টানা শৈত্যপ্রবাহের ধকল সামলাতে গিয়ে শীতার্তরা হাপিয়ে উঠেছেন। মৃদু থেকে তীব্র, আবার তীব্র থেকে মৃদু।
জানতে চাইলে রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক দেবল কুমার মৈত্র শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় চলতি মাসের তাপমাত্রার পরিসংখ্যান টেনে ধরেন। তিনি বলেন, গত ৪ জানুয়ারির (বৃহস্পতিবার) পর রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আর ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে ওঠেনি। কেবল শৈত্যপ্রবাহের রকমফের ঘটেছে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৫ জানুয়ারি রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৬ জানুয়ারি ৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৭ ও ৮ জানুয়ারি ছিলো ৫ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৯ জানুয়ারি ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১০ ও ১১ জানুয়ারি ৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ১২ জানুয়ারি তা কমে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। ৭, ৮ এবং ১০ ও ১১ এই চারদিন আলাদাভাবে ছিলো একই তাপমাত্রা। এছাড়া ৭ জানুয়ারিই রেকর্ড করা হয় চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।
আর বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে কম তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে উত্তরের আরেক জেলা তেঁতুলিয়ায়। আবহাওয়া অধিদফতরের গড় তালিকায় গত ৮ জানুয়ারি পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা নেমেছিলো ২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। যা ভেঙেছে ৫০ বছরের রেকর্ড। ১৯৬৮ সালের পর এটাই বাংলাদেশে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। ওই বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অফিসের ভাষ্যমতে, গত ৪ জানুয়ারি থেকে চলা শৈত্যপ্রবাহে রাজশাহীসহ দেশের উত্তরের বেশিরভাগ জেলার তাপমাত্রাই ৫ থেকে ৩ এর নিচে নেমেছে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এর আগে তাপমাত্রা ৩-এ নেমে যাওয়ার রেকর্ড ছিলো কেবল সৈয়দপুরে। তাও পাঁচ বছর আগের ঘটনা। ২০১৩ সালের পর ৩-এর নিচে নামেনি। আবহাওয়ার ভাষায় তাপমাত্রা সাধারণত ১০ ডিগ্রির নিচে নামলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। আর ৮ ডিগ্রির সেলসিয়াসের নিচে নামলে মাঝারি এবং ৬ ডিগ্রির নিচে নামলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। সে অনুযায়ী রাজশাহীতে এখন মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বইছে।
তাই হিম বাতাস আর দিনভর ঘন কুয়াশা নিয়ে শীত যেন হামলে পড়েছে এ অঞ্চলে। শীতের তীব্রতায় কাবু হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। আর ছিন্নমূল ও শ্রমজীবী মানুষ যারপরনাই দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। সন্ধ্যা নামলেই রাস্তায় যানবাহন চলাচল কমে যাচ্ছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাড়ির বাইরে বের হচ্ছেন না। এজন্য সন্ধ্যার পর ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে শহরের বেশিরভাগ দোকানপাট ও শপিং সেন্টারসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান।
সন্ধ্যা নামলেই শীতবস্ত্রের অভাবে পথের ধারে খড়কুটো বা টায়ার জ্বালিয়ে ছিন্নমূল মানুষ শীতের কামড় থেকে রেহাই পাওয়ার চেষ্টা করছেন। আর নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ মহানগরীর পুরনো কাপড়ের দোকানে কম দামে শীতবস্ত্রের জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জন্ম নেওয়া নবজাতকরা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। এছাড়া শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া ও হৃদরোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছেই।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. আজগর হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, শিশু মৃত্যুর হার কমলেও প্রসূতি মায়ের নানান অসাবধানতায় নবজাতক শিশুরা জন্মগ্রহণের পরপরই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। জরুরিভাবে তাদের শিশু ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হচ্ছে এবং উন্নত সেবা দেওয়া হচ্ছে।
হঠাৎ এতো শীতের প্রকোপ কেন? জানতে চাইলে রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত আবহাওয়া কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, বেশ কয়েক বছর এমন শীত পড়েনি। হিমলায় ছুঁয়ে আসা ঠাণ্ডা বাতাস শীতের তীব্রতাকে দ্বিগুণ বাড়িয়ে তুলেছে।
এর ওপর ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকছে দিনের অনেকটা সময়। ভোরের আকাশে সূর্য উঠলেও তার বিকিরণ বেশিক্ষণ স্থায়ী হচ্ছে না। ফলে শীতের দাপট কমছে না।
আগামী সপ্তাহে দিনের তাপমাত্রা কিছুটা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে এতেও শীত কমবে না। জানুয়ারি মাস জুড়েই দাপিয়ে বেড়াবে শীত। এছাড়া জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে আরও একটি শৈত্যপ্রবাহ রাজশাহীসহ উত্তরের বিভিন্ন জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলেও জানান রাজশাহীর এ আবহাওয়া কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৮
এসএস/জেডএস