তিনি কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমলা ইউনিয়নের কচুবাড়ীয়া গ্রামের হতদরিদ্র বৃদ্ধা আমিরন খাতুন।
বিয়ের কিছুদিন পরেই স্বামীকে হারান আমিরন।
আমিরন খাতুন বাংলানিউজকে বলেন, সকালে ছাগল চরাতে বের হয়ে যাই সন্ধ্যায় ফিরি। আমার বয়স যখন ৫-৬, তখন থেকেই মায়ের দেওয়া একটি ছাগল নিয়ে যেতাম মাঠে। অভাবের সংসার ছিল। পেটপুরে খাবার মতো খাদ্য ছিল না ঘরে। পড়ালেখা কি বুঝিনি কখনো। ১১-১২ বছর বয়সেই ভিনদেশি একজনের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেন বাবা-মা। পরিচয় জানতাম না তার। বিয়ের ৬ মাসের মাথায় সে আমাকে ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে যায়। শ্বশুরবাড়িতে যাওয়া হয়নি কখনো। পরে আর বিয়েও করা হয়নি।
তিনি আরো বলেন, ছোটবেলা থেকেই ছাগল নিয়ে মাঠে চরে বেড়াতাম। প্রায় ৬০ বছর ধরে এ কাজই করে চলেছি। শখের ছাগল বিক্রি করতে মন চায় না। বর্তমানে এক রাজা আর তার ১৫ জন সঙ্গী রয়েছে। মৃত মেজোভাই নজরুলের পরিবারে থাকি কোনোমতে। সহায় সম্বল বলতে এই ছাগলগুলোই।
তিনি আরো বলেন, ক’দিনই আর বাঁচবো। যতদিন বেঁচে আছি ছাগল নিয়েই থাকবো। আপন বলতে এরাই আমার সব।
আমিরনের ভাবি চম্পা খাতুন বাংলানিউজকে বলেন, বিয়ে হয়ে আসার পর থেকেই আমি আমিরনকে ছাগল চরাতে দেখেছি। সকালে যায় আর বাড়ি ফেরেন সেই সন্ধ্যায়। ক’দিন ধরে চোখে ভালো দেখতে পারেন না। ৫ হাজার টাকা দিয়ে একটা ছাগল বিক্রি করে চিকিৎসা করিয়েছি। ছাগলই তার জীবনের সব। এই ছাগলের জন্যই অন্য কোথাও আর বিয়েও করলো না।
তিনি আরো বলেন, বয়স্ক ভাতা পেলে একটু ভালোভাবে দিন কাটাতে পারতো সে। বুড়ো বয়সে ছাগল নিয়ে আর মাঠে যেতে হতো না।
স্থানীয় বাসিন্দা রুবেল আহম্মেদ নান্নু বাংলানিউজকে বলেন, ছাগল পালন করেই কেটে যাচ্ছে আমিরনের জীবন। তাকে দিনের বেলায় বাড়িতে পাওয়া যায় না। মাঠে মাঠে ছাগল নিয়ে চড়ে বেড়ায়।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০১৮
আরএ