এভাবেই এসএসসি পরীক্ষার উত্তরপত্র পূরণ করতে দেখা গেল প্রতিবন্ধী ওমর ফারুক সুমনকে। অন্য সবার মত চলাফেরা ও কথাবার্তা বলতে পারলেও জন্মগতভাবে তার দু’টো হাতই নেই।
বৃহস্পতিবার (০১ ফেব্রুয়ারি) এসএসসি পরীক্ষার প্রথমদিন বগুড়ার শেরপুর উপজেলার মজিবর রহমান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে সুমনের পরীক্ষা দেওয়ার দৃশ্যটি সবার নজর কাড়ে। শেরপুর ডিজে হাইস্কুলের কমার্সের ছাত্র সে। বাড়ি শেরপুরের উত্তর সাহাপাড়ায়। বাবা মজিবর রহমান পেশায় একজন শ্রমিক এবং মা ফাতেমা বেগম একজন গৃহিণী।
মা-বাবা ও চার ভাই-বোন নিয়ে তাদের সংসার। সুমন ভাইবোনদের মধ্যে সবার ছোট। বড় দু’বোনের বিয়ে হয়েছে। আরেক ভাই ছোটখাটো ব্যবসা করেন। বাবার সামান্য আয়ে চলে সংসার ও সুমনের লেখাপড়া।
পরীক্ষা শেষে একান্ত আলাপচারিতায় সুমন বাংলানিউজকে জানায়, ছোট বেলা থেকেই লেখাপড়ার প্রতি তার অনেক আগ্রহ। অভাবের সংসার হলেও মা-বাবা তাকে কখনও লেখাপড়া থেকে বিরত থাকতে বলেননি। সুমনের লেখাপড়ার পেছনে সাধ্যের মধ্যে যতটুকু সম্ভব ব্যয় করেছেন তারা।
সুমন শেরপুর পৌরসভা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে জিপিএ ৪ দশমিক ৩৫ গ্রেড পেয়ে পিইসি পাস করে। এরপর শেরপুর ডিজে হাইস্কুলে ভর্তি হয়। সেখান থেকে ২০১৫ সালে জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৪ দশমিক ১৫ গ্রেড অর্জন করে। একই প্রতিষ্ঠান থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে সুমন। প্রথমদিনের বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষা খুব ভাল হয়েছে বলে জানায় সে।
সে আরও জানায়, স্কুলে তার কাছ থেকে অর্ধেক বেতন নেওয়া হয়। তৃতীয় শ্রেণিতে থাকাকালে তাকে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড দেওয়া হয়। এরপরও তার বাবার পক্ষে লেখাপড়ার টাকা যোগার করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু জীবন যুদ্ধে হার মানতে নারাজ সুমন।
সুমন জানায় তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা। এসএসসি ও এইচএসসিতে ভাল ফলাফল করতে পারলে সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবে। হিসাব বিজ্ঞান বিষয়ের উপর উচ্চশিক্ষা নিতে ইচ্ছুক সে।
বাবা মজিবর রহমান বাংলানিউজকে জানান, ছাত্র হিসেবে সুমন খুবই ভাল। লেখাপড়ার তার প্রচণ্ড আগ্রহ। কিন্তু শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালানোই অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় সুমনের লেখাপড়ার খরচ দেওয়া তার পক্ষে প্রায় অসম্ভব।
তবে বাবা হিসেবে হতাশ নন মজিবর রহমান। তিনি মনে করেন, আল্লাহ্ তার ছেলের কোনো একটা ভালো ব্যবস্থা অবশ্যই করবেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০২২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০১৮
এমবিএইচ/এনএইচটি