তিনি বলেছেন, নিজেদের ভাষা, সংস্কৃতি, শিল্প-সাহিত্যকে যদি মর্যাদা দিতে না পারি, যদি তার উৎকর্ষ সাধন করতে না পারি, তাহলে জাতি হিসেবে আমরা বিশ্ব দরবারে উন্নত হতেপারবো না।
বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বাংলা একাডেমি চত্বরে বাঙালির প্রাণের মেলা ‘বইমেলা’ উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একথা বলেন।
এ সময় আগামী ২২ ও ২৩ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনেরও উদ্বোধন ঘোষণা করেন তিনি।
উদ্বোধনের আগে এ বছর বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্তদেরহাতে পদক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলা একাডেমি চত্বর ও ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রায় ৫লাখ বর্গফুট জায়গাজুড়ে আয়োজন করা হয়েছে এবারের বই মেলা।
বাঙালির শিল্প সংস্কৃতি বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্ব দরবারে পৌঁছে যাবে এমন আশা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এই মেলা জ্ঞানচর্চার দ্বার উন্মুক্ত করে দেয়।
‘বইমেলা শুধু বই কেনা বেচা নয়, বই আকর্ষণ করে। সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রটা প্রসারিত করে, অজানাকে জানার সুযোগ করে দেয়। কাজেই এই বই মেলা আমাদের প্রাণের মেলা,’ বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একুশে বই মেলায় নবীন লেখকদের বই প্রকাশের সুযোগ হয়। নুতন লেখক তৈরির সঙ্গে তৈরি হয় পাঠকও।
বক্তব্যের শুরুতে ভাষার দাবি আদায়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান, ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান পুলিশ বাহিনীর গুলিতে নিহত সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউর-সহ সকল ভাষা শহিদসহ ভাষা সংগ্রামী এবং জাতীয় চার নেতা, মহান মুক্তিযুদ্ধের ত্রিশ লাখ শহীদ, দু’লাখ নির্যাতিতা মা-বোনের কথা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলা একাডেমির সভাপতি ইমেরেটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, সংস্কৃতি সচিব মো. ইব্রাহিম হোসেন খান প্রমুখ।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ড. শামসুজ্জামান খান প্রমুখ।
বিদেশি অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, যুক্তরাজ্যের লেখক এগনিস মিডোসম, ক্যামেরুনের ড. জয়েস অ্যাসউন টেনটেন, মিশরের ইব্রাহিম এলমাসরি ও সুইডেনের অরনে জনসন।
উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অতিথিদের নিয়ে বাংলা একাডেমি প্রাঙণে বইমেলা ঘুরে দেখেন।
মেলা ঘুরে দেখার সময় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের স্টল থেকে চার বিদেশি অতিথিকে ‘বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী’ এবং ‘কারাগারের রোজনামচা’ উপহার দেন প্রধানমন্ত্রীশেখ হাসিনা।
বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ৯২টি প্রতিষ্ঠানকে ১৩৬টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৩৬৩টি প্রতিষ্ঠানকে ৫৮৩টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আর বাংলা একাডেমিসহ ২৪টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান পেয়েছে ২৪টি প্যাভিলিয়ন।
গ্রন্থমেলায় টিএসসি, দোয়েল চত্বর দিয়ে দু’টো মূল প্রবেশপথ, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে তিনটি পথ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ ও বাইরের ৬টি পথ থাকবে।
বিশেষ দিনগুলোতে লেখক, সাংবাদিক, প্রকাশক, বাংলা একাডেমির ফেলো এবং রাষ্ট্রীয় সম্মাননাপ্রাপ্ত নাগরিকদের জন্য প্রবেশে থাকবে বিশেষ ব্যবস্থা।
গ্রন্থমেলা ১ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। ছুটির দিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা এবং ২১শে ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত মেলা চলবে।
২ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে সেমিনার। শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি-রাজনীতি-সমকালীন প্রসঙ্গ এবং বিশিষ্ট বাঙালি মনীষীর জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া মাসব্যাপী প্রতিদিন সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
অমর একুশে গ্রন্থমেলা উপলক্ষে বাংলা একাডেমি শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন, সাধারণ জ্ঞান ও উপস্থিত বক্তৃতা এবং সংগীত প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে।
এবারও গ্রন্থমেলা উপলক্ষে ২২-২৩ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনের আয়োজন থাকছে। সম্মেলনে বাংলাদেশ, ফ্রান্স, স্পেন, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভারতসহ ৮টি দেশের ১৫ জন কবি-লেখক-বুদ্ধিজীবী অংশ নেবেন।
অমর একুশে বইমেলার বিভিন্ন তথ্য এবার পাওয়া যাবে ওয়েবসাইট (www.ba21bookfair.com) এবং মোবাইল অ্যাপে।
বাংলাদেশ সময়: ২১২১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০১৮
এমইউএম/এমএ