বুধবার (৩১ জানুয়ারি) পুলিশ সদর দফতরে আয়োজিত বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এ কথা জানান বিদায়ী আইজিপি।
শহীদুল হক বলেন, গত তিন বছর ১ মাস আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে চেষ্টা করেছি পুলিশের সক্ষমতা উঁচুমাত্রায় নিয়ে যেতে এবং পুলিশকে জনবান্ধব করতে।
তিনি বলেন, পুলিশে ৩২ বছরের চাকরি জীবনে অনেক পেয়েছি। জনগণ এবং পুলিশের প্রত্যেকটা সদস্যের কাছ থেকে ভালোবাসা-শ্রদ্ধা পেয়েছি। চেষ্টা করেছি সততা ও দেশপ্রেম নিয়ে কাজ করার। মানুষের জন্য কাজ করার যে সুযোগ পেয়েছি চেষ্টা করেছি তার সদ্ব্যবহার করতে। পুরোপুরি সন্তুষ্টি নিয়েই বিদায় নিচ্ছি।
কিশোর বয়স থেকেই বঙ্গবন্ধুর চেতনা ধারণ করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কখনো এই চেতনা থেকে বিচ্যুত হইনি। যতদিন বেঁচে থাকব এই চেতনা নিয়েই বাঁচব। ৩২ বছর কর্মজীবনের শেষদিন পর্যন্ত জনগণের জন্য কাজ করতে চেষ্টা করেছি। যেখানে যে অবস্থায় থাকব এই সুযোগটা আমি নিতে চাই।
অসাংবিধানিক ও অগণতান্ত্রিক সরকার যেন ক্ষমতায় না আসে সেজন্য পুলিশ কাজ করেছে উল্লেখ করে শহীদুল হক বলেন, জনগণের সহায়তায় আমরা সফল হয়েছি। আশা করব নতুন আইজিপি এ ধারা অব্যাহত রাখবেন। এ বছর নির্বাচনের বছর। নির্বাচনে মানুষ যেন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দিতে পারে নতুন নেতৃত্বে পুলিশ সে দায়িত্ব পালন করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
গত তিন বছরে পুলিশে যা অর্জন আছে তার কৃতিত্ব কনস্টেবল থেকে আইজি পর্যন্ত সবার। আর যা ব্যর্থতা আছে সবকিছুর দায় আমার। দায়িত্ব পালনকালে পুলিশের সবাইকে হয়তো খুশি করতে পারিনি। একটা প্রশাসনিক কাঠামোতে কাজ করতে হয়েছে। এর বাইরে কিছু চাপ, কিছু গাইডলাইন থাকে। ব্যক্তিগতভাবে আমি কারো প্রতি বিরাগভাজন ছিলাম না, যোগ করেন শহীদুল হক।
একই অনুষ্ঠানে নবনিযুক্ত আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, বিগত দিনগুলোতে আইজিপিকে সবাই যেভাবে সহায়তা করেছেন, বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে সামনের দিনগুলোতেও সহায়তা অব্যাহত রাখবেন বলে আশা করি।
মানুষের কাছাকাছি যাওয়ার পুলিশের যে প্রয়াস, সেটা অব্যাহত রাখতে পারলে আরো এগিয়ে যাওয়া সম্ভব বলে বিশ্বাস করেন তিনি।
অনুষ্ঠানের পর আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে শহীদুল হক বলেন, স্বপ্ন অনেক থাকে কিন্তু সব তো পূরণ হয় না। অধিকাংশ কর্মপরিকল্পনাই বাস্তবায়ন করে গেছি। পুলিশের পেশাদারিত্বের জন্য ২০টি নির্দেশনা দিয়ে গেছি। ৯৯৯- জরুরি সেবা ছিল সবচেয়ে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত।
তবে থানা লেভেলে পরিবর্তন সম্ভব হয়নি। আমি চেয়েছিলাম মানুষ যেখানে অভিযোগ নিয়ে যায়, যেটা মানুষের শেষ ভরসা, সেখানে সেবা পেয়ে যেন সন্তুষ্টি নিয়ে ফিরে। আমি থানা পর্যায়ে সেবার মান বাড়াতে অনেক চেষ্টা করেছি, অনেক উন্নতি হয়েছে কিন্তু পুরোপুরি পরিবর্তন হয়নি। যদিও এটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। পুলিশে নতুন ছেলেরা আসছে, আশা করব তারাই মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করবে, বলেন শহীদুল হক।
আগামী জাতীয় নির্বাচনই নতুন আইজিপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্বাচনে অনেক ষড়যন্ত্র হবে, সেসব মোকাবেলা করে মানুষকে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ করে দেওয়া মেইন কাজ হবে।
এরপর নবনিযুক্ত আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারীর হাতে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন শহীদুল হক। বিভিন্ন অনুষ্ঠানিকতা শেষে সদর দফতর থেকে বিদায়ের মাধ্যমে ৩২ বছর কর্মজীবনের ইতি টানেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৮
পিএম/এমজেএফ/