মন্ত্রণালয়ে পাস হওয়া নীতিমালা থেকে জানা যায়, প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেলকে একই বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ দু’টি যানে ভাড়া, যাত্রী ধারণক্ষমতা ও ক্যাটাগরিতে বিশাল ফারাক রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নীতিমালা প্রণয়নের দায়িত্বে থাকা বিআরটিএ ‘রাইড শেয়ারিং নীতিমালা’ না করে অনেকটা ‘ট্যাক্সি সার্ভিস নীতিমালা’ তৈরি করেছে। এ কাজে রাইড শেয়ারিং সেবাদাতা অ্যাপস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে একটি বৈঠকও করেনি তারা। ফলে ভাড়া ট্যাক্সি ক্যাবের সমান রাখার কথা বলা হয়েছে।
এ সুযোগে যে নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে সেখানে মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকারকে এক করে ফেলা হয়েছে।
তবে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নীতিমালা নিয়ে বিআরটিএ চেয়ারম্যানকে স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক আয়োজনের নির্দেশ দিয়েছেন।
মন্ত্রী জানান, নীতিমালা কিভাবে বাস্তবায়ন করা যায় বৈঠকে স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করা হবে। ৩১ জানুয়ারি বিআরটিএ অফিসে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে অ্যাপস প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ, যাত্রী প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টরা অংশ নেবেন।
তবে অনুমোদিত নীতিমালার বিভিন্ন দিক নিয়ে এরইমধ্যে প্রশ্ন তুলেছেন স্টেক হোল্ডররা। আর যাত্রীরাও ভাড়ার বিষয়টি নীতিমালায় ঠিক না করায় অসন্তোষ জানিয়েছেন।
বাংলানিউজ নীতিমালাটি ঘেঁটে দেখেছে, ৮টি অনুচ্ছেদে ৪৬ বিষয় উল্লেখ রয়েছে। প্রথম অনুচ্ছেদের ৭ নম্বরে বলা হয়েছে, রাইড শেয়ারিং অ্যাপস ও মোটরযান মালিকের যে চুক্তি থাকবে তা শেষ করতে হলে ১ মাস আগে নোটিস করতে হবে।
এ নিয়মে একটি অ্যাপ ছেড়ে অন্য অ্যাপে যেতে অনুমতির মতো জটিলতা লাগবে। রাইড শেয়ারিং নিয়মে মোবাইলে যখন ইচ্ছে যেকেনো অ্যাপে যে কেউ এ সেবা দিতে পারেন।
দ্বিতীয় অনুচ্ছেদের ৫ নম্বরে বলা হয়েছে, এ সেবা নিয়ে অভিযোগ অ্যাপস প্রতিষ্ঠান ও বিআরটিএ উভয়কে জানানোর সুযোগ দিতে হবে। কিন্তু বর্তমানে অভিযোগ শুধু অ্যাপে দেওয়া হচ্ছে। বিআরটিএকে এখানে সংশ্লিষ্ট রাখেনি অ্যাপগুলো।
নীতিমালার ৪ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, মোটরযান মালিকের এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেট থাকতে হবে সেবা দেওয়ার জন্য। কিন্তু এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেট আছে কী নেই তা অ্যাপসে দেখানোর সুযোগের কথা বলা হয়নি। এটা করা না হলে ফাঁকিবাজি হবে।
৫ নম্বর অনুচ্ছেদটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চালক, যাত্রী ও অ্যাপস প্রতিষ্ঠানের জন্য। নীতিমালায় এটাকে সবচেয়ে অবহেলা করা হয়েছে। এখানে রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের ভাড়ার হার নিয়ে বলা হয়েছে, ব্যক্তিগত মোটরকারের ভাড়া ‘ট্যাক্সিক্যাবের নির্ধারিত ভাড়া অপেক্ষা বেশি হতে পারবে না। '
এ ভাড়ার বিষয়টি নিয়েই আপত্তি বেশি। এ নিয়ম থাকলে অ্যাপসগুলো ভাড়া অনেক বাড়িয়ে নিতে পারবে। আর মোটরসাইকেলের ভাড়া কেমন হবে তা নিয়েও কোনো কিছু বলা নেই নীতিমালায়।
এখন মোটরসাইকেলে রাইড শেয়ারিংয়ের যে ভাড়া তা সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়ার চেয়েও কম। এর তিন বা চারগুণ বেশি হলো ট্যাক্সি ক্যাবের ভাড়া। এ নীতিমালা বাস্তবায়ন হলে মোটরসাইকেল অ্যাপসগুলো এক লাফে তিন চারগুণ ভাড়া বাড়িয়ে নেওয়ার সুযোগ পাবে। এমনিতেই দেড় বছরে তিনদফা ভাড়া বাড়িয়েছে মোটরসাইকেল অ্যাপসগুলো।
রাইড শেয়ারিং প্রতিযোগিতা অনুযায়ী নতুন একটি অ্যাপস এলেই প্রথমে তাদের বাইকার বা ড্রাইভার আকর্ষণ করতে হয় ভাড়া বাড়িয়ে। আর অ্যাপস প্রতিষ্ঠান মোটরযান চালকের কত শতাংশ কেটে নেবে এ বিষয়টিও নেই নীতিমালায়।
দেশি-বিদেশি অ্যাপস এখানে বিনিয়োগ করবে এবং লভ্যাংশ নেবে, কিন্তু কোন উপায়ে তারা টাকা বিদেশে নেবে সে পন্থা উল্লেখ নেই নীতিমালায়। আর ভাড়া বেশি নেওয়া ও গাড়ি সুবিধা ব্যবহার করতে গিয়ে অপরাধ ও ত্রুটির ক্ষেত্রে কি জরিমানা তারও উল্লেখ নেই।
দিনের মধ্যে ভাড়া ওঠানামা করা যাবে কি না, করলে তা কত পরিমাণে সেটিরও উল্লেখ নেই নীতিমালায়।
মোটরসাইকেল রাইড শেয়ারিং অ্যাপস স্যাম-এর প্রতিষ্ঠাতা ইমতিয়াজ কাশেম বাংলানিউজকে বলেন, নীতিমালায় মোটরসাইকেলের রাইড শেয়ারিং বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। শুরুতে তারা যে ভাড়া ঠিক করেছিলেন প্রতিযোগিতার কারণে তা ২০ ভাগ বাড়াতে হয়েছে।
পাঠাও অ্যাপস সিইও মো. ইলিয়াস বাংলানিউজকে জানিয়েছিলেন, তারা সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়ার অর্ধেক ভাড়া ঠিক করেছিলেন।
ঢাকায় অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং পরিবহন সেবার বয়স দেড় বছর। ২০১৬ সালের ৭ মে বিশ্বের প্রথম মোটরসাইকেল রাইড শেয়ারিং ঢাকায় শুরু করে শেয়ার এ মোটরসাইকেল ‘স্যাম’। এরপর একই বছরের ২২ নভেম্বর বিশ্বের সবচেয়ে বড় অন-ডিমান্ড রাইড শেয়ারিং কোম্পানি উবার চালু হয়।
তারপর ১৫ ডিসেম্বর ‘পাঠাও’ অ্যাপস্ভিত্তিক মোটরসাইকেল সেবা দেওয়া শুরু করে। উবার, স্যাম, পাঠাও ছাড়াও প্রায় ১০টি অ্যাপস্ভিত্তিক রাইড শেয়ারিং সেবা রাজধানীতে চালু রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮০০ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০১৮
এসএ/জেডএস