রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে শনিবার (০৬ ডিসেম্বর) আয়োজিত ‘গণতন্ত্রে নির্বাচন’ শীর্ষক এক আলোচনায় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
ইনস্টিটিউট অব কনফ্লিক্ট, ল’ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের উদ্যোগে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
খুশী কবির বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলগুলো নারীদের মনোনয়ন তেমন দেয় না। তাই কমপক্ষে ৪০ শতাংশ আসনে নারীদের সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মনোনয়ন দিতে হবে। এছাড়া নির্বাচনে ধর্মভিত্তিক প্রচারণা নিষিদ্ধসহ যুদ্ধাপরাধ বিচার নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলা যাবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. জিয়াউর রহমান বলেন, গণতন্ত্র বলতে নির্বাচনকে বলা হয়। কিন্তু কাঠামোতে গণতন্ত্র নিয়ে কথা বলা হয় না। বিএনপি যেমন অতীতে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করেছে, তেমনি সরকারের মধ্যেও সমস্যা আছে। কাজেই এসব সমস্যার সমাধান করতে হবে।
সাংবাদিক আবু সাঈদ খান বলেন, গণতন্ত্রের কথা বললেও রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরেই এর চর্চা নেই। অথচ তারা একটি ভালো নির্বাচন চায়। কাজেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটা ঐক্যমত হওয়া দরকার। কেননা, বিএনপি, আওয়ামী লীগ ছাড়া কোনো নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না।
সাবেক রাষ্ট্রদূত ওয়ালিউর রহমান বলেন, নির্বাচন ছাড়া গণতন্ত্র হয় না। এর কোনো সঠিক প্রক্রিয়াও নেই। বিএনপি জিতলে ও আওয়ামী লীগ হারলেই কেবল নির্বাচনে লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত হয়। এই ধারণা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
একাত্তর টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোজাম্মেল বাবু বলেন, বিএনপি ও আওয়ামী লীগের কথা ভেবে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বিবেচনা করলে হবে না। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হতে হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ভিত্তিতে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হতে হবে বিত্ত-বৈভবের ঊর্ধ্বে, ধর্মের ঊর্ধ্বে।
তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পরেরদিন জনগণ আন্দোলন করে তা বানচাল করে ঘরে ফিরেছিল। কিন্তু ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর বিএনপি অবরোধ দিলেও তা আজও তুলে নেওয়া হয়নি। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের সময় সরকার ভোটারদের নিরাপত্তা দিতে পারেনি।
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, গণতন্ত্রের মৌলিক উপাদান হচ্ছে গণতন্ত্র। তাই দলগুলোকেই বলতে হবে তারা কী ধরনের সমাজ ব্যবস্থা চায়। ১৯৭১ সালে লাখো প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীন হয়েছে বাংলাদেশ। তাই কি করা প্রয়োজন দলগুলোকে তা স্পষ্ট করে বলতে হবে। যারা না বলবে, তাদের জনগণ কিভাবে প্রত্যাখান করবে, সে ব্যবস্থাও থাকতে হবে।
সাবেক বিচারপতি মো. শামসুল হুদা বলেন, নির্বাচন কমিশন যদি আইন মেনে চলে, তবে সুষ্ঠু নির্বাচন করা কষ্টসাধ্য নয়। কোন সরকার বা কে ক্ষমতায় আছে তা দেখার প্রয়োজন নেই।
তিনি বলেন, যুদ্ধাপারধীদের সন্তানদের নির্বাচন থেকে বিরত রাখতে আইন প্রণয়ন নয়। তাদের নৈতিক, সামাজিক মূল্যবোধ থেকে বর্জন করতে হবে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও আই ক্ল্যাডস’র নির্বাহী পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) মো. আবদুর রশীদ বলেন, অতীতে দেশের একটা দীর্ঘ সময় ধরে সামরিক শাসন হয়েছে। অনির্বাচিত, অসাংবিধানিক কেউ ক্ষমতায় এলে জনগণের ক্ষমতা হারিয়ে যায়। কিন্তু জনগণকে গণতন্ত্রে ক্ষমতাচ্যুত করা যায় না। তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার, সহায়ক সরকার বা সামরিক সরকার মানেই জনগণকে ক্ষমতাচ্যুত করা। আমরা তা চাই না।
তিনি বলেন, মানুষকে স্বাচ্ছন্দে ভোট দেওয়ার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। এখানে আমি শঙ্কা দেখি। ৫ জানুয়ারির মতো আবার না মানুষ হত্যা করা হয়। আমরা একটি সুন্দর, অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই।
ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, নির্বাচন প্রক্রিয়া আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে। কোন দল আসল কি আসল না তারপরও নির্বাচন অব্যাহত রাখতে হবে। এক্ষেত্রে হত্যাকাণ্ড ঘটনো হলে তা নির্বাচন কমিশনকে দেখতে হবে, এজন্য দায় কে নেবে?
আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র প্রত্যাশী আতিকুল ইসলাম, সুভাষ সিংহ রায়, মিথিলা ফারজানা প্রমুখ বক্তব্য দেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৬, ২০১৭
ইইউডি/এমএ