রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত ‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার কথা রয়েছে আগামী ১৫ জানুয়ারি। এ লক্ষ্যে নেপিদোতে বৈঠক হবে দু’দেশের গঠিত যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ।
প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট এক শীর্ষ কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান, বাংলাদেশের তরফ থেকে এ বিষয়ে কয়েকদিন সভা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ রাজি হয়নি। অগত্যা ১৫ জানুয়ারি মাত্র একদিনই বৈঠকে বসতে হচ্ছে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলকে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, মাত্র একদিনে এতো বিপুল জনগোষ্ঠীর প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা সম্ভব নয়। কিন্তু মিয়ানমার রাজি হয়নি বিধায় ১৫ জানুয়ারির আগে ও পরের দিনই শুধু সরকারি সফরের প্রশাসনিক মঞ্জুরি দেওয়া হয়েছে। অর্থ্যাৎ ১৪ জানুয়ারির মধ্যে মিয়ানমার যেতে হবে এবং ১৬ জানুয়ারির মধ্যে সবাইকে ফেরত আসতে হবে।
যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক। আর মিয়ানমারের পক্ষে থাকবেন দেশটির পার্মানেন্ট সেক্রেটারি মিন্ট থো।
বাংলাদেশের মোট ১৫ সদস্যের প্রতিনিধি দলে পররাষ্ট্র সচিব ছাড়াও থাকছেন মিয়ানমারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সুফিউর রহমান, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আব্দুল মান্নান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. অবু বক্কর সিদ্দিকী, কক্সবাজার জেলার শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মাদ আবুল কালাম, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ থেকে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মনিরুল ইসলাম আকন্দ, সামরিক গোয়েন্দা পরিদপ্তর থেকে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তৌহিদু উল ইসলাম, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা অধিদপ্তর থেকে কমোডর মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক মো. খলিলুর রহমান, দুর্যোগ ব্যাবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব মোহাম্মদ হাবিবুর কবির চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের যুগ্ম-সচিব মো. মুনিম হাসান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া উইংয়ের মহাপরিচালক মনজুরুল করিম খান চৌধুরী, বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সেলিনা বানু, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যাবস্থপনা বিভাগের উপসচিব মো. ওসমান ভুইয়া, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদরদপ্তরের পরিচালক (পরিকল্পনা) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ একলিম আবদীন।
গত বছরের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযানে নামলে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে ৭ লাখ মানুষ। আগে থেকে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাসহ সব মিলিয়ে এখন বাংলাদেশে আশ্রয়ে রয়েছে জনগোষ্ঠীটির ১০ লাখ লোক। নতুন এই অভিযানকে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞ’ আখ্যা দেওয়া হয়।
নানা কূটনৈতিক চাপের মুখে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার আহ্বানে সাড়া দিতে বাধ্য হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৩ নভেম্বর নেপিদোতে বাংলাদেশ-মিয়ানমার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে সমঝোতা সই হয়। সমঝোতা অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে সম্মত হয় মিয়ানমার। প্রত্যাবাসন এগিয়ে নিতে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকায় গঠিত হয় এই যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ। ২ মাসের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর প্রক্রিয়ায় প্রথম ধাপে জনগোষ্ঠীটির কিছু সংখ্যক লোক ফিরিয়ে নেওয়ার কথা।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০১৮
কেজেড/এইচএ/