নিজস্ব উৎপাদনে দুধের ঘাটতি মেটাতে বড় পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে ফরিদপুরকে কেন্দ্র করে ওই অঞ্চলে একটি ‘হাব’ (কেন্দ্রস্থল) গড়তে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে সরকার।
এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাংলানিউজকে বলেন, দেশে বর্তমানে তিন লাখ দুধেল গাভী রয়েছে। এসব গাভীর দুধ দিয়েই দেশের চাহিদা মেটানো সম্ভব। কিন্তু দুধ সংরক্ষণের অভাবে তা সম্ভব হয় না। ইউএইচটি (আল্ট্রা হাই টেম্পারেচার প্রসেসিং) মিল্ক প্ল্যান্ট স্থাপন করলে অনায়াসে ৫-৬ মাস দুধ সংরক্ষণ করা যাবে। এটা করলে বিদেশ থেকে দুধ আমদানি করা লাগবে না।
জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন করতে হলে সবার পুষ্টি নিশ্চিত করতে হবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, দুধের ঘাটতি যদি পূরণ করা যায়, তবে জনগোষ্ঠীর পুষ্টি অনেকাংশে নিশ্চিত হবে।
দেশীয় উৎপাদনে দুধের চাহিদা মেটাতে গৃহীত ৩৪৪ কোটি ১৯ লাখ টাকার প্রকল্পটি মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পেয়েছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এর আওতায় ফরিদপুর জেলা সদর উপজেলায় মূল দুগ্ধ কারখানা স্থাপন করা হবে। পাশাপাশি স্থাপন করা হবে দুগ্ধ শীতলীকরণ প্ল্যান্ট। এছাড়া ফরিদপুরকে কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জ, রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ, খুলনা, যশোর, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, মাগুরা, চুয়াডাঙ্গা ও নড়াইল জেলা নিয়ে গড়ে তোলা হবে গরুর দুধের ‘হাব’ (কেন্দ্রস্থল)। এসব জেলার খামারিদের গাভী পালনে ঋণ দেবে সরকার।
ফরিদপুরে থাকবে বিশাল ইউএইচটি মিল্ক প্ল্যান্ট, অটোম্যাটিক আইসক্রিম প্ল্যান্ট, চকলেক ও ক্যান্ডি প্ল্যান্ট। আরও থাকবে পাস্তুরিত মিল্ক প্ল্যান্ট, ঘি, রসমালাই, মিষ্টিদই, লাবাং, বাটার, চিজ প্রোডাকশন সেকশন। স্থাপিত হবে ফ্লেডার্স মিল্ক প্রসেসিং প্ল্যান্ট, কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র, মাইক্রো-বাইয়োলজিক্যাল ল্যাবরেটরি, ডেইরি বায়োটেকনোলজিক্যাল ল্যাবরেটরিও মোবাইল ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরি।
কর্মকর্তারা বলছেন, ফরিদপুরে মোট ১৫টি দুগ্ধ শীতলীকরণ কেন্দ্র স্থাপিত হবে। তিন হাজার লোকের সমন্বয়ে ৬০টি সমবায় গঠন করে প্রত্যেক সমবায়ী কৃষককে দু্’টি করে বকনা বাছুর কেনার জন্য ১ লাখ ২০ হাজার টাকা ঋণ দেওয়া হবে। একবছরে ৫ শতাংশ সার্ভিস চার্জসহ ৩৬ কিস্তিতে ঋণ আদায় করা হবে। এই পশু লালন-পালনে প্রয়োজনীয় ভবন ও শেডও নির্মাণ করা হবে।
ফরিদপুর জেলার ভৌগোলিক অবস্থান, যোগাযোগ ব্যবস্থা, গাভী পালন ও দুগ্ধ খামার স্থাপনের সুবিধা ও অনুকূল পরিবেশ বিবেচনা করে এলাকাটিকে ‘হাব’ গড়ার জন্য নির্বাচন করা হয়েছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতর সূত্র জানায়, দেশে মোট গাভীর সংখ্যা ১ কোটি ১৬ লাখ। এরমধ্য থেকে সবসময় দুধ পাওয়া যায় তিন লাখ গাভী থেকে। কিন্তু চাহিদা মেটাতে চার হাজার কোটি টাকায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এবং অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড থেকে গুঁড়ো দুধ আমদানি করার কারণে গাভী পালনে খামারিরা আগ্রহ হারাচ্ছেন। গুঁড়ো দুধ আমদানি ঠেকিয়ে তরল দুধের উৎপাদন উৎসাহিত করতে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের উপ-পরিচালক (কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামার) লুৎফর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, দেশে দুধের ঘাটতির জন্য আসলে দায়ী গুঁড়ো দুধ আমদানি। প্রতিবছর প্রায় চার হাজার কোটি টাকার গুঁড়ো দুধ আমদানি করা হয়। এ কারণে তরল দুধের চাহিদা কম। গুঁড়ো দুধ আমদানি ঠেকাতে প্রকল্পটি ভালো ভূমিকা রাখবে। তরল দুধ পানের প্রবণতাও বাড়বে। তাহলে দেশীয় খামারিরাও উৎসাহ হারাবেন না, আমদানির কারণে বাইরে টাকাও যাবে না।
বাংলাদেশ সময়: ১২১৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০১৮
এমআইএস/এইচএ/