বুধবার (১০ জানুয়ারি) সকাল থেকে বিমানবন্দরের সামনে বায়তুস সালাম জামে মসজিদ সংলগ্ন চত্বরে মাওলানা সাদবিরোধী বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু হয়। বেলা ১১টার পর ওই চত্বরে বিক্ষোভকারীদের ঢল নামে।
গোল চত্বর থেকে বাংলানিউজের সিনিয়র ফটো করেসপন্ডেন্ট জিএম মুজিবুর ও স্টাফ করেসপন্ডেন্ট প্রশান্ত মিত্র জানিয়েছেন, দু’পাশে গাড়ি থমকে থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে রাজধানীমুখী ও বহির্মুখী যাত্রীদের। অনেককে তাই বাধ্য হয়ে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে রওয়ানা হতে দেখা যায়। যানজটের কারণে বিমানবন্দরে প্রবেশ এবং বের হতেও বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা।
চট্টগ্রাম থেকে অসুস্থ ভাইকে নিয়ে বেলা ১টায় বিমানবন্দরে নামেন মোস্তফা ফিরোজ। রোগী নিয়ে অনেক চেষ্টা করেও বিমানবন্দর থেকে বের হতে পারছেন না তিনি। মোস্তফা বাংলানিউজকে বলেন, ৫টায় ইউনাইটেড হাসপাতালে ডাক্তারের অ্যাপয়েনমেন্ট আছে। বিমানবন্দর হাসপাতালে যাওয়ার জন্য কোনো গাড়ি পাচ্ছি না। এখন কীভাবে যাবো জানি না। অসুস্থ রোগীকে নিয়ে হেঁটে যাওয়ারও কোনো উপায় নেই।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুরো এলাকায় শত শত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছেন। বিমানবন্দর গোলচত্বরের সামনের সড়কে দেখা যায় পুলিশ, র্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য।
বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আজম মিয়া বাংলানিউজকে জানান, তাবলিগ জামাতের একটি অংশ বিমানবন্দর গোলচত্বরে মাওলানা সাদের আগমনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছে। এরা হেফাজতের লোকজনও হতে পারে। মাওলানা সাদকে ঢাকায় নামতে বাধা দেওয়ার জন্য এরা বিক্ষোভ করছে। অবস্থান দেখে মনে হচ্ছে তারা দীর্ঘসময় থাকবে। কতোক্ষণ থাকবে তারা, এ বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। তাদের সরিয়ে দেওয়া হবে কি-না এ বিষয়েও সিদ্ধান্ত হয়নি এখনো।
তবে বিক্ষোভকারীরা বলছেন, মাওলানা সাদ বাংলাদেশের মাটিতে পা দিলে পুরো দেশ অবরুদ্ধ করে দেওয়া হবে।
এদিকে দুপুর পৌনে ১টার দিকে মাওলানা সাদ দিল্লি থেকে একটি ফ্লাইটযোগে ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছে গেছেন বলে জানিয়েছে একটি সূত্র। ওই সূত্রটি বলেছে, বিক্ষোভ পর্যবেক্ষণের পর পরিস্থিতি বিবেচনায় মাওলানা সাদকে টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের বিদেশি খিত্তায় পৌঁছে দেওয়া হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তাবলিগ জামাতের এক শুরা সদস্য বাংলানিউজকে জানান, মাওলানা সাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ঢাকা মহানগর হেফাজতের আমির আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী।
বিক্ষোভ সমাবেশের আগে বায়তুস সালাম জামে মসজিদে বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের (বেফাক) কার্যালয়ে জরুরি বৈঠকে বসেন মাওলানা সাদের আগমনের বিরোধী আলেম-উলামারা।
এরপরই শুরু হয় বিক্ষোভ। খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে বিমানবন্দরের সামনের সড়কে জড়ো হতে থাকে মাওলানা কাসেমীর সংগঠন এবং বেফাকের লোকজন। নিকটস্থ দক্ষিণখান, উত্তরখান, গাওয়াইর, উত্তরা, টঙ্গী, গাজীপুরসহ আশপাশ থেকে বিক্ষোভকারীদের ঢল নামে বিমানবন্দর সড়ক অভিমুখে। সকালে রাজধানীর কাজলা এলাকায়ও বিক্ষোভ হয় মাওলানা সাদের বিরুদ্ধে।
তাবলিগ জামাতের অন্যতম শীর্ষ মুরুব্বি, দিল্লি নিজামুদ্দিনের জিম্মাদার মাওলানা সাদের কিছু বক্তব্য ও একক নেতৃত্বের প্রশ্নে বেশ কয়েক বছর যাবৎ আলেম-উলামা ও তাবলিগের মুরুব্বিদের মাঝে অসন্তোষ বিরাজ করছে।
এর প্রেক্ষিতে ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাওলানা সাদের বিপক্ষে অবস্থান নেয়, আর নিজামুদ্দিন ছেড়ে চলে যান মাওলানা ইবরাহিম দেওলাসহ বেশ কয়েকজন মুরুব্বি। বিশ্বব্যাপী তাবলিগের বিভিন্ন মারকাজগুলোও দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে পড়ে।
এই দ্বিধা-বিভক্তির মধ্যে সম্প্রতি কানাডা, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া তাবলিগের শুরা থেকে বাংলাদেশ শুরা ও সরকারকে চিঠি দিয়ে মাওলানা সাদকেই ইজতেমার নেতৃত্বে রাখার দাবি জানায়। কিন্তু বিরোধীরা কোনোভাবেই মাওলানা সাদকে মেনে না নেওয়ার কথা জানিয়ে দেয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৮/আপডেট ১৪৩২ ঘণ্টা
এজেডএস/এমএ/পিএম/এইচএ/
** শাহজালাল বিমানবন্দরে মাওলানা সাদ
** মাওলানা সাদের আগমন ঠেকাতে বিমানবন্দর চত্বরে বিক্ষোভ
** বুধবারই ইজতেমায় আসছেন মাওলানা সাদ
** নেতৃত্বে জটিলতা :: ইজতেমা মালয়েশিয়ায় সরিয়ে নেয়ার প্রস্তাব!