ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

অভাবের সংসার তাই কাজ করতে হয়

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩১৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১, ২০১৮
অভাবের সংসার তাই কাজ করতে হয় অভাবের সংসার তাই কাজ করতে হয়। ছবি: বাংলানিউজ

মাগুরা: সংসারে অভাব তাই লেখাপড়া না করে শহরের ঢাকা রোডে মোটরসাইকেল গ্যারেজে কাজ করছি। এ কাজ করে যা পাই তাতে বাবা-মা’র কিছুটা উপকার হয়।

কথাগুলো বলছিলো মাগুরা শহরের ১০ বছরের শিশু শ্রমিক কাওসার।

মাগুরা শহরে থেমে নেই শিশুশ্রম, দিন দিন যেন এর সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

আর এ জেলায় শ্রম অধিদপ্তরের কোনো অফিস না থাকায় এসব শ্রমিকের সঠিক সংখ্যাও জানা নেই।

বাবা-মায়ের মৃত্যু, পারিবারিক অস্বচ্ছলতা, অসচেতনতার কারণে ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় সম্পৃক্ত এসব শিশুর অধিকাংশ ভুগছে নানা শরীরিক ও মানসিক জটিলতায়। আবার অল্প বয়সে শ্রমে জড়িত এসব শিশুরা মাদক সেবনসহ নানা নেতিবাচক কর্মকাণ্ডেও জড়িয়ে পড়ছে।

শিক্ষা, স্বাস্থ্য বঞ্চিত এ সব শিশুদের মূল ধারায় ফিরিয়ে আনতে জেলায় নেই সরকারি-বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান। এমনকি মাগুরায় কত জন শিশু শ্রমে জড়িত রয়েছে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কোনো দপ্তর বা অফিস না থাকায় জেলার অন্য কোনো দপ্তরের কাছেও এর কোনো পরিসংখ্যান নেই। অভাবের সংসার তাই কাজ করতে হয়।  ছবি: বাংলানিউজসরেজমিন মাগুরার বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে- হোটেল, চায়ের দোকান, সাধারণ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও কম-বেশি শিশু শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে। এছাড়া অপ্রাপ্ত বয়স্ক কিছু শিশু-কিশোরকে শহরে রিকশা বা ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকও চালাতে দেখা গেছে। তবে শহরের অধিকাংশ ওয়ার্কসপ, মোটর গ্যারেজ, লেদ মেশিন, স্টিল ও ফার্নিচার কারখানাগুলোতে বড়দের পাশাপশি সমান তালে ঝুঁকিপূর্ণ এবং ভারী কাজ করছে শিশুরা।

শহরের পারনান্দুয়ালী ব্যাপারিপড়া সংলগ্ন এলাকায় সাটার তৈরির একটি ওয়ার্কসপে কর্মরত ১০ বছরের শিশু জনি বাংলানিউজকে জানায়, দেড় বছর ধরে সে এ ওয়ার্কসপে কাজ করছে। অন্যদের সঙ্গে মেশিনে প্লেনশিট কাটা, রিপিট লাগানো এবং হাতুড়ি পেটানোসহ সব কাজই তাকে করতে হয়। এত অল্প বয়সে ভারী কাজ করার কারণে মাঝে-মধ্যে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। কিন্তু বাবা মারা যাওয়ায় মা ও ৫ ভাই বোনের সংসারের খাবার জোগাতে গিয়ে সে শিশুশ্রমে জড়িয়ে পড়েছে।

একই এলাকায় অপর একটি লেদের দোকানে কর্মরত ১৫ বছরের শিশু বিপুল বাংলানিউজকে জানায়, লেখাপড়া শিখে তার মানুষের মত মানুষ হওয়ার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু সংসারে অভাবের কারণে বাধ্য হয়েই সে কাজে নেমেছে।

একই এলাকায় ১২ বছর বয়সী মজিদ কাজ করছে একটি মোটর গ্যারেজে। মজিদ জানায়, জন্মের পর বাবা মারা যাওয়ায় প্রচণ্ড শারীরিক দুর্বলতার পরও শুধু খাবার জোগাতে সে মোটর গ্যারেজে কাজ নিয়েছে। কিন্তু অন্য শিশুদের মত তারও স্কুলে যেতে ইচ্ছা করে।

মাগুরা জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা আহমেদ আল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, এক সময় মাগুরার দুই-একটি হোটেল, রেঁস্তোরা ও চায়ের দোকানে শিশুদের কাজ করতে দেখা যেত। কিন্তু এখন বিভিন্ন কল কারখানা, লেদ, ওয়ার্কসপ ও মোটর গ্যারেজে অংসখ্য শিশু শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে। অভিভাবকের মৃত্যু ও দরিদ্রতার কারণে জীবিকার তাগিদে আবার সামাজিক ও পারিবারিক অসচেতনার কারণে শিশুরা অল্প বয়সে এসব ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় জড়িয়ে পড়ছে।

অল্প বয়সে ভারী কাজে জড়িয়ে পড়া এসব শিশুর অনেকেই নানা শারীরিক ও মানসিক রোগে ভুগছে। আবার অনেক শিশু জড়িয়ে পড়ছে মাদক সেবনসহ নানা অসামাজিক কর্মকাণ্ডে। তবে মাগুরায় শ্রম অধিদপ্তরের কোনো অফিস না থাকায় কত সংখ্যক শিশু শ্রমে জড়িত তা বলতে পারেননি জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা আহমেদ আল হেসেন।

মাগুরা শহরের বিভিন্ন কলকারখানায় অসংখ্য শিশু শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে, তাদের পুনর্বাসন বা শিশুশ্রম বন্ধে পৌর কর্তৃপক্ষ কোনো উদ্যোগ নেবে কিনা-এমন প্রশ্নের উত্তরে পৌর মেয়র খুরশিদ হায়দার টুটুল বাংলনিউজকে বলেন, সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে তালিকা করে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় তারা শিশুশ্রম বন্ধের উদ্যোগ নেবেন।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আজাদ জাহান বলেন, যে সব প্রতিষ্ঠানে শিশুরা শ্রমিক হিসেবে কর্মরত রয়েছে তাদের মালিকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে তিনি মনে করেন, শিশুশ্রম বন্ধের আগে প্রয়োজন পুনর্বাসন ও পারিবারিক এবং সামাজিক সচেতনা। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিনি সে উদ্যোগ নেবেন বলে জানান।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০১৮
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।