জীবনে শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে অনেকেই বর্তমানে জীবিকা নির্বাহ করছেন রিকশা চালিয়ে অথবা দিনমজুরের কাজ করে। সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন এসব মানুষগুলো।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১০ বছর আগে থেকেই সুরমা নদীতে ভাঙন শুরু হয়েছে। কিন্তু ওইসময় জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন কেউই নজর দেননি ভাঙনের দিকে। ধীরে ধীরে ভাঙতে ভাঙতে সুরমা দোয়ারাবাজার সদর উপজেলার মূল সড়কের পাশে এসে গেছে।
উপজেলা সদরের মূল ভবন থেকে ভাঙনের দূরত্ব প্রায় ৩০ ফুট। তাই ঝুঁকিতে রয়েছে উপজেলা প্রশাসনের ভবনও। এখন এ প্রধান সড়কটিও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। যেকোনো সময় ভাঙনের কবলে পড়তে পারে সড়কটি। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভাঙন কবলিত দোকান মালিক ও ঘর-বাড়ি বিলীন হওয়া মানুষগুলো।
শুধু ঘর-বাড়ি নয় ভাঙনের ফলে দোয়ারারবাজারের মানচিত্র থেকে বিলীন হয়ে গেছে হাজী মিয়াধন আলী দাখিল মাদ্রাসা ও মাঝেরগাঁও জামে মসজিদ। সুরমা নদীর ভাঙনে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দোয়ারাবাজার সদর, পশ্চিম মাছিমপুর, মুরাদপুর, মাঝেরগাঁও, মংলারগাঁও, দোহালিয়া ইউনিয়নসহ কয়েকটি গ্রাম।
ভাঙন প্রতিরোধে দোয়ারাবাজারের লোকজন বিভিন্ন সময়ে নানা ধরনের আন্দোলন সংগ্রাম করছেন কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না।
নদী ভাঙন কবলিত দোকানের মালিক জায়েদ মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, কি আর বলবো ভাই সবই তো শেষ হয়ে গেছে। আয়ের একমাত্র উৎস নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ায় রোজগার করে সংসার চালানোর মতো কোনো উপায় দেখছি না।
নদী ভাঙনে বিলীন হওয়া এক বাড়ির মালিক ওয়াহিদ মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, বসতভিটা চলে গেছে সুরমা নদীতে। আমি অন্য একজনের জমিতে ঘর বানিয়ে আছি। কথা হয় নদী ভাঙন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মো. তাজুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ভাঙন প্রতিরোধে কেউ কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। ফলে দেখা যাবে এ ভাঙনের কারণে আমরা এক সময় সুনামগঞ্জ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবো।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বক্কর সিদ্দীক ভূঁইয়া বাংলানিউজকে বলেন, দোয়ারাবাজারের নদী ভাঙন রোধকল্পে ডিজাইন করা হয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি প্রকল্প তৈরি করেছে। এখন শুধু বাকি ড্রেজিংয়ের জন্য একটি কারিগরি কমিটি। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে প্রায় একশ’ কোটি টাকার উপরে ব্যয় হবে। এটি অনুমোদনের জন্য একনেকে পাঠাতে হবে। প্রকল্পটি পাস হলে আমরা কাজ শুরু করতে পারবো।
এ ব্যাপারে দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী বাংলানিউজকে বলেন, আমরা এ ভাঙন নিয়ে চার বছর ধরে কাজ করছি। একবার প্রকল্পও হাতে নেওয়া হয়েছিলো কিন্তু সেটি আলোর মুখ দেখেনি। এবার আশা করছি কাজ হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৮
আরবি/আরএ