ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

আমিরনের ছাগলের রাজ্য

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩০৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১, ২০১৮
আমিরনের ছাগলের রাজ্য ছাগল রাজার রাজ্যে আমিরন

কুষ্টিয়া: ছাগল রাজার রাজ্যেই সংসার তার। বয়স ষাট পার করে সত্তরের ঘরে। স্বামী, সন্তান কেউ নেই রয়েছে রাজা নামের ছাগল আর রাজার রাজ্য। ছেড়া কাপড়, হাতে লাঠি আর রাজার রাজ্য নিয়ে মাঠেই দিন কাটে তার।

তিনি কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমলা ইউনিয়নের কচুবাড়ীয়া গ্রামের হতদরিদ্র বৃদ্ধা আমিরন খাতুন।

বিয়ের কিছুদিন পরেই স্বামীকে হারান আমিরন।

এর পর থেকে বিধবাবেশেই তার দিন কাটে মাঠে-মাঠে ছাগল চরিয়ে। বর্তমানে মৃত ভাইয়ের সংসারে রয়েছেন তিনি। বয়সের ভারে মাঝে মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। চোখে ভালো দেখতে পারেন না। তার পরেও মাঠে চরিয়ে বেড়ান শখের ছাগলের পালকে। ছাগল রাজার রাজ্যে আমিরনসম্প্রতি একদিন বিকেলে দেখা হয় আমিরন খাতুনের সঙ্গে, ছাগল চরিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। কথা হয় তার সঙ্গে।

আমিরন খাতুন বাংলানিউজকে বলেন, সকালে ছাগল চরাতে বের হয়ে যাই সন্ধ্যায় ফিরি। আমার বয়স যখন ৫-৬, তখন থেকেই মায়ের দেওয়া একটি ছাগল নিয়ে যেতাম মাঠে। অভাবের সংসার ছিল। পেটপুরে খাবার মতো খাদ্য ছিল না ঘরে। পড়ালেখা কি বুঝিনি কখনো। ১১-১২ বছর বয়সেই ভিনদেশি একজনের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেন বাবা-মা। পরিচয় জানতাম না তার। বিয়ের ৬ মাসের মাথায় সে আমাকে ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে যায়। শ্বশুরবাড়িতে যাওয়া হয়নি কখনো। পরে আর বিয়েও করা হয়নি।

তিনি আরো বলেন, ছোটবেলা থেকেই ছাগল নিয়ে মাঠে চরে বেড়াতাম। প্রায় ৬০ বছর ধরে এ কাজই করে চলেছি। শখের ছাগল বিক্রি করতে মন চায় না। বর্তমানে এক রাজা আর তার ১৫ জন সঙ্গী রয়েছে। মৃত মেজোভাই নজরুলের পরিবারে থাকি কোনোমতে। সহায় সম্বল বলতে এই ছাগলগুলোই।

তিনি আরো বলেন, ক’দিনই আর বাঁচবো। যতদিন বেঁচে আছি ছাগল নিয়েই থাকবো। আপন বলতে এরাই আমার সব।

আমিরনের ভাবি চম্পা খাতুন বাংলানিউজকে বলেন, বিয়ে হয়ে আসার পর থেকেই আমি আমিরনকে ছাগল চরাতে দেখেছি। সকালে যায় আর বাড়ি ফেরেন সেই সন্ধ্যায়। ক’দিন ধরে চোখে ভালো দেখতে পারেন না। ৫ হাজার টাকা দিয়ে একটা ছাগল বিক্রি করে চিকিৎসা করিয়েছি। ছাগলই তার জীবনের সব। এই ছাগলের জন্যই অন্য কোথাও আর বিয়েও করলো না।

তিনি আরো বলেন, বয়স্ক ভাতা পেলে একটু ভালোভাবে দিন কাটাতে পারতো সে। বুড়ো বয়সে ছাগল নিয়ে আর মাঠে যেতে হতো না।

 

স্থানীয় বাসিন্দা রুবেল আহম্মেদ নান্নু বাংলানিউজকে বলেন, ছাগল পালন করেই কেটে যাচ্ছে আমিরনের জীবন। তাকে দিনের বেলায় বাড়িতে পাওয়া যায় না। মাঠে মাঠে ছাগল নিয়ে চড়ে বেড়ায়।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০১৮
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।