বাংলানিউজের কাছে এ পরিকল্পনার কথা জানান পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ৬৪ জেলাতেই এ কার্যক্রম পরিচালিত হবে জানিয়ে এরইমধ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী।
মন্ত্রী বলেন, দেশের অধিকাংশ স্থানেই ভূগর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি রয়েছে। আর্সেনিকযুক্ত পানি পান ও ব্যবহার যেমন মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর, তেমনি সেচকাজে এ পানি ব্যবহৃত হলে উৎপাদিত ফসলেও আর্সেনিকের উপস্থিতি রয়ে যায়। ফলে এসব ফসলও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। এজন্যই আমরা খাঁটি পানির উৎসের সন্ধান করছি।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে এক সময় প্রচুর খাল-বিল, নালা ছিলো। যার বেশিরভাগই এখন বিলিন হয়ে গেছে, নতুবা দখলে চলে গেছে। এসব প্রাকৃতিক জলাধার দখলমুক্ত করে পুনঃখনন করা হবে। এতে একদিকে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনা যেমন সম্ভব হবে, তেমনি বছরে কৃষি শস্যের উৎপাদন বাড়বে ৩ মিলিয়ন মেট্রিক টন। বাড়বে লাখ লাখ টন মাছের উৎপাদনও।
তিনি বলেন, সরকার ‘এসডিজি (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) বাস্তবায়নে নির্ধারিত সময়সীমা ২০৩০ সালের আগেই শতভাগ মানুষকে নিরাপদ পানি সরবরাহ করতে চায়। ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২০২১ সালের মধ্যেই সবার জন্য নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে চাই আমরা। আমাদের লক্ষ্য- স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে অর্থাৎ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা।
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় বলছে, জাতিসংঘের পানি এবং স্যানিটেশন বিষয়ক বিশেষ প্যানেল সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ শিল্পাঞ্চল, বসতি স্থাপনসহ সব এলাকার প্রাকৃতিক জলাধার সৃষ্টি, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ এবং বর্জ্য ও দূষিত পানি নিষ্কাশন করার বিষয়ে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। নাব্যতা হ্রাস প্রতিরোধে দেশে নদ-নদীতে ড্রেজিং কার্যক্রম চলছে। নিরাপদ পানি ব্যবস্থাপনায় ১৯৯৯ সালে জাতীয় পানিনীতি প্রণয়ন, ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড সুয়্যরেজ অ্যাক্ট-১৯৯৬, ন্যাশনাল ওয়াটারসাপ্লাই অ্যান্ড স্যানিটেশন অ্যাক্ট-২০১৪ প্রণয়ন এবং আর্সেনিক সমস্যা মোকাবিলায় ‘ন্যাশনাল পলিসি ফর আর্সেনিকমিটিগেশন অ্যান্ড ইমপ্লিমেন্টেশন প্লান’ (এনএএমআইপি) প্রকল্প বাস্তবায়ন চলছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, ইমপ্লিমেন্টেশন প্লান ফর আর্সেনিক মিটিগেশন ফর ওয়াটার সাপ্লাই-২০১৬ প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন। গত ৮ বছরে এই দু’টি খাতে সরকারের বরাদ্দ ছিলো ১৪ হাজার ৯শ’ কোটি টাকা। বর্তমানে এই খাত দু’টিতে ৩২ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প চলমান আছে। লবণাক্ত পানি প্রধান এলাকায় পুকুরের পানি ফিল্টার করে লবণাক্ততা মুক্ত করা হয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনাসহ সব বিভাগীয় শহরের নিরাপদ পানি ভূ-উপরিস্থ পানি থেকে নিশ্চিত করার কার্যক্রম চলছে।
খালের মাধ্যমে কখনও কখনও দু’টি প্রাকৃতিক জলরাশিকেও সংযুক্ত করা হয়। সম্ভবত সেচের প্রয়োজনেই সর্বপ্রথম খাল খনন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। তবে নৌ-পথ উন্নয়নের জন্য অনেক ক্ষেত্রেই খাল খনন করে দুই বা তার চেয়ে বেশি সংখ্যক নদীকে যুক্ত করা হয়।
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় বলছে, প্রায় তিন হাজার বছর আগে বাংলাদেশে প্রথম সেচ খাল খনন করা হয়েছিল। সেসময় থেকে এখন পর্যন্ত দেশের সর্বত্র সেচ এবং নিষ্কাশনের প্রয়োজনে খাল খনন করা হয়ে আসছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ব্যবস্থাপনায় বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সেচ প্রকল্পের আওতায় পরিকল্পিত খাল নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে। গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প, মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্প, তিস্তা প্রকল্প, মুহুরী সেচ প্রকল্প প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
তবে বাংলাদেশের প্রথম নৌচলাচল রুট হিসেবে মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জের বিলের মধ্য দিয়ে আড়িয়াল খাঁ, পুরাতন কুমার এবং মধুমতি নদীর মধ্যে সংযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে ১৮৯৯ থেকে ১৯১৪ সালের মধ্যে মাদারীপুর বিল রুট খনন করাহয়।
মাদারীপুর বিল রুট খুলনা থেকে মাদারীপুর, গোয়ালন্দ, চাঁদপুর, নারায়ণগঞ্জ, কাছাড় এবং আসামের মধ্যে নৌপথের দূরত্ব কমিয়ে আনার লক্ষ্যে স্যার আর্থার কটন ১৮৫৮ সালে এ নৌপথ খনন করার প্রস্তাব দেন। ১৮৭৫ সালে স্যার বেডফোর্ড ল্যাসলী এবং ১৮৮৬ সালে স্যার রিচার্ড টমসন এ নৌপথ খননের কিছু সংশোধিত প্রস্তাব দেন।
১৮৯৯ সালে স্যার আর. বি ব্যাকল গোপালগঞ্জের হরিদাসপুরের কাছে মধুমতি নদীর সঙ্গে টেকেরহাটে কুমার নদীর সংযোগ স্থাপনের প্রস্তাব দেন। ওই প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ১৮৯৯ সালে মাদারীপুর বিল রুট খননের কাজ শুরু হয়। কায়িক শ্রমের সাহায্যে প্রথম খনন করে পরে ড্রেজার দিয়ে অধিকতর গভীর করা হয়। ১৯০০ সাল থেকে এ রুটকে সাময়িকভাবে ব্যবহার উপযোগী করা হয়। ১৯১২ সালে এটিকে সাংবৎসর নাব্য খালে রূপান্তর করা হয় এবং ১৯১৪ সালে এই রুটের কাজ সার্বিকভাবে শেষ হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৮
আরএম/জেডএস