, দুধ লাউ, দুধ রসের পায়েস, সিদ্ধ পুলি, চন্দ্র পুলি, রস পাকান, চিড়ের পোলাও, রস মালপোয়া, দুধ চিতই, ভাঁপা, অরেঞ্জিত বিবিখানা, আনদোশা পিঠা পাওয়া যাচ্ছে।
তিনি জানান, রসনাবিলাসীদের কাছে রসমেলার খেজুর রসের পিঠা-পুলির ব্যাপক কদর রয়েছে।
খুলনা ফুডব্লগারসের প্রতিষ্ঠাতা স্বপ্নীল মাহফুজ বলেন, প্রথমবারের মতো খুলনায় রসমেলার এ আয়োজনে সাড়া পেয়েছি কল্পনাতীত। এতো লোক সমাগম খুলনা ফুডব্লগারসকে অনুপ্রেরণা ও সাহস জোগাবে পরবর্তীতে আরও বড় অনুষ্ঠান আয়োজন করতে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৬, ২০১৮
এমআরএম/এএটি/এএ