‘ডেলিভারি সার্ভিস’ নামে একটি ব্যবসা শুরু করেন। নিজের মোবাইল ফোনে মানুষের খাবার, আর বিভিন্ন পণ্যের অর্ডার নিতেন।
বয়স তখন ১৮…। ‘আঠারো বছর বয়সেই অহরহ/বিরাট দুঃসাহসেরা দেয় যে উঁকি। ’- ফাহাদের চলার পথে কবি সুকান্তের কবিতার মতো ঘটনা ঘটেছিল।
মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে সেসব বলছিলেন রাইড শেয়ারিং অ্যাপ ‘মুভ’ এর কো-ফাউন্ডার ও প্রধান নির্বাহী (সিইও) ফাহাদ ইবনে ওয়াহাব। জামালপুরের ছেলে ফাহাদ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটিতে বিবিএ চতুর্থ সেমিস্টারে পড়ছেন।
ডেলিভারি ব্যবসায় ব্যর্থ হয়ে বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ও সাপ্লাই চেইনের অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য কাজ নেন একটি গ্রুপ অব কোম্পানিতে। সেখানে ই-কমার্স রপ্ত করেন। পরে অন্য একটি কোম্পানিতে মার্কেটিংয়ে চাকরি নেন।
চাকরির পাশাপাশি পার্টনারশিপে হাল ছেড়ে দেয়া সেই ডেলিভারি ব্যবসা আবার শুরু করেন নতুন উদ্যমে। তবে অন্য নামে। এ সময় কিছুদিন বাংলাদেশে ফেসবুক বন্ধ করা হয়। সঙ্গে তার ব্যবসায়ও লালবাতি জ্বলে। এ সময়ের মধ্যে পার্টনারশিপে সমস্যা দেখা দেয়ায় ‘জলদি’ নামের দ্বিতীয়বারের ডেলিভারি ব্যবসাও গুটিয়ে যায়।
জীবনের চলার পথে বার বার ধাক্কা খেয়েও হতাশ না হয়ে আবরো ঘুরে দাঁড়াতে দুই-তিনটা কোম্পানিতে কনসালটেন্সি শুরু করেন। তাদের ব্যবসা এগিয়ে নিতে তিনি ভূমিকা রাখেন।
সবশেষ গত বছরের সেপ্টেম্বরে ‘মুভ’ অ্যাপের যাত্রা। নামটি তারই দেয়া। সঙ্গে বিনিয়োগকারী পেয়ে যান। এখন তার টিম ৩২ জনের। এতে রয়েছে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ। আরও বিনিয়োগ আসছে দেশের বাইরে থেকেও।
ঢাকায় মোটরসাইকেলে গন্তব্যে যেতে রাইড শেয়ারিং অ্যাপ ‘মুভ’ ব্যবহার করছে দিনে কয়েক হাজার মানুষ। ‘মুভ শুধু রাইড শেয়ারিং নয়; এটি ‘অন ডিমান্ড সার্ভিস প্লাটফর্ম’- বলছিলেন কো-ফাউন্ডার ও সিইও ফাহাদ।
মুভ-এর কো-ফাউন্ডার মতে বলেন, ‘এটা রাইড শেয়ারিং নয়, আমরা বলছি ‘সার্ভিস প্লাটফর্ম’। রাইড শেয়ারিং আমাদের একটা পার্ট। এখন তিনটি ‘সার্ভিস অন ডিমান্ড’ আমরা দিচ্ছি। শিগগিরই সিএনজি অটোরিকশা চালু হলে চারটি হবে। বাইক, ডেলভারি (সেন্ড) এবং ফুড। সবগুলো বাইক ট্রান্সপোর্ট ভিত্তিক সার্ভিস।
বাংলানিউজকে ফাহাদ বলেন, ‘২০১৩ সালে বাংলাদেশে প্রথম অন ডিমান্ড ডেলিভারি আমি শুরু করেছিলাম। ‘র্যাপিড মেইল’ নামে ছিলো প্রথম ডেলিভারি সার্ভিস। তখন 'ফুডপান্ডা' 'হাঙরিনাকি'-এসব কিছুই ছিলো না। কল ধরে অর্ডার নিয়ে ডেলভারি দিতাম। আমার ৫০ জন ফ্রি-ল্যান্সার বাইকার এ কাজে যুক্ত ছিলেন। তখন আমার কাছেই ফোন আসতো খাবারের অর্ডারের জন্য। আমার লোক পাঠিয়ে দিতাম। আবার সাইক্লিস্ট কমিউনিটির অনেক জিনিসপত্র লাগতো বংশাল থেকে। আমার লোক পাঠিয়ে সেটি এনে দিতাম। ’ ডেলিভারি সার্ভিসে টেকনোলজি না আনায় তা স্থায়ী হয়নি।
মুভ নিয়েই এখন ফাহাদ ব্যস্ত। সিএনজি অটোরিকশাকে অ্যাপে আনার লক্ষ্যে মুভ অ্যাপ শুরু হয়েছিলো। যদিও পরে মোটরসাইকেল রাইড শেয়ারিং দিয়ে মুভ শুরু হয়। তবে সিএনজি অটোরিকশা অ্যাপে আনতে দৃঢ় প্রত্যয়ী ফাহাদ।
এ নিয়ে পরিকল্পনার কথা জানিয়ে বলেন, ড্রাইভার প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। ৫০ জনকে ট্রেনিং দেয়ার পর তাদের হাতে মোবাইল দিতে যাচ্ছি। মার্চ মাসে মুভ অ্যাপে সিএনজি অটোকিশা পাওয়া যাবে। এখন অ্যাপে এটির অর্ন্তভুক্তির কাজ শেষ।
মোটরসাইকেল রাইড শেয়ারিং দিয়ে পরিচিত হয়েছে মুভ। ফাহাদ জানান, ‘৫ হাজারের বেশি বাইকার রেজিস্ট্রেশন করেছেন। আর মুভ অ্যাপটির ব্যবহাকারী ৫০ হাজার। এ তথ্য মোবাইলে অ্যাপস ডাউনলোডে সংখ্যা উল্লেখ করে বলেন তিনি।
ফাহাদের ধারণা, ঢাকায় সব অ্যাপস মিলিয়ে এখন দিনে ১০ হাজার মোটরসাইকেল রাইড হচ্ছে। এ ১০ হাজার রাইড কিছুই না। প্রতিদিন রাইডার এবং বাইকার বাড়ছে। ঢাকার যে মোটরসাইকেল রাইড শেয়ারিংয়ের বিশাল চাহিদা বা ব্যবহারকারী আছেন, এখন তার মাত্র ১০ ভাগ এ সেবা ব্যবহার করছেন।
‘১০ ভাগ যদি ১০ হাজার হয় তাহলে ১০০ ভাগ এক লাখ। অর্থাৎ দিনে রাজধানী ঢাকায় রাইড শেয়ারিং অ্যাপ ব্যবহারকারী এক লাখ হবে অদূর ভবিষ্যতে- এমনটাই মনে করেন মুভ সিইও ফাহাদ।
রাইড শেয়ারিংয়ের ভাড়াটা এখন যে বেশি সেটা মেনেই ফাহাদ বলেন, ভাড়া একটা পর্যায়ে কমবে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের কথা চিন্তা করলে দেখা যায় তারা দিনে দিনে ভাড়া কমায়। আমাদের দেশে উল্টো ভাড়া বাড়ছে।
‘তখন ভাড়া কমবে যখন বাইকারদের আমরা বেশি বেশি রাইড দিতে পারবো। ’
ফাহাদ বলেন, মুভ অ্যাপ হবে 'ওয়ান অ্যাপ ফর-অল'-এই চেষ্টা করছি। শুধু রাইড শেয়ারিং না। সামনে আরও কোনো সার্ভিস সম্ভব হলে অ্যাপে আনতে পারি। এটা রাইড শেয়ারিং নয় আমরা বলছি ‘অন ডিমান্ড সাভিস প্লাটফম’।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৮
এসএ/এসএইচ