১০ জানুয়ারি (বুধবার), বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পথ পাড়ি দিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতা অর্জন করে জন্ম নেয় নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশ।
পাকিস্তানের শোষণ ও অত্যাচার-নির্যাতনের হাত থেকে বাঙালিকে মুক্ত করতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে দীর্ঘ ন’মাসের স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঙালি জাতি।
এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে জীবনের একটা বড় সময় শেখ মুজিবকে জেল, জুলুম ও নির্যাতন সইতে হয়েছে। পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে বাঙালির সফল আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়ার মধ্য দিয়েই ‘বঙ্গবন্ধু’ হন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের বাঙালি জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেন বঙ্গবন্ধু। ২৫ মার্চ কালো রাতে বর্বর হানাদার বাহিনী নিরীহ বাঙালি জাতির ওপর ঝাপিয়ে পড়ে, শুরু করে গণহত্যা। তখন ধানমন্ডির বাসভবন থেকে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এর পরপরই তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী।
শুরু হয় বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চলাকালে বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি রেখে নির্যাতন চালানো হয়। এ সময় তাকে ফাঁসির মঞ্চেও নিয়ে যাওয়া হয়। তবে দেশ-বিদেশে তুমুল জনপ্রিয়তা ও বঙ্গবন্ধুর অদম্য সাহসে হার মানে পাকিস্তান।
এদিকে বঙ্গবন্ধুর ডাকে তার অনুপস্থিতিতেই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে আপামর বাঙালি জনতা। বহু ত্যাগ-তিতীক্ষার পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করে। রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হন, সম্ভ্রম হারান প্রায় ৩ লাখ মা-বোন।
তবে মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি থাকায় বাঙালির অর্জিত বিজয় যেনো পূর্ণতা পায়নি। তাই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে তার ফেরার অপেক্ষায় ছিল বিজয়ী বাঙালি জাতি।
বাংলাদেশের মানুষের দাবি ও আন্তর্জাতিক চাপের কাছে নতিস্বীকার করে অবশেষে ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় পাকিস্তান।
কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে সেখান থেকেই লন্ডনে যান তিনি। লন্ডন থেকে দিল্লি হয়ে ১০ জানুয়ারি দেশে ফেরেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান।
সেদিন সারা দেশ থেকে মানুষ ছুটে আসেন প্রিয় নেতাকে একনজর দেখতে। দেশে ফিরে বাঙালির ভালোবাসায় সিক্ত হন বঙ্গবন্ধু। বিমানবন্দর থেকে জনসমুদ্রের মধ্য দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের (তৎকালীন রেসকোর্স) জনসভায় যান তিনি, জনসভায় ভাষণও দেন।
এদিকে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে বুধবার আলোচনা সভার আয়োজন করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিকেলে ৩ টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি থাকবেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এছাড়া দিবসটি পালনে সকালে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানানো হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০১২১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৮
এসকে/এমএ