ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ঘন কুয়াশায় গতি কমেছে ট্রেনের, বেড়েছে জনদুর্ভোগ

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪০৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১৮
ঘন কুয়াশায় গতি কমেছে ট্রেনের, বেড়েছে জনদুর্ভোগ ঘন কুয়াশায় গতি কমেছে ট্রেনের। ছবি: বাংলানিউজ

রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন থেকে: রাজশাহী অঞ্চলে টানা শৈত্যপ্রবাহের ধকল কাটছেনা। দিনভর ঘন কুয়াশার চাদরে মুড়ে থাকছে প্রকৃতি। এতে সবুজ বৃক্ষরাজি ধোঁয়াচ্ছন্ন রূপ ধারণ করেছে।

দৃষ্টিসীমা ৫০ গজের মধ্যে নেমে এসেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দুর্ঘটনা এড়াতে গতি কমেছে ট্রেনের।

ফলে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের আন্তঃনগরসহ বিভিন্ন রুটের ট্রেন বর্তমানে দুই থেকে তিন ঘণ্টা বিলম্বে চলছে। যার ফলে মানুষের নিরাপদ বাহন ট্রেনের আরামদায়ক ভ্রমণের স্বাদ এখন তিক্ত হয়ে উঠেছে। রেলভ্রমণ নিয়ে জনদুর্ভোগ গিয়ে ঠেকেছে অসহনীয় পর্যায়ে।

ঘন কুয়াশার কারণে রাজশাহী-ঢাকা, ঢাকা-রাজশাহী, খুলনা-রাজশাহীসহ বিভিন্ন রুটের আন্তঃনগর ট্রেনগুলোর আর সময়সূচি ঠিক থাকছে না। বিশেষ করে রাজশাহী-ঢাকা ও ঢাকা-রাজশাহী রুটের আন্তঃনগর ট্রেনগুলোর সিডিউল ভেঙে পড়েছে। দেরিতে চলতে চলতে যাত্রীদের ভোগান্তি ও বিড়ম্বনা এতোটাই বেশি যে, রেলের পুরনো সেই কথা ‘ছটার ট্রেন কটায় ছাড়ে’ এ কথায় ফিরে এসেছে। তাই রেলওয়ের যাত্রীবাহী আন্তঃনগর ট্রেনগুলো পূর্বাঞ্চলে যতো স্বাচ্ছন্দ্যে চলছে পশ্চিমাঞ্চলে ঠিক তার উল্টোটি। রেলস্টেশনে যাত্রীদের অপেক্ষা।  ছবি: বাংলানিউজসোমবার (১৫ জানুয়ারি) সকাল ৭টায় রাজশাহী রেলস্টেশনে এসে দেখা যায়, রাতে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা আন্তঃনগর ট্রেন পদ্মা এক্সপ্রেস তখনও পৌঁছায়নি। অথচ ট্রেনটি ভোর ৫টায় রাজশাহী পৌঁছানোর কথা ছিলো। ফলে কী হলো? রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর ট্রেন সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনটি নির্ধারিত সময় ৭টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে যেতে পারেনি।

অবশেষে তিন ঘণ্টা দেরি করে পদ্মা এক্সপ্রেস ট্রেনটি সকাল সোয়া ৮টায় রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের ৪ নম্বর প্লাটফর্মে এসে থামলো। যাত্রী নামিয়ে ধোয়া-মোছা শেষে সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে গেলো। এভাবেই দুই থেকে তিন ঘণ্টা বিলম্বে চলছে ঢাকাসহ বিভিন্ন রুটমুখী উত্তরবঙ্গের প্রতিটি ট্রেন। এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে এই দুরাবস্থা চলছে। ফলে জনদুর্ভোগ অসহনীয় পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে।

নির্ধারিত সময়ে ট্রেন না পেয়ে দেশের দু’পাশের প্লাটফর্মের যাত্রীরা ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়ছেন। খোলা প্লাটফর্মের ওপর তীব্র ঠাণ্ডার মধ্যে শত শত যাত্রীরা স্টেশনে বসে ট্রেন আসা ও ছাড়ার অপেক্ষা করছেন। কিন্তু ট্রেনের আর সহজে দেখা মিলছে না। অনেকে বসার জন্য জায়গা পর্যন্তও পাচ্ছেন না। কনকনে ঠাণ্ডা ও হিমেল বাতাসের মধ্যে শিশুসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে নিদারুণ কষ্টে অপেক্ষার প্রহর কাটছেন।

ঢাকাগামী ষাটোর্ধ যাত্রী আফতাব আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ঠাণ্ডার মধ্যে একটু বসে থাকারও স্থান পাননি তিনি। তাই দাঁড়িয়েই কেটেছেন দু'ঘণ্টা। এরপরও ট্রেনে চেপে বসতে পারেননি। ঠাণ্ডার মধ্যে অনেক কষ্ট পাচ্ছেন। আর যাত্রা পথের বিলম্বিত সময় ওপারে (ঢাকার) দুর্ভোগও বাড়িয়ে দিচ্ছে।

ঢাকা যাওয়ার জন্য সকাল ৭টায় রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে এসে ভোগান্তিতে পড়া ফেরদৌসি জান্নাত বাংলানিউজকে বলেন, জরুরি কাজে দুপুরের মধ্যেই তাকে ঢাকায় যেতে হবে। কিন্তু ট্রেন দুই ঘণ্টারও বেশি দেরি করায় তিনি বিড়ম্বনায় পড়েছেন। এজন্য তার কাজের অনেক ক্ষতি হবে। আরও একদিন ঢাকায় বেশি থাকতে হবে। আর এর সঙ্গে তীব্র ঠাণ্ডার কষ্ট তো রয়েইছে বলে জানান ফেরদৌসি নামে এই যাত্রী।

জানতে চাইলে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের সুপারিন্টেনডেন্ট গোলাম মোস্তফা বাংলানিউজকে বলেন, এটা কোনো নতুন ঘটনা নয়। প্রত্যেক বছর কুয়াশার জন্য উত্তরবঙ্গে রেল পরিষেবা ব্যাহত হয়। বর্তমানে শীত বেশ জেঁকে বসেছে। তাই প্রতিদিনই ঘন কুয়াশার কারণে ব্যাহত হচ্ছে রেল পরিষেবা। কুয়াশার কারণে দৃশ্যমানতা কমে যায়। এর কারণে ট্রেনের সময়সীমা ঠিক থকছেনা। যাত্রীদের নিরাপদ রাখতে ট্রেনের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কুয়াশায় ট্রেনচালকরা অনেক স্থানে সিগন্যাল লাইট দেখতে পারছেন না।

অনেক ক্ষেত্রে এক স্টেশনে গিয়ে অন্য স্টেশনমাস্টারের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলে বিপরীত ট্রেনের অবস্থান জেনে ট্রেন ছাড়তে হচ্ছে। এতে আসতে-যেতে দুই থেকে তিন ঘণ্টা দেরি হচ্ছে। যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই সাবধানে ট্রেন চলাচল। করছে বলেও জানান এই রেল কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সময়: ১০০৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১৮
এসএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।