মন্ত্রিসভায় পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কয়েকটি ধারায় আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা বিন্যাস করে যুক্ত এবং গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে একথা জানান মন্ত্রী।
আইনের ৩২ ধারায় গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বাধাগ্রস্ত হবে বলে সাংবাদিক নেতাদের অভিযোগ সম্পর্কে মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) নিজ দফতরে মন্ত্রী বলেন, গুপ্তচরবৃত্তি একটা অপরাধ।
তিনি বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের নেত্রী। জনগণ মানে সাংবাদিক। তিনি অহেতুক অযথা কেউ হয়রানি হোক সেটা চান না। সেজন্য কোনো আইনের মধ্যে এরকম ব্যবস্থা থাক সেটা উনি চান না। সেই কারণেই এটি স্পস্ট করে ধারাগুলো দেওয়া হয়েছে, যাতে অস্পস্টতা দূর হয়।
আইসিটি আইনে ৫৭ ধারা কিছুটা হলেও বাকস্বাধীনতা হরণের একটা উপায় ছিল উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এখানে স্পস্ট করে দেওয়া হয়েছে, বাকস্বাধীনতা হরণের চেষ্টাও করা হয় নাই, হরণও হয় নাই। এখানে ধারাগুলো সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে এবং অপরাধ কী সেটা পরিস্কার করে দেওয়া হয়েছে, তাতে আপনাদের (সাংবাদিক) বাকস্বাধীনতার অধিকার অধিকার একটু হলেও ক্ষুণ্ন করা হয়নি।
এ বিষয়ে ব্রডকাস্টিং আইনে স্পস্টতা আসবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, দেখবেন আপনাদের অহেতুক কেউ হয়রানি করতে পারবে না।
৩২ ধারা পড়ে শুনিয়ে মন্ত্রী বলেন, এটার মধ্যে আপনারা কীভাবে পড়েন? কোন ধরনের অতি গোপনীয় বা অতি গোপনীয় তথ্য-উপাত্ত হতে হবে। সাংবাদিক হিসেবে অতি গোপনীয় কিছু প্রকাশ করতে পারেন?
‘আপনি যদি একটা ইলিগ্যাল জিনিস ছাপিয়ে দেন তাহলে সেটা অপরাধ হতে পারে না। কোনো বইতে নাই সেটা অপরাধ। তাহলে কম্পিউটারের মধ্যে থাকলেও সেটা যদি অবৈধ হয় এবং সেটা যদি আপনি প্রকাশ করেন তাহলে সেটা অপরাধ হতে পারে না। অপরাধ কোনো আইনে না। এটা আমি পরিস্কার করে দিলাম। ’
এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গোপনীয়তা যদি থাকে তাহলেও সেটা প্রোটেক্ট করার দায়িত্ব তাদের। সেটা যদি কেউ নেয় সেটাকে চুরি বলা হবে। কারণ সেটা গোপনীয়, আপনি জানছেন। আপনারা দায়িত্বশীল। সেখানে যদি গোপনীয় দেখবেন, সেই গোপনীয়তা যদি কোনো ষড়যন্ত্র বা অপরাধ করার জন্য হয়, তাহলে সেটা যদি আপনারা পাবলিশ করে দেন সেটা অপরাধ হবে না।
‘অতি গোপনীয় জিনিসটা যদি সঠিক হয়, সেটা যদি কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠান বলেন, তারা যদি গোপনীয় রাখতে চায় এবং সেটা যদি পরিস্কারভাবে লিখিত রাখতে চায় তাহলে সেটা প্রকাশ করা ঠিক হবে না, তার কারণ এটা অপরাধ আগেও ছিল, এখনও আছে। ’
মন্ত্রী বলেন, যখন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করছি, তখন আশ্বাস দিয়েছিলাম যে আইসিটি আইনে ৫৭ ধারা ছিল সেটা বিলুপ্ত হবে। আজকে আমরা সেই কথা রেখেছি। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন যখন সংসদে পাস হবে, পাশাপাশি আইসিটি আইনের সংশোধন হবে তখন ৫৭ ধারা বিলুপ্ত হবে।
নতুন আইন করা প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, কম্পিউটার ছাড়া সব অপরাধ দণ্ডবিধিতে আছে। কিন্তু কম্পিউটারে মানহানি করলে সেটি প্যানাল কোডে নাই। সেজন্য কম্পিউটারে যদি মানহানি করা হয় সেটাকে সাইবার ক্রাইম হিসেবে ধরে একটা সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে।
‘এখানে হ্যাকিং, অনধিকার প্রবেশের কথা বলা আছে। যেগুলো আগে প্যানাল কোডে ছিল সেগুলো যদি যান্ত্রিকভাবে করা হয় সেগুলো স্পস্টতা এনে দিয়েছি। ৫৭ ধারায় ৭ বছরের কমে কোনো সাজা ছিল না। এটার মধ্যে আমরা ছোট অপরাধের জন্য ৩ বছর এবং গ্রেভ ক্রাইম সেগুলোর সাজা বেশি রেখেছি। ’
মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে আইনে ধারা যুক্ত করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পরে বিচারহীনতা এবং ইতিহাস বিকৃতির যে কালচার- এগুলো পরিত্রাণের জন্য আমরা আলাদা ধারা সংযোজিত করেছি।
তিনি বলেন, ৫৭ ধারার সঙ্গে বিচারের স্বচ্ছতার জন্য কোনকিছু রাখা হয়নি। আমরা এখানে প্রসিকিউর রেখে দিয়েছি এবং আমাদের সবচেয়ে বড় যে ইচ্ছা যে এটার (৫৭ ধারা) অপপ্রয়োগ বন্ধ করা। আমাদের বিশ্বাস এই আইনের স্পস্টতার কারণে ৫৭ ধারার যে অপপ্রয়োগ হচ্ছিলো সেটা বন্ধ হবে। আমরা যে কথা দিয়েছিলাম ৫৭ ধারা বিলুপ্ত হবে সেই কথা রেখেছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০১৮
এমআইএইচ/এসএইচ