গত বছরের ২৫ আগস্ট থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ঢল শুরু হয়। তাদের সংখ্যা নিরূপণে আঙুলের ছাপ নিয়ে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধন শুরু করে বাংলাদেশ।
মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) পর্যন্ত বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে মোট ১০ লাখ ৪ হাজার ৭৮২ জনের নিবন্ধন করা হয়েছে বলে সরকারি তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ১২টি অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমার নাগরিকদের সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৬টি ক্যাম্পের মাধ্যমে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধন কাজ এগিয়ে চলছে। পাসপোর্ট অধিদপ্তর নিবন্ধন কাজ বাস্তবায়ন করছে।
মঙ্গলবার কুতুপালং-১ ক্যাম্পে ৬১০ জন পুরুষ, ৫০৩ জন মহিলা মিলে ১ হাজার ১১৩ জন, কুতুপালং-২ ক্যাম্পে ১ হাজার ২৫৩ জন পুরুষ, ৯৯৭ জন মহিলা মিলে ২ হাজার ২৫০ জন, নোয়াপাড়া ক্যাম্পে ১৬৪ জন পুরুষ, ১৬১ জন মহিলা মিলে ৩২৫ জন, থাইংখালী-১ ক্যাম্পে ১১১ জন পুরুষ, ৮৪ জন মহিলা মিলে ২৯৫ জন, থাইংখালী-২ ক্যাম্পে ১৪১ জন পুরুষ, ১৩৯ জন মহিলা মিলে ২৮০ জন, বালুখালী ক্যাম্পে ৭৭৩ জন পুরুষ, ৭৩৫ জন মহিলা মিলে ১ হাজার ৫০৮ জন এবং সারাদিনে ৬টি কেন্দ্রে মোট ৫ হাজার ৫৭১ জনের বায়োমেট্রিক নিবন্ধন করা হয়েছে।
এদিকে সমাজসেবা অধিদপ্তর কর্তৃক এ পর্যন্ত ৩৬ হাজার ৩৭৩ জন এতিম শিশু শনাক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে ১৭ হাজার ৩৯৫ জন ছেলে এবং ১৮ হাজার ৯৭৮ জন মেয়ে। বাবা-মা কেউ নেই এমন এতিম শিশুর সংখ্যা ৭ হাজার ৭৭১ জন।
কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের (আরআরআরসি) রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী মিয়ানমারের নাগরিক সংখ্যা ৬ লাখ ৭৩ হাজার ৪১০ জন। অনুপ্রবেশ অব্যাহত থাকায় এ সংখ্যা বাড়ছে। গত বছরের ২৫ আগস্টের আগে আসা মিয়ানমার নাগরিকের সংখ্যা ২ লাখ ৪ হাজার ৬০ জন।
এদিকে, রোহিঙ্গাদের ফেরাতে দেশটির রাজধানী নেপিদোতে মঙ্গলবার বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের প্রতিনিধিদের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের (জেডব্লিউজি) বৈঠকে ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট চুক্তি হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য সরকারি পর্যায়ের কাজটি সম্পন্ন হলো। ফেরাতে ২ বছরের মতো সময় লাগবে।
চুক্তির পরে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানিয়েছেন, জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকেই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন শুরু হবে।
ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ১২টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমার নাগরিকদের জন্য মানবিক সহায়তার অংশ হিসেবে বেসরকারি উৎস থেকে প্রাপ্ত ত্রাণ সরকারি উদ্যোগে বিতরণ অব্যাহত রয়েছে বলে তথ্য বিবরণীতে জানিয়েছে সরকার।
উখিয়ায় স্থাপিত নিয়ন্ত্রণকক্ষে এদিন ২০ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ২৭ ট্রাকের মাধ্যমে ৬৮ মেট্রিক টন ত্রাণ জমা দিয়েছে। প্রাপ্ত এসব ত্রাণ সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে ৫ হাজার ৪০০ প্যাকেট শুকনো খাবার, ১৮ হাজার ৫৩১ পিস গৃহস্থালী সামগ্রী। এসব ত্রাণ আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমার নাগরিকদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা ত্রাণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার পর্যন্ত কক্সবাজারের ৪টি খাদ্য গুদামে প্রাপ্তি ও প্রদানের পর ২ হাজার ৮১৬ মেট্রিক টন চাল, ৬৪ মেট্রিক টন ডাল, ৮৭ হাজার ৯৬৯ লিটার তেল, ৪১ মেট্রিক টন লবণ, ৫০ মেট্রিক টন চিনি, ২ হাজার ২০৮ কিলোগ্রাম আটা, ৫২ হাজার ৪৭০ কেজি গুঁড়ো দুধ, ৭ হাজার ২০০ পিস ও ৪৯ বান্ডেল কম্বল, ৫১১টি তাঁবু ও ত্রিপল মজুত রয়েছে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার মাধ্যমে পরিচালিত ‘অবৈধভাবে অনুপ্রবেশকারী মিয়ানমার নাগরিকদের মানবিক সহায়তা’ নামক সোনালী ব্যাংক, কক্সবাজার শাখার চলতি হিসাব নং ৩৩০২৪৬২৫-তে এ পর্যন্ত ৫ কোটি ২ লাখ ৩০ হাজার ৫১০ টাকা জমা রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২২১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৮
এমআইএইচ/জেডএস