রোহিঙ্গাদের ফেরাতে মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) সকালে ‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ চুক্তি চূড়ান্ত হয় বাংলাদেশ-মিয়ানমারের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে। এর পর বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিজ কার্যালয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের ফেরাতে আমরা বরাবরই আশাবাদী। বিষয়টা যেহেতু জটিল, ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট আছে এবং সমস্যার ব্যাপ্তি অনেক বড়। গত সোমবার ৯ লাখ ৯৯ হাজার রোহিঙ্গার বায়োমেট্রিক নিবন্ধন হয়েছে। এই সংখ্যাই বলে সংকট কত বড়।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট চুক্তিতে বলা হয়েছে প্রথমে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের একটি অস্থায়ী ক্যাম্পে যাবে, এরপর দ্রুততম সময়ে নিজ নিজ গ্রামে তাদের পুনর্বাসন করা হবে। অবশ্যই তা হতে হবে স্বেচ্ছাই নিরাপদ ও সম্মানজনক প্রর্ত্যাবর্তন। খুব শিগগিরই তারা ফিরে যাবে। ফেরাতে ২ বছরের মতো সময় লাগবে।
মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোতে সোমবার টানা ১৩ ঘণ্টার বৈঠকের পর মঙ্গলবার সকালে আবার বৈঠক বসে দুই দেশের প্রতিনিধিরা। পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের (জেডব্লিউজি) এ বৈঠকে ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট চুক্তিটি চূড়ান্ত রূপ পায়। এর মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য সরকারি পর্যায়ের কাজটি সম্পন্ন হলো।
পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক মিয়ানমারে সংবাদ মাধ্যমে বলেছেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য আমরা সফলভাবে ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট চূড়ান্ত করে ফেলেছি। সেই সঙ্গে যেসব রোহিঙ্গা ফেরত যাবেন, তাদের জন্য একটি ফরমের রূপও চূড়ান্ত করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, দুই পক্ষ আলোচনার মাধ্যমে একটি ভারসাম্যপূর্ণ ফলাফলে পৌঁছেছি। এখন দুই পক্ষ যদি সঠিক পথে কাজ করে, তবে স্থায়ীভাবে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের কাজ শুরু করা যাবে বলে আশা করা যায়।
যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের সময় বাংলাদেশের উদ্যোগে ইউএনএইচসিআর’র সম্পৃক্ততা আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত করা হয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, এটা আগে ছিল না। ধারাবাহিকভাবে যখনই সুযোগ থাকবে তখনই আমরা একে আরও দৃঢ় করার চেষ্টা করবো।
খুব শিগগিরই রোহিঙ্গ প্রত্যাবাসন শুরু হবে আশা প্রকাশ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমি সুনির্দিষ্ট তারিখ বলতে পারবো না। আমি আগেই বলেছি, এক দুই দিনের পেছানোকে আমাদের হিসাব করা উচিত নয়। ২৩ নভেম্বর বলা হয়েছিল দুই মাসের মধ্যে। আমরা আশা করি, জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকেই হবে।
তিনি বলেন, বানের পানির মতো ১৯ দিনে এসেছে চার লাখ। সেই জায়গায় সেভাবে ফেরত যাওয়ার সুযোগ নেই। যে মানবিক বিচার-বিশ্লেষণ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সে জায়গায় সব রাষ্ট্র যে সমান বিবেচনায় নেবে.. তাহলে তো পৃথিবীর সব রাষ্ট্র.. অনেক রাষ্ট্র আছে তারা তাদের প্রতি সহানুভূতি দেখিয়েছে। তারা তো বলতে পারতেন, দুই লাখ তিন লাখকে আমরা নিয়ে যেতে চাই। যাই হোক, সেগুলো নিয়ে আমরা সময় নষ্ট করতে চাই না।
একটি সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে যেতে মানবিকভাবে যে সময়টুকু লাগবে এবং সে জায়গায় কিন্তু সংখ্যাটি অনেক। সময়সীমা বলা হয়েছে দুই বছরের মধ্যে, যোগ করেন শাহরিয়ার আলম।
যাচাই-বাছাই বড় চ্যালেঞ্জ কিনা প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা সেটা মনে করি না। কারণ, কাজ অনেক দূর এগিয়ে রেখেছি। আমরা তাদের বায়োমেট্রিক আইডি দিয়েছিলাম যেন তারা অন্য জেলার মানুষের সঙ্গে মিশে যেতে না পারে এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির সহায়তা পেতে পারেন। আমরা তাদের নিরাপত্তার বিষয়ে বেশি চিন্তিত ছিলাম।
শাহরিয়ার আলম বলেন, বাড়তি যে বিষয়টি আছে তা নিয়ে অনেকের শঙ্কা আছে। প্রায় ৪০ হাজার শিশু আছে পিতা-মাতা ছাড়া। সেগুলো বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সবাইকে আমলে নেওয়া হয়েছে। যারা কোনো কাগজ দেখাতে পারবেন না তাদের বলা হয়েছে গ্রামের নামটি বললে তাদের স্থানীয়ভাবে বেছে নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৮/আপডেট: ১৯৩৫ ঘণ্টা
কেজেড/এমজেএফ