মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয়করণের দাবিতে আমরণ অনশনের ৮ম দিনে কেঁদে কেঁদে বাংলানিউজকে কথাগুলো বলছিলেন স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষক রফিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, বড় ছেলে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছে।
মো. ইউনুছ আলী। ২০০২ সাল থেকে চাকরি করছেন। কিন্তু কোনো বেতন পান না। বাবা-মা, ছেলে-মেয়ে আর স্ত্রীসহ সংসারে সদস্য সংখ্যা ৬। কীভাবে সংসার চলছে তা শুধু তিনিই ভালো জানেন।
তিনি বলেন, অথচ শিক্ষকরা কী সমাজ পরিবর্তনে কাজ করছেন না? গ্রামের ছেলে-মেয়েদের মানুষ করছেন না? আমরাই তো নিরক্ষর শব্দটি মুছে দিয়েছি। অথচ আমাদেরই না খেয়ে মরতে হচ্ছে। আমরা কেন রাস্তায় নামবো? ছোট ছোট বাচ্চাদের রেখে আমাদের রাস্তায় থাকতে ভালো লাগে না। সরকার কতো টাকা কতো খাতে বরাদ্দ দিচ্ছে। অথচ আমাদের বিষয়টি সমাধান করছে না। শিক্ষকদের বেতন-ভাতার দাবিতে রাস্তায় নামাটা জাতির জন্য লজ্জার।
আসমা খাতুন ২০ বছর ধরে জামালপুরের একটি মাদ্রাসায় পাঠদান করছেন। কিন্তু এই ২০টি বছরে সরকার তাকে ২০টি টাকাও দেয়নি। এতোদিন ভেবেছিলেন, একদিন প্রতিষ্ঠান সরকারি হবে আর তার দুঃখটাও ঘুচে যাবে। কিন্তু এখন তার মনে হচ্ছে, তিনি মারা গেলেও কেউ মরদেহটাও বাড়ি নিয়ে যাবে না।
সরকার যদি জাতীয়করণ না করে আর এর জন্য যদি আমি মরে যাই তার দায়ভার প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীকে নিতে হবে, যোগ করেন মন্ত্রী।
এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সভাপতি কাজী রুহুল আমিন চৌধুরী বলেন, গতকাল নন এমপিও এক শিক্ষক মারা গেছেন। তিনি এমপিওভুক্তির জন্য আন্দোলন করেছিলেন। এক সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর বাড়ি চলে যান। শেষ পর্যন্ত সোমবার তিনি মারা গেলেন। এই যে একজন শিক্ষক মারা গেলেন, তার দায়ভার কে নেবে? সরকার তো সেই শিক্ষকের দায়ভার নেয়নি।
তিনি আরও বলেন, সারাদেশে মাদ্রাসা বোর্ড থেকে নিবন্ধিত স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার সংখ্যা ১৮ হাজার ১৯৪টি। এর মধ্যে চালু আছে ১০ হাজারের মতো। এসব মাদ্রাসায় শিক্ষক আছেন প্রায় ৫০ হাজার। সরকারকে সবার দায়িত্ব নিতে হবে।
উল্লেখ, আমরণ অনশনে এ পর্যন্ত ১৮৬ জন শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৩০ জন। এদিকে, মঙ্গলবার নতুন করে আরও ৯ শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৮
এসজে/এসআই