ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজনে সরকারের অনুমতি বাধ্যতামূলক

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৯, ২০১৮
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজনে সরকারের অনুমতি বাধ্যতামূলক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ও জাতীয় সংসদের অধিবেশন কক্ষ/ফাইল ফটো

সংসদ ভবন থেকে: মানবদেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজনে সরকারের অনুমতি বাধ্যতামূলক করে সংসদে আইন পাস হয়েছে। মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) রাতে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে বিলটি পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। যদিও বিলটি জনমত যাচাই-বাছাইয়ের প্রস্তাব দেন একাধিক সদস্য। 

তাদের সেই প্রস্তাব কণ্ঠভোটে নাকোচ হলে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বিলটি পাসের প্রস্তাব কণ্ঠভোটে দিলে তা সর্বাধিক সংসদ সদস্যের সমর্থনে পাস হয়।
 
পাস হওয়া বিলে বলা হয়েছে, কোনো হাসপাতাল সরকারের অনুমতি ছাড়া অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন করতে পারবে না।

 আইন কার্যকর হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে এই চিকিৎসা সেবা দিতে অনুমতির জন্য সরকারের কাছে আবেদন করতে হবে। তবে সরকারি হাসপাতালের বিশেষায়িত ইউনিটে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজনের ক্ষেত্রে অনুমতি লাগবে না।
 
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন বিলটি পাসের সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, আইনটি পাস হওয়ার ফলে মানুষ দেশেই মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপন করার সুযোগ পাবে। আগে কিডনিসহ নানা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংযোজনের জন্য বিদেশে গিয়ে লাখ লাখ টাকা ব্যয় করতে হতো। প্রতারণার শিকার হয়ে মানুষ নিঃস্ব যাচ্ছিল। এই আইন পাসের মাধ্যমে দেশেই মানুষ কমমূল্যে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংযোজনের সুবিধা পাবেন। তবে কেউ অপরাধ করলে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।

পাস হওয়া আইনে বলা হয়েছে, সুস্থ ও স্বাভাবিক বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তির চোখ ছাড়া অন্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিযুক্তির কারণে স্বাভাবিক জীবনযাপনে ব্যাঘাত সৃষ্টির আশঙ্কা না থাকলে তিনি নিকটাত্মীয়কে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করতে পারবেন। তবে চোখ ও অস্থিমজ্জা সংযোজন ও প্রতিস্থাপনে নিকটাত্মীয় হওয়ার প্রয়োজন হবে না। বিদ্যমান আইনে শুধু পুত্র-কন্যা, বাবা-মা, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী এবং রক্তের সম্পর্কে সম্পর্কিত আপন চাচা, ফুফু, মামা, খালা- এই ১২ জন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান ও গ্রহণ করতে পারেন।
 
এছাড়াও আইনে ‘নিকটাত্মীয়ের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে বাবা-মা, পুত্র-কন্যা, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী ও রক্ত সম্পর্কিত আপন চাচা, ফুফু, মামা, খালা, নানা-নানি, দাদা-দাদি, নাতি-নাতনি, আপন চাচাতো-মামাতো-ফুপাতো-খালাতো ভাই-বোনেরাও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান ও গ্রহণ করতে পারবেন। মৃত ব্যক্তির অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও অন্যের শরীরে সংযোজন করা যাবে। বিলে ‘অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে’র সংজ্ঞায় মানবদেহের কিডনি, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, অন্ত্র, যকৃত, অগ্ন্যাশয়, অস্থি, অস্থিমজ্জা, চোখ,চর্ম ও টিস্যুসহ মানবদেহে সংযোজনযোগ্য যেকোনো অঙ্গ বা প্রত্যঙ্গকে বোঝানো হয়েছে।
 
বিলে আত্মীয়ের মিথ্যা তথ্য দেওয়াসহ আইন ভঙ্গের অপরাধে সাজার মেয়াদ কমলেও বাড়ানো হয়েছে জরিমানা। এতে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি নিকটাত্মীয় সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দিলে বা মিথ্যা তথ্য দিতে উৎসাহিত বা প্ররোচিত করলে বা ভয় দেখালে অনধিক দুই বছরের সশ্রম কারাদন্ড বা অনধিক পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেওয়া যাবে।  

আইনের অন্য বিধান লঙ্ঘন করলে অথবা লঙ্ঘনে সহায়তা করলে সর্বোচ্চ তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে। কোনো চিকিৎসক দণ্ডিত হলে বাংলাদেশ মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কাউন্সিলের  দেওয়া নিবন্ধন (চিকিৎসা সনদ) বাতিল হবে। এছাড়াও কোনো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই আইনের অধীন কোনো অপরাধ করলে অনুমতি বাতিল ও অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
 
এছাড়া ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড বিল, ২০১৮ নামের নতুন একটি বিল উত্থাপন করেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি।
 
বাংলাদেশ সময়: ২০৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯, ২০১৮
এসএম/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।