ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মার্কেটের বারান্দায় শীতে কাঁপছে শতবর্ষী বৃদ্ধা আয়নবী

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৮
মার্কেটের বারান্দায় শীতে কাঁপছে শতবর্ষী বৃদ্ধা আয়নবী আয়নবী বেওয়া

লালমনিরহাট: লালমনিরহাটের আদিতমারী বুড়ির বাজারের মহিলা মার্কেটের বারান্দায় খড় বিছিয়ে বসে আছেন শতবর্ষী বৃদ্ধা আয়নবী বেওয়া। শীতের তীব্রতায় পাতলা সোয়েটার ও ছেড়া শাড়িতে থরথর করে কাঁপছেন তিনি। নেই শীতবস্ত্র কাঁথা বা কম্বল। মার্কেটের সব দোকান পাট বন্ধ হলে তবেই ঘুমিয়ে পড়বেন বিছানো খড়ের ওপর।

আয়নবী লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের বারঘড়িয়া গ্রামের মৃত আনসার আলীর স্ত্রী। ভাদাই স্কুলের পূর্ব পাশের আয়নাল হকের মা তিনি।

শনিবার (১৩ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ৯টার দিকে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা হয় তার।

তিনি বাংলানিউজকে জানান, ছেলের বউয়ের সঙ্গে অভিমান করে ৫/৬ বছর ধরে দিন কাটান স্কুল-কলেজ ও বাজারের বারান্দায়। স্বামীর সংসারে গরু আর আবাদি জমিসহ সুখের সংসার ছিলো তার। কিন্তু স্বামী বার্ধক্যে পৌঁছলে জায়গা জমি বিক্রি করে ৭/৮ বছর আগে মারা যান। ছেলে আয়নাল হক ভাদাই স্কুলের পাশে জমি নিয়ে বউসহ আলাদা সংসার শুরু করেন।  

এরপর ভূমিহীন বৃদ্ধা আয়নবী ভিক্ষা শুরু করেন। থাকতেন জ্যাঠাত ভাই আনছার আলীর দেওয়া জমিতে এক চালা ঝুপড়ি ঘরে। কয়েক বছর আগে রমজান মাসে ছেলে আয়নাল হকের বাড়িতে থেকে নিজের খেয়ে রোজা করতে চেয়ে ছিলেন বৃদ্ধা আয়নবী। কিন্তু ছেলের বউ মহিতন বেগম তাকে দ্রুত বাড়ি থেকে সরে যেতে বললে অভিমান করে চলে আসেন আয়নবী বেওয়া।

সেই থেকে স্কুল-কলেজ ও বিভিন্ন বাজারের বারান্দায় তার বসবাস শুরু। স্থানীয়রা যা দেন তা খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েন তিনি। তার সম্বল বলতে রয়েছে বস্তার ভেতরে রাখা পুরনো কিছু কাপড় আর সামান্য কিছু চাল। পার্শ্ববর্তীদের কাছে হাত পেতে চেয়ে নেন খাবার। সন্ধ্যায় ফিরে আসেন সেই খড়ের বিছানায়। রাত গভীর হলে বাজারের লোকজন চলে গেলে তবেই ঘুমিয়ে পড়েন তিনি। মানুষ উৎপাত না করলেও রাতে মাঝে মধ্যে কুকুর বিড়াল তার পুটলি টানা টানি করে।  

আয়নবী জানান, ঠাণ্ডায় কষ্ট হলেও কেউ তাকে একটি কম্বল দেয়নি। কে তাকে সাহায্য করবে সেটাও তার অজানা। বয়স্ক ভাতার জন্য মহিষখোচা ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলামের কাছে গিয়েছিলেন। কিন্তু জোটেনি বয়স্ক ভাতার কার্ড। তার খোঁজ খবর না নিলেও মাঝে মধ্যে ছেলেকে ঠিকই দেখতে যান তিনি।

বার্ধক্যের কারণে শরীরে রোগ বাসা বাঁধলেও শুধু গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খান নিয়মিত। ওষুধ ফ্রিতে নেন ওই বাজারের হাসান আলীর ফার্মেসি থেকে। সবার কাছে হাত পাতেন না আয়নবী । প্রয়োজন হলে ওই বাজারের পরিচিত কয়েক জনের কাছেই কেবল চান। মারা গেলে কাপড়টা দশের লোকজন (সমাজের দায়িত্বশীলরা) দিবে না? প্রশ্ন তুলেন বৃদ্ধা আয়নবী।

বুড়ির বাজারের পান-সুপারি ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, দীর্ঘদিন ধরে এ বাজারেই রয়েছেন এ বৃদ্ধা। কিছুদিন আদিতমারী জিএস উচ্চ বিদ্যালয়ের বারান্দায় ছিলেন। শীতের আগে চলে আসেন এ মার্কেটে। বারান্দার মেঝেতে তাকে কাঁপতে দেখে তিনি নিজ উদ্যোগে খড় এনে বিছানা করে দেন। বারান্দায় থাকলেও তিনি বেশ পরিচ্ছন্ন। নামাজ বন্দেগিও করেন ঠিকঠাক। ছেলের কাছে বা সরকারি কোন খাস জমিতে আয়নবীর স্থায়ী ঘর করে দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৮
এমএসএ/এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।