গোয়েন্দা নজরদারিতে ওই সাত এনজিও’র বিতর্কিত কার্যক্রমের প্রমাণ পাওয়ার পর তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে গত ৪ জানুয়ারি এনজিও বিষয়ক ব্যুরোতে সুপারিশ পাঠানো হয়। উখিয়া ও টেকনাফে এনজিও ব্যুরোর অনুমোদন নিয়ে ৯২টি এনজিও কাজ করছে।
এ বিষয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্তি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহিদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, এনজিওগুলোর কার্যক্রমের ওপর প্রতিবেদন তৈরি করে ব্যুরোতে পাঠানো হয়েছে ৪ জানুয়ারি। প্রতিবেদনে সাতটি এনজিও’র কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের হাকিমপাড়ায় রোহিঙ্গাদের মাঝে কাজ করে এডুকেশনাল ডেভলপমেন্ট অ্যান্ড সার্ভিস ( ইডিএএস) নামে একটি এনজিও। কিন্তু ওই এনজিওটি সেবার আড়ালে সরকারবিরোধী প্রচারণা এবং জামায়াত-শিবিরের প্রচারণা ও রোহিঙ্গা জঙ্গিদের সংগঠিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে তথ্য মিলেছে। পাশাপাশি সরকারি নির্দেশনা অমান্য করাসহ নানা অভিযোগে সেভ দ্য চিলড্রেন, মোয়াস (এমওএএস), এমডিএস, কোডাক (সিওডিইসি), এসআরপিবি, শেড’র কার্যক্রমের ওপরও নিষেধাজ্ঞা প্রয়োজন মনে করে এ নিয়ে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে ব্যুরোতে।
প্রতিবেদন সূত্রে যায়, ৯২টি এনজিও ১৯২টি কর্মসূচির মাধ্যমে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাজ করছে। কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের (আরআরআরসি) মাধ্যমে তাদের কাজের সমন্বয় করার ব্যবস্থা থাকলেও খাদ্য, স্বাস্থ্য, স্যানিটেশন ও খাবার পানির ব্যাপারে যথাযথ জবাবদিহি করছে না কোনো এনজিও। অপরিকল্পিতভাবে অগভীর নলকূপ ও স্যানিটেশন স্থাপন হওয়ায় পরিবেশ দূষণ হচ্ছে মারাত্মকভাবে। এ কারণে সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাবেরও শঙ্কা বেড়ে গেছে বহুগুণ।
আবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) সমন্বয়ে কর্মরত এনজিওগুলো রোহিঙ্গাদের প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবার দিকে নজর না দিয়ে সেকেন্ডারি ও টেরটিয়ারি (দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ের) স্বাস্থ্যসেবার দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। অন্যদিকে মালয়েশিয়া, তুরস্ক ও ইরান সরকার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হাসপাতাল তৈরি করছে, যার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে স্থানীয় প্রশাসন অবহিত নয়।
এ বিষয়ে কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. আবদুস সালাম বাংলানিউজকে বলেন, রোহিঙ্গা প্রবেশকালে তাদের সহযোগিতার জন্য বিভিন্ন দেশি-বিদেশি এনজিও হাত বাড়ায়। সরকার তখন তাদের কাজকে স্বাগত জানায়। এই সুযোগে কিছু এনজিও প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বাদ দিয়ে টাকা আয়ের জন্য কিংবা দেশি–বিদেশি ফান্ডের লোভে যক্ষা, কালাজ্বর ও এইডসসহ নানা রোগের চিকিৎসার চেষ্টা করছে। আমরা তাদের বারবার বলছি, আগে প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করুন। কোনো রোহিঙ্গার যদি সেকেন্ডারি কিংবা টেরটেয়ারি সেবার দরকার হয়, সেজন্য আমাদের সরকারি হাসপাতাল রয়েছে। তারপরও অনেক এনজিও কথা শুনছে না।
প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে এখনও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য কোনো ক্যাম্প নেই। ফলে ১০ লাখ রোহিঙ্গার নিরাপত্তা ও তাদের কার্যক্রম, গতিবিধি, চলাচল, নিষিদ্ধ কোনো সংগঠনের সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কি-না, তা সহজে জানার উপায় নেই। এ কারণে দ্রুত সেখানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ক্যাম্পের সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া দেশি-বিদেশি এনজিও’র প্রায় ১২শ’ বিদেশি নাগরিক এখন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাজ করছেন। তারা বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছেন। তাদের কাজের অনুমতি (ওয়ার্ক পারমিট) রয়েছে কি-না, তা জানা নেই সংশ্লিষ্টদের। পাশাপাশি ঘন ঘন তারা বদল হচ্ছেন বিধায় তাদেরও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কষ্টসাধ্য হচ্ছে। এনজিওগুলোতে তাদের বদলে দেশের যুবকদের চাকরি নিশ্চিত করা গেলে জনবলের কর্মসংস্থানও হবে, পাশপাশি নিরাপত্তা নিয়ে সংশয় দূর হবে বলেও উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।
এ বিষয়ে কক্সবাজার পুলিশ সুপার (এসপি) ড. এ কে এম ইকবাল হোসাইন বাংলানিউজকে বলেন, কিছু এনজিও বির্তকিত কাজে জড়িয়ে পড়ছে। এদের তদারকি দরকার। এছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতিক্রমে খুব দ্রুত সেখানে পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হবে।
কক্সবাজারের আরআরআরসি’র কমিশনার আবুল কালাম বলেন, বেশিরভাগই এনজিও আরআরআরসি’র সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে। তবে কিছু এনজিও তথ্য দিতে একটু গড়িমসি করে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, যেসব এনজিও বির্তকিত কাজে জড়াবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০১৮
টিটি/এইচএ/