এতে দিনের গড় তাপমাত্রা কখনও কখনও বাড়লেও শীতের প্রকোপ কমছে না। এর সঙ্গে হিমালয় ছুঁয়ে আসা উত্তরের কনকনে ঠাণ্ডা বাতাস শীতের তীব্রতা বাড়িয়ে দিয়েছে দ্বিগুণ।
মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৭ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা সারাদেশের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। আবহাওয়া অফিসের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত আবহাওয়া কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, গত ৪ জানুয়ারি রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফলে ওই দিন থেকে টানা ১৪ দিন শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। কখনও মৃদু থেকে তীব্র। আবার কখনও তীব্র থেকে মৃদু। শৈত্যপ্রবাহ ওঠানামা করছে এভাবেই, কিন্তু শীত কমছে না।
চলতি মাসের তাপমাত্রার পরিসংখ্যান টেনে ধরে আবহাওয়া এই কর্মকর্তা বলেন, গত ৪ জানুয়ারির পর রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আর ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে ওঠেনি। কেবল শৈত্যপ্রবাহের তারতম্য ঘটেছে। এছাড়া ৭ জানুয়ারি রেকর্ড করা হয় চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৫ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ৮ জানুয়ারিও একই তাপমাত্রা ছিলো।
আশরাফুল আলম বলেন, বর্তমানে দিনের গড় তাপমাত্রার সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ এর মধ্যে ব্যবধান কমে এসেছে। টানা শৈত্যপ্রবাহের মধ্যে সূর্যের বিকিরণ বেশিক্ষণ স্থায়ী হচ্ছে না। এতে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার কাছাকাছি চলে আসছে। কোনোদিন ২১, কোনোদিন আবার ১৯ থেকে ১৭ ডিগ্রিতেও নেমে আসছে। এর মধ্যে গত ১৪ জানুয়ারি সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফলে শীতের তীব্রতা কমছেই না।
তার ভাষ্যমতে, গত ৪ জানুয়ারি থেকে চলা শৈত্যপ্রবাহে রাজশাহীসহ দেশের উত্তরের বেশিরভাগ জেলার তাপমাত্রাই ৫ থেকে ৩ এর নিচে নেমেছে। আবহাওয়ার ভাষায় তাপমাত্রা সাধারণত ১০ ডিগ্রির নিচে নামলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। আর ৮ ডিগ্রির সেলসিয়াসের নিচে নামলে মাঝারি এবং ৬ ডিগ্রির নিচে নামলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। সে অনুযায়ী রাজশাহীতে এখন মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বইছে।
তিনি বলেন, বেশ কয়েক বছর এমন শীত পড়েনি। আগামী সপ্তাহে দিনের তাপমাত্রা কিছুটা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এতেও শীত কমবে না। জানুয়ারি মাস জুড়েই দাপিয়ে বেড়াবে শীত। এছাড়া জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে আরও একটি শৈত্যপ্রবাহ রাজশাহীসহ উত্তরের বিভিন্ন জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলেও জানান রাজশাহীর আবহাওয়া অফিসের এই কর্মকর্তা।
এদিকে, হিম বাতাস আর দিনভর ঘন কুয়াশা নিয়ে শীত যেন কামড় বসিয়েছে এ অঞ্চলে। শীতের তীব্রতায় জবুথবু হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। আর ছিন্নমূল ও শ্রমজীবী মানুষ অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
সকালের দিকে স্কুলগামী শিশু ও তাদের অভিভাবকদের দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। সন্ধ্যা নামলেই রাস্তায় যানবাহন চলাচল কমে যাচ্ছে। এজন্য সন্ধ্যার পর ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে শহরের বেশিরভাগ দোকানপাট ও শপিং সেন্টারসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান।
সন্ধ্যা নামলেই শীতবস্ত্রের অভাবে পথের ধারে খড়কুটো বা টায়ার জ্বালিয়ে ছিন্নমূল মানুষ শীতের কামড় থেকে রেহাই পাওয়ার চেষ্টা করছেন। আর নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ মহানগরীর পুরনো কাপড়ের দোকানে কম দামে শীতবস্ত্রের জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে জন্ম নেওয়া নবজাতকরা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। এছাড়া শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া ও হৃদরোগে আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে। আক্রান্তরা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাই অনেক ওয়ার্ডেই বেড মিলছে না।
বাংলাদেশ সময়: ১২২২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৮
এসএস/জিপি