রোববার (০৭ জানুয়ারি) কুষ্টিয়ায় প্রতিষ্ঠিত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি)চতুর্থ সমাবর্তনে সভাপতির বক্তব্যে এভাবেই স্মৃতিচারণ করেন রাষ্ট্রপতি ও ইবি চ্যান্সেলর মো. আবদুল হামিদ।
কুষ্টিয়ায় জেলখানার দিনগুলোর স্মৃতি স্মরণে করে তিনি বলেন, ঠিক তেমনই একদিন একটা চিঠিতে আমার স্ত্রী মেয়ের নাম কী রাখা হবে তা জানতে চাইলেন।
স্বভাবজাত হাস্যোজ্জ্বল রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সাবলীল ভাষায় নিজের দুর্বিসহ দিনগুলোর বলছিলেন-তখন অনুষ্ঠানের অতিথি সারিতে বসা ছিলেন তার সহধর্মিনী রাশেদা খানম। পাশে ছিলেন মেয়ে নদীয়াও।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, কুষ্টিয়া জেলে চারমাস পার করার পর আমাকে রাজশাহী জেলে স্থানান্তর করা হয়। সে সময় ডানো দুধের কৌটায় লুকিয়ে এক হাজার টাকা রেখেছিলাম। যায় কুষ্টিয়ায় ধরা না পড়লেও রাজশাহীতে গিয়ে ধরা পড়ে যায়। এজন্য আমাকে শাস্তিসরূপ কনডেমন সেলে রাখা হয়। যেখানে দিনের বেলাতেও হারিকেন জ্বালিয়ে ভাত খেতে হতো। আবার কনডেম সেল থেকেই ফাঁসির মঞ্চ দেখতাম আর মনে মনে ভাবতাম কবে আবার না-জানি ওখানে (ফাঁসির মঞ্চ) যেতে হয়।
এ সময় স্বামীর বক্তব্য শুনে বেশ আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন স্ত্রী রাশেদা খানম। স্বামীর স্মৃতিচারণে তিনি যেন সেই দুর্বিসহ দিনগুলোতেই ফিরে গিয়েছিলেন। আবেগে চোখের পানি আর ধরে রাখতে পারলেন না তিনি।
আর এ বিষয়টিও হয়তো রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ নিজেও উপলব্ধি করেছেন। বুঝলেন-পরিবেশটা ভারি হয়ে উঠছে…!
এজন্য আবার কিছুটা কৌতূকের ছলে ফিরে এলেন নিজের স্বাভাবিক রূপে। বললেন, আমার স্ত্রী ও সেই মেয়ে আজ আমার সঙ্গে এসেছেন। কোনো সমাবর্তনে এই প্রথমবার তিনি আমার সঙ্গে এলেন। কিন্তু আর হয়তো আসতে চাইবেন না। কারণ উনি তো রাষ্ট্রপতির স্ত্রী। রাষ্ট্রপতির স্ত্রীরা আবার ফার্স্ট লেডি হয়ে যায়।
‘অবশ্য জীবনে তো সেকেন্ড থার্ডের কোনো ব্যবস্থা করতে পারলাম না, লাস্টের দিকে আছি কিনা তাও জানি না। ’
রাষ্ট্রপতির এমন হাস্যরসে আবারও হাসতে শুরু করেন স্ত্রী রাশেদা খানম এবং মেয়ে নদীয়া। এ সময় অনুষ্ঠানের দর্শক সারিতেও হাসির রোল পড়ে যায়!
এবার লিখিত বক্তব্যে ফিরে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। সনদপ্রাপ্ত গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আজ থেকে তোমরা স্বীকৃতিপ্রাপ্ত উচ্চশিক্ষিত নাগরিক, দেশের সবচেয়ে আলোকিত অংশের গর্বিত সদস্য। দেশ ও জাতির প্রতি তোমাদের রয়েছে অনেক দায়িত্ব ও অঙ্গীকার।
‘মনে রেখ তোমাদের শিক্ষিত করার জন্য রাষ্ট্র যে ব্যয় করেছে, তাতে রয়েছে পিছিয়ে-পড়া শ্রমজীবী, কৃষিজীবী মানুষের অবদান। তাদের ঋণ তোমাদেরই শোধ করতে হবে। ’
এর আগে বেলা সাড়ে ১১টায় রাষ্ট্রপতি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে স্থাপিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব’, ‘শেখ রাসেল ছাত্র হল’, ‘শেখ হাসিনা ছাত্রী হল’র দ্বিতীয় ফেজ, এবং ড. ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান ভবনের উদ্বোধন করেন।
ইবি বাংলা বিভাগের অধ্যপক ড. সরওয়ার মোর্শেদ ও সহকারী অধ্যাপক আরমিন খাতুনের উপস্থপনায় সমাবর্তনের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রাশিদ আসকারী, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শাহিনুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সেলিম তোহা।
সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল। আর বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান।
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সধারন সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ ও ঝিনইদহ-১ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল হাইসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা।
বাংলাদেশ সময়: ২০২৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৭, ২০১৭
এসআইজে/এমএ