ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

পুরনো কাপড়েই ঠেকছে শীতের কামড়

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৯, ২০১৮
পুরনো কাপড়েই ঠেকছে শীতের কামড় শীত বাড়ার সঙ্গে গরম কাপড়ের চাহিদাও বেড়েছে/ছবি: বাংলানিউজ

রাজশাহী: শীতে কাঁপছে রাজশাহীর মানুষ। এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে বয়ে যাচ্ছে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। হাড় কাঁপানো শীতে তাই অসহনীয় দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। 

শীতের কামড় থেকে বাঁচতে শীতবস্ত্রের দোকানগুলোতে ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। ফুটপাত থেকে শুরু করে অভিজাত মার্কেটগুলোতে গরম কাপড়ের চাহিদা এখন তুঙ্গে।

 

তবে ভিড় বেশি ফুটপাতের পুরনো শীতবস্ত্রের দোকানেই। ক্রেতাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে ফুটপাতের দোকানগুলোতে শীতবস্ত্রের পসরা সাজিয়ে বসেছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।

শীতের হাত থেকে রক্ষা পেতে নিম্ন আয়ের মানুষরা ভিড় করছেন ফুটপাতের এসব দোকানে। দু’দিন থেকে তাই ফুটপাতের দোকানগুলোয় গরিব ও নিম্নবিত্ত মানুষের ভিড় চোখে পড়ার মতো।  

সাধ্য অনুযায়ী কিনছেন শীতবস্ত্র তারা। তবে ছিন্নমূল মানুষের অবস্থা আরও করুণ। অর্থাভাবে শীতবস্ত্র কিনতে পারছেন না। পরিবার নিয়ে তীব্র শীতে নিদারুণ কষ্টে দিন-রাত পার করছেন তারা।  

তীব্র শৈত্যপ্রবাহের মধ্যে এবারও তারা তাকিয়ে আছেন, সমাজের বিত্তশালীদের দেওয়া গরম কাপড় ও সরকারি কম্বলের দিকে। কিন্তু বেশিরভাগের কাছেই এখনও পৌঁছেনি প্রতীক্ষার সরকারি কম্বল।  

জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা প্রশাসক হেলাল মাহমুদ শরীফ বাংলানিউজকে বলেন, এরই মধ্যে সরকারিভাবে ৫২ হাজার ৫০০ পিস কম্বল রাজশাহীর নয় উপজেলায় বিতরণ করা হয়েছে।

আরও ৩০ হাজার কম্বলের চাহিদা দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে চিঠি পাঠানো হয়েছে। আজকালের মধ্যে সেগুলো পৌঁছালে আবারও তা বিতরণ করা হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারি নির্দেশনা না থাকায় এখন পর্যন্ত সিটি করপোরেশন এলাকায় কোনো কম্বল বিতরণ হয়নি। কিন্তু ব্যক্তি পর্যায় থেকে পাওয়া শীতবস্ত্র এখানে দেওয়া হচ্ছে। তবে প্রয়োজনের তুলনায় তা কম বলেও স্বীকার করেন জেলা প্রশাসক।
শীত বাড়ার সঙ্গে গরমকাপড়ের চাহিদাও বেড়েছে/ছবি: বাংলানিউজ
এদিকে, কনকনে ঠাণ্ডার সঙ্গে বয়ে যাওয়া হিমশীতল বাতাসে জবুথবু হয়ে পড়েছে রাজশাহীর মানুষ। কয়েক দিন থেকে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করছে এ অঞ্চলে। মঙ্গলবারও (০৯ জানুয়ারি) ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। তাই শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজশাহীতেও দেখা দিয়েছে শীতের পোশাক কেনাবেচার ধুম। ফুটপাতের দোকানগুলোতেই বেচাকেনা হচ্ছে বেশি।

সরেজমিনে দেখা যায়, মহানগরীর গণকপাড়া, লক্ষ্মীপুর, হাসপাতালের মোড়, কোর্ট-শহীদ মিনার চত্বর, স্টেশন বাজার ও রেশম কারখানা প্রচীর ঘেঁষে বসেছে শীত বস্ত্রের দোকান। এসব দোকানে বিদেশ থেকে আমদানি করা পুরনো শীতবস্ত্রই বেশি। এছাড়া কম দামে নতুন শীতবস্ত্রও পাওয়া যাচ্ছে।

এর মধ্যে পুরনো বিদেশি শীতবস্ত্রের জন্য শহরের গণকপাড়া ও স্টেশন বাজার সংলগ্ন ফুটপাতের দোকোনগুলো ভিড়বেশি। এখানকার দোকানগুলো নিম্নবিত্তদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে।

তাই এসব ফুটপাতের প্রতিটি দোকানই এখন শীতের পোশাকে ঠাসা। ৩০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০ টাকা দরের মধ্যে শীতবস্ত্র পাওয়া যাচ্ছে। পাশে মার্কেট থাকলেও কম দামের কারণে পুরাতন কাপড়ের দোকানে ক্রেতাদের আগ্রহ যেন একটু বেশি। কী নেই এসব ফুটপাতের দোকানে মেয়েদের জ্যাকেট, ফুলহাতা গেঞ্জি, ব্লেজার, লেদার জ্যাকেট, হাফ সোয়েটার সবকিছু রয়েছে দোকানগুলোতে।  

মঙ্গলবার দুপুরে এখানে কম্বল কিনতে এসেছিলেন নাজমীন আরা। ৭০০ টাকায় কম্বল কিনেছেন। বললেন, দু’দিন থেকে শীত বেশি অনুভূত হওয়ায় কম্বল কিনতে এসেছেন। কিন্তু এবার চায়না কম্বলের দাম একটু বেশি বলেই মনে হচ্ছে। গত বছর তিনি ৬০০ টাকায় কম্বল কিনেছেন বলেও জানান।  

তবে কম্বল বিক্রেতা হাশেম আলী বলেন, তার এখানে ১৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের কম্বল রয়েছে। গত বছরের তুলনায় ধরন ভেদে প্রতিটি কম্বলের দাম ৫০ থেকে একশ’ টাকা বেড়েছে। ঢাকা থেকে তাদের এ কম্বল আনতে হয়। এখানে তাদের কিছুই করার নেই।

শিশুদের শীতের পোশাকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে জ্যাকেট ও সোয়েটার।  

বিক্রেতা জামাল উদ্দিন বলেন, বাচ্চাদের বয়স ভেদে জ্যাকেট ও সোয়েটারের দামে তারতম্য রয়েছে। তার এখানে জিরো সাইজ থেকে শুরু করে ১৫ বছর বয়সী ছেলেমেয়েদের সোয়েটার ও জ্যাকেট আছে। নারীদের গায়ের চাদর বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত। জ্যাকেট বিক্রি হচ্ছে আড়াইশ’ থেকে সাড়ে ৪০০ টাকায়। আর সোয়েটার বিক্রি হচ্ছে দেড়শ’ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে গেছে শীতের টুপি বিক্রি। ছয় মাসের শিশু থেকে বড়-সব ধরনের টুপি রয়েছে তার কাছে।  

বাচ্চাদের উলের টুপির দাম ৫০ টাকা। আর বড়দের টুপি ১০০ টাকা। আর মানকি টুপি ১৭০ টাকা। শীতের সময় উলের হাত এবং পায়ের মোজা বিক্রি বেড়ে যায় বলেও জানান জামাল উদ্দিন।

বাংলাদেশ সময়: ২১০১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯, ২০১৭
এসএস/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।