ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

যারা বাংলা ভাষাকে রক্ষা করেছেন, তাদের শ্রদ্ধা জানাই

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১৮
যারা বাংলা ভাষাকে রক্ষা করেছেন, তাদের শ্রদ্ধা জানাই বক্তব্য দিচ্ছেন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি। ফাইল ফটো

ঢাকা: ‘শুধু একুশে ফেব্রুয়ারি নয়, যারা আন্দোলন করে বাংলা ভাষাকে রক্ষা করেছেন তাদের শ্রদ্ধা জানাই, সালাম জানাই, প্রণাম জানাই। বাংলাকে যারা আন্তর্জাতিক ভাষার মর্যাদা এনে দিয়েছেন তাদের উদ্দেশ্যে শুধু আনুষ্ঠানিকভাবে একুশে ফেব্রুয়ারি নয়, আমাদের জীবনের প্রতিদিন, প্রতিমুহূর্তে মনে রাখতে হবে- তাদের কাছে আমরা ঋণী।’

সোমবার (১৫ জানুয়ারি) বিকেলে বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে আন্তর্জাতিক বাংলা সাহিত্য সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি এসব কথা বলেন।

** বাংলাদেশ বিনিয়োগের আকর্ষণীয় স্থান: প্রণব 

এর আগে বিকেল ৩টায় অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হন ভারতের প্রথম বাঙালি রাষ্ট্রপতি।

পরে তাকে ফুলেল অভ্যর্থনা জানানো হয়।  

গত ১৩ জানুয়ারি বিকেলে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি প্রণব মুখার্জি বলেন, বাংলাদেশই হচ্ছে বাংলা ভাষার রক্ষক। যারা আমাদের ভাষা, সংস্কৃতিকে হাজার বছরের সাহিত্য, ঐতিহ্যকে রক্ষা করেছেন তাদের কাছে আমরা দায়বদ্ধ। তারা আগ্রাসনে আমাদের অমূল্য রতনকে ধ্বংস হতে দেননি। আজ বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক ভাষা কিংবা সাহিত্য সম্মেলন হবে না তো কোথায় হবে? এর চেয়ে উপযুক্ত স্থান আরও আছে নাকি?

তিনি বলেন, কিছু কিছু মানুষ থাকে যারা ইট, বালি ইত্যাদি নিয়ে সিড়ি বেয়ে ওঠে রাজমিস্ত্রির কাছে মসলা (নির্মাণের তরল সিমেন্ট-বালি) পৌঁছে দেন। গ্রাম্য ভাষায় আমরা তাদের বলি যোগারি।

‘আমি হচ্ছি বাংলা সাহিত্য সম্মেলনের তেমনই একজন যোগারি। সেই যোগারি ও পাঠক হিসেবে আমি এখানে উপস্থিত হয়েছি। পড়তে ভালোবাসি। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে পড়ার সময় খুব একটু পাইনি। ’

এর কারণ ব্যাখ্যা করে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি বলেন, পার্লামেন্টে চার দশকের বেশি সময় সদস্য ছিলাম। ১৯৬৯ থেকে ২০১২ পর্যন্ত। প্রায় ২৫ বছর মন্ত্রী ছিলাম। সরকারি কাজ, সংসদের কাজের ঠেলায় পড়ার সময় পাইনি।

‘রাষ্ট্রপতি ভবনে গিয়ে দেখলাম ভারতবর্ষের ত্রয়োদশ রাষ্ট্রপতির রয়েছে বিশাল রাজপ্রাসাদ। পরিসংখ্যানবিদদের মতে, পৃথিবীর কোনো রাষ্ট্রপ্রধানের ৩৩০টি কক্ষযুক্ত এত বড় প্রাসাদ নেই। সেই প্রাসাদে গিয়ে যখন এ অবস্থা দেখলাম তখন ভাবলাম কী করবো এখানে!’

রাইসিনা হিলে’র বর্ণনা করে সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব বলেন, প্রচুর বই, কাগজপত্র ও রেকর্ড রয়েছে রাষ্ট্রপতি ভবনে। এত বই রয়েছে যে হিসেব করে দেখলাম- সেগুলো পড়তে তিন মেয়াদে প্রেসিডেন্ট থাকতে হবে। সেটা তো পাচ্ছিনা, তার আগেই ঈশ্বর সমন পাঠিয়ে দেবেন। অনেক হয়েছে এবার চলে আসো আমার কাছে।

‘যখন মন্ত্রী ছিলাম, তখন দফতরের কাজ করতাম, সংসদে ছিলাম বিতর্কে অংশ নিতাম। এখন কী করবো?

এখানকার কাজ নিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মাঝে মাঝে পরামর্শ চেয়ে ফাইল পাঠাবেন। প্রয়োজনে পরামর্শ দেবো। এ ছাড়া তো আর কোনো কাজ নেই। দেশ তো চালাবেন প্রধানমন্ত্রী। আইন করবেন সংসদ সদস্যরা। ’ 

‘৫ বছরে একবার আনুষ্ঠানিকভাবে সংসদ সদস্যদের ডেকে বক্তৃতা করবো এবং আনুষ্ঠানিকভাবে সরকার তৈরির ক্ষেত্রে ভারতবর্ষে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা খুবই কম। ’ 

প্রণব মুখার্জি বলেন, ‘সরকার তৈরি হয় মানুষের ভোটে, আর প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দল। সেটা অনেকটা মানুষের ভোটে নির্ভর করে। রাষ্ট্রপতি শুধু বছরে একদিন পার্লামেন্টের জয়েন্ট সেশনে লম্বা বক্তৃতা করেন, যার কমা থেকে ফুলস্টপ পর্যন্ত মন্ত্রিসভার রচনা করা। সেখানে মাঝে মাঝে বলা হয়- মাই গভার্মেন্ট বা আমার সরকার। ’

তিনি বলেন, বড় বড় যুদ্ধে আগে মানুষ মারা যেতো গত এক দশকে সন্ত্রাসবাদের আক্রমণে নিরীহ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। আমেরিকাকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য টুইন টাওয়ার ও পেন্টাগনে আঘাত করা হল, মানুষ মারা গেল। এই হীনমন্যতা নিয়ে পৃথিবীতে মানুষ কী করে বাঁচবে?

‘এটা তো পরিবেশ দূষণ নয়, এর চেয়ে বড় দূষণ মানুষের চিন্তায়, ভাবনায়, মনে ও কাজে। এ দূষণের হাত থেকে বাঁচানোর দায়িত্ব কোনো আন্তর্জাতিক সম্মেলন থেকে হয় না। জাতিসংঘও করতে পারবে না। করতে পারবেন শিল্পী, লেখক, সাহিত্যিক ও কবিরা। যারা এই তিনদিনের সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন। তারাই পারবেন। ’

লেখক-সাহিত্যিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আসুন এই সংকল্প করি, ভবিষ্যত প্রজন্মকে আমরা হিংস্রতার সব বিষবাষ্প থেকে বাঁচাবো। এই হোক আজকের অঙ্গীকার।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আয়োজনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।  উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ।  
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন কবি কামাল চৌধুরী ও বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১৮/আপডেট: ২০৩২ ঘণ্টা
কেজেড/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।