ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

হিমালয়ের বরফ গলা পানিতে হাজারো শ্রমিকের জীবিকা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৩৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৮
হিমালয়ের বরফ গলা পানিতে হাজারো শ্রমিকের জীবিকা মহানন্দা নদী। ছবি: বাংলানিউজ

পঞ্চগড়: হিমালয় থেকে বয়ে আসা মহানন্দা নদীকে তেঁতুলিয়ার শ্রমিকদের পরম ভাগ্যস্থান বলা হয়। নদীর ১৭ কিলোমিটার সীমান্তে ভারত বাংলাদেশকে ভাগ করেছে মহানন্দার পানি। ভারতের দার্জিলিং/কাঞ্চনজঙ্ঘার উঁচু থেকে বয়ে আসা স্র্রোতের পানিতে ভেসে আসে ছোট, বড় আকারের নুড়িপাথর। 

হাজারো পাথর শ্রমিক জীবনের তাগিদে, পরিবারের ক্ষুধা মেটাতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ নদী থেকে পাথর তুলে জীবিকা নির্বাহ করে। তবে এখন হিমালয়ের বরফ গলা পানিতে কিছু সংখ্যক শ্রমিক কাজ করলেও প্রায় অর্ধেকেরও বেশি কর্মহীন বসে রয়েছে।

সরকারিভাবে কোনো অনুদান পেলে কিছুটা হলেও তাদের জীবনের কাটা ঘুরে যাবে বলে অনেকেই জানিয়েছে।  

শীতের সকালে ফসল ও ঘাসের উপর ছড়ানো ভোরের শিশির হাজার বিন্দু মুক্তো দানার মতো যখন চিকচিক করে তখন শীত থেকে বাঁচতে সবাই বিছানায় লেপ মুড়ি দিয়ে থাকে।  

ঠিক তখনি রাসেল (২৭) হিমালয়ের বরফ গলা পানিতে পাথর তুলতে ছুটে চলে মহানন্দা নদীতে।  

সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৫টা পর্যন্ত চলে জীবনের সঙ্গে লড়াই। প্রায় ১৬ বছর ধরে পানকৌড়ি পাখির মতোই জলে ডুবে ডুবে নুড়ি পাথর তুলে চলেছে রাসেল। বাড়ি উপজেলার সাইপিজোতে, দুই সন্তানের বাবা তিনি। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম কর্তা।  

রাসেল বলেন, যদি নদী থেকে পাথর না তুলি তাহলে পেটের ভাত জুটবে না। পরিবারের ক্ষুধা মেটাতেই সারাটাদিন এ কাজ করতে হয়।  
মহানন্দা নদী।  ছবি: বাংলানিউজ
জানা যায়, জীবিকার এ লড়াইও নিরবচ্ছিন্ন থাকে না ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) কারণে। প্রতিবেশী ভারতের সীমান্ত টহলদার বাহিনীর বাধা, তাড়া এবং মারধরের ঘটনাও ঘটে। কখনো বিএসএফ গুলি করে কেড়ে নেয় শ্রমিকদের জীবন। কখনো সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতীয় পণ্য ও গরু-মহিষ পাচারকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময় বন্ধ হয়ে যায় পাথর উত্তোলন। শুধু তাই না বর্ষার সময় পানি বেড়ে যাওয়ায় ৩ মাস শ্রমিকদের বসে থাকতে হয়।

দেশের সর্ব উত্তরের সীমান্ত উপজেলা তেঁতুলিয়া। হিমালয়ের পাদদেশে হওয়ায় এখানে শীতের প্রকোপ একটু বেশি। পৌষের শুরু থেকে এ উপজেলায় বয়ে যাচ্ছে প্রচণ্ড শৈত্যপ্রবাহ, শীত আর ঘন কুয়াশা। প্রতিনিয়ত আবহাওয়ার তাপমাত্রা হেরফের হচ্ছে।  

দেখা গেছে, নদীর ১৭ কিলোমিটার জুড়ে শ্রমিকরা দল বেধে বাতাসে ফুলানো গাড়ির চাকার টিউব, লোহার চালনি, পাথর শনাক্তের জন্য লোহার রড নিয়ে কোথাও এক বুক, কোথাও বা হাঁটুপানির নিচ থেকে নুড়ি পাথর উত্তোলন করছেন। পরে পানিতে ভাসানো টিউবের ঢাকিতে করে সে পাথর দু’কাঁধে বাইক করে তীরে এনে জমা করেন। সন্ধ্যায় মহাজনের কাছে বিক্রিলব্ধ টাকায় জোটে আহার।

সূত্রে জানা যায়, এই সব পাথরের মূল উৎপত্তি ভারতের দার্জিলিংয়ের ২০৬০ মিটার উঁচু মহালিদ্রাম পাহাড়ে।  

সম্প্রতি জীবন লড়াইয়ের এ কথা বাংলানিউকে জানান আজাদ (৩৫)। তার বাড়ি সাইপিজোতে। তিনি বলেন, প্রায় ২০ বছর ধরে নদীতে পাথর তুলে আসছি। সারাদিন কাজ করে কোনো মতে পরিবারের চাহিদা মিটাই।  

তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম শাহিন জানান, সাতদিনের শৈত্যপ্রবাহ ও শীতের তীব্রতায় পাথর শ্রমিকরা কাজ কর্ম করতে না পেরে বেকার হয়ে পড়েছেন। এ মানুষদের জন্য প্রচুর পরিমাণ শীতবস্ত্র, খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন। সরকারিভাবে যে পরিমাণ শীতবস্ত্র ও ত্রাণ আমাদের হাতে ছিল তা ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারিভাবে শীতার্ত মানুষের পাশে বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ০৬৩৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৮ 
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।