ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সিলেটে মামলার বাদী-সাক্ষীদের হত্যার হুমকির অভিযোগ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৮
সিলেটে মামলার বাদী-সাক্ষীদের হত্যার হুমকির অভিযোগ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করছেন আমিন আহমদ। ছবি: বাংলানিউজ

সিলেট: সিলেটে আলোচিত হোসেন হত্যা মামলার বিচার নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন মামলার বাদী আমিন আহমদ।

মামলার আসামি আওয়ামী লীগ নেতা লিয়াকত আলী উচ্চ আদালত থেকে জামিনে বেরিয়ে এসে বাদী ও সাক্ষীদের প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।

মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) বিকেলে সহোদর প্রবাসী হোসেন হত্যার ন্যায় বিচার দাবিতে সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার দরবস্ত ইউনিয়নের লামা মহাইল গ্রামের বাসিন্দা মামলার বাদী মো. আমিন আহমদ।

ভাই হত্যার ন্যায় বিচার পেতে প্রধানমন্ত্রী ও প্রশাসনের সহায়তা চেয়ে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, বিলের পাহারাদার থেকে কয়েক বছরে শতকোটি টাকা সম্পদের মালিক বনে যান সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার আলোচিত আওয়ামী লীগ নেতা লিয়াকত আলী। লিয়াকত আলী দলকে ব্যবহার করে হামলা-মামলা, চাঁদাবাজি ও লুটপাত করে রাতারাতি কোটিপতি হয়েছেন। যে কারণে বর্তমান সংসদ সদস্যও তার কার্যকলাপ জানতে পেরে দূরে ঠেলে দেন।

তিনি বলেন, ব্লু-প্লেনেট হসপিটালিটি কোম্পানির নামে জৈন্তাপুর উপজেলার শ্রীপুর আসামপাড়া মৌজায় কিছু জমি ক্রয়ের জন্য তিনি ও তার প্রবাসী ভাই হোসেন আহমদ অংশীদার হন।

গত ৩ ডিসেম্বর তারা ক্রয়কৃত জমি পরিদর্শনে গেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লিয়াকত আলী, তার ভাই মুসলিম আলী ও ইসমাইল আলীসহ শতাধিক লোক হামলা চালায়। এতে আহত হোসেন আহমদ ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওইদিন রাতে মারা যান। এ ঘটনায় জৈন্তাপুর থানায় লিয়াকতকে প্রধান আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।

মামলার বাদী মো. আমিন আহমদের অভিযোগ, ক্ষমতা ও টাকার জোরে হত্যা মামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগ থেকে লিয়াকত বার বার পার পেয়ে যাচ্ছেন। হোসেন হত্যা মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে প্রকাশ্যে তাকেসহ সাক্ষীদেরও হত্যার হুমকি এবং মামলা ভিন্নখাতে নিতে চেষ্টা করছেন।

এছাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রায় ১৮ বছরের সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মুখলিছুর রহমান দৌলাকে ২০১৪ সালের ১১ সেপ্টেম্বর হত্যা করা হয়। দৌলা হত্যার মধ্য দিয়ে লিয়াকত আলী তার বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থান পাকাপোক্ত করেন। প্রভাব খাটিয়ে কৌশলে তিনি ওই মামলা থেকে রক্ষা পান।

লিয়াকত আলী জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট উপজেলার মুর্তিমান আতঙ্কের নাম উল্লেখ করে আমিন আহমদ বলেন, এসব উপজেলায় নিজস্ব বাহিনীর মাধ্যমে পাথর কোয়ারিগুলো থেকে লিয়াকত প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেন।

বোমা মেশিনের দ্বারা সরকারি খাস জমি, আদিবাসীদের জমি ও পান-সুপারি বাগান, চা-বাগানসহ ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি হতে জোরপূর্বক প্রভাব খাটিয়ে লাখ লাখ টাকার পাথর উত্তোলন করে আসছেন। পাথর কোয়ারি ছাড়াও জৈন্তাপুর উপজেলা জলমহালগুলোর নিয়ন্ত্রণকারীও লিয়াকত দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে ইতোমধ্যে অবৈধভাবে কয়েকশত কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক হয়েছেন উল্লেখ করে বলা হয়, জৈন্তাপুর উপজেলার আলু বাগান এলাকায় আদিবাসী খাসিয়াদের জমি অবৈধ দখল করে বানকান স্টোন ক্রাশার স্থাপন, মোকাম পুঞ্জিতে বাংলোবাড়ি, খাসিয়া হাটিতে বানিয়ল হাউস নামে কয়েক কোটি টাকা মূল্যের বাড়ি ক্রয়, জৈন্তাপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় কোটি টাকা মূল্যের অর্পিত সম্পত্তি জাল কাগজ বানিয়ে তার ভাই মুসলিম আলীর নামে দখল, সিলেট সদর উপজেলায় জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট বটেশ্বর এলাকায় কোটি টাকা মূল্যের বাড়ি, নগরীর সুবিদবাজার এলাকায় ফ্ল্যাটবাড়িসহ বিভিন্ন সম্পদ রয়েছে লিয়াকত আলীর।

সংবাদ সম্মেলনে জৈন্তাপুর এলাকার মুরব্বি সিরাজুল হক সিরাই, আলা উদ্দিন, আতাউর রহমান, আব্দুল কাদির, ফারুক আহমদ, শাহেদ আহমদ, জাহিদুল ইসলাম জাহিদ, এরশাদুল আলম চৌধুরী, আব্দুল বাছিত তুহিন এবং আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৮
এনইউ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।