কিছুদিন আগেও যে স্থানগুলোতে রাত ১০টা ১১টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা আড্ডায় মেতে থাকতো। সেই জায়গাগুলো গত কয়েকদিনের ককটেল আতঙ্কে এখন ফাঁকা।
লালন শাহ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী জোবায়ের আহমেদ বাংলনিউজকে বলেন, একমাস আগেও রাত ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় বন্ধুর জন্মদিন পালন করেছি। বিভিন্ন সময় রাত নয়টা দশটা পর্যন্ত গিটারের তারে টুং টাং সুর তুলেছি। কিন্তু গত এক সপ্তাহের ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনার পর রাত নয়টার দিকেও বটতলায় যাওয়ার সাহস করিনা।
ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের আবাসিক শিক্ষার্থী তানিয়া তাসনিম বলেন, ঘটনার পরদিন আমার পরীক্ষা থাকায় একটু আগেই ঘুমিয়ে পড়ি। ঘুমানোর ১৫ মিনিটের মধ্যেই বিকট শব্দের আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায়। বারান্দায় গিয়ে শুনি বাইরে ককটেল বিস্ফোরিত হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, সারাদিনের কর্মব্যস্ততা কাটিয়ে রাতের বেলা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় হাঁটতে বের হতাম। কিন্তু গত কয়েকদিনের ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় রাতের বেলায় হাঁটতে বের হওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
এদিকে, কয়েকদিনের ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাটি এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে প্রতিদিনের আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ আলোচনা শেষ পর্যন্ত গড়িয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পর্যন্ত।
জানা যায়, ২৯ জানুয়ারি রাত এগারোটার দিকে লালন শাহ হলের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। এর ১০ মিনিট পর আবারো ছাত্রী হলের সামনে বিকট শব্দে ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। মুহূর্তেই প্রকম্পিত হয়ে উঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের এলাকা।
বিস্ফোরণের এ ঘটনার প্রেক্ষিতে রাত ১১টা ২৩ মিনিটে আসাদুজ্জামান নুর নামে এক শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লেখেন। ‘বাহ! ক্যাম্পাসতো শব্দের কারখানা...। বোমা ফাটলো এই মাত্র। শান্তিডাঙ্গার শান্ত ক্যাম্পাস কারা অস্থিতিশীল করতে চায়? কিসের আলামত?’
হিমেল চাকমা নামের সাদ্দাম হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ কর্মী কমেন্ট করেন, ‘বাচ্চাদের হাতে প্রথমবার খেলনা দিলে যেমন হয়। টিকক (ঠিক) তেমনি ভাই। ওরা ফাটিয়ে বুঝাতে চাচ্ছে আমরা মাত্র বোমাগুলো পেলাম। হইতো (হয়ত) ওরা জানে না এগুলো আমরা ৩ বছর আগে পার করে আচ্ছি (আসছি)। তবে তার কমেন্টে স্পষ্টতই ছাত্রলীগের প্রতিপক্ষ গ্রুপকে ইঙ্গিত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট কাউন্সিলের সভাপতি অধ্যাপক আশরাফুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিষয়টি আমরা জানি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেও জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে। সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবে। ’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘এখনো আমরা সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাইনি। সুনির্দিষ্ট তথ্য না পেলে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছি না। তবে এর রহস্য উদঘাটনে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ’
বাংলাদেশ সময়: ১০১৮ ঘণ্টা, ৩১ জানুয়ারি, ২০১৮
আরএ