ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

রাকেশের হাতে ডানা মেলছে শ্যামলী 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২, ২০১৮
রাকেশের হাতে ডানা মেলছে শ্যামলী  ভারতে যাত্রা শুরুর আগে অন্য কর্মকর্তা-পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে রাকেশ ঘোষ/ছবি: বাংলানিউজ

কলকাতাগামী এনআর ট্রাভেলস থেকে: নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদল্যালয়ে যখন বি‌বিএ’র ছাত্র তখন তার শিক্ষক ব‌লে‌ছি‌লেন প‌রিবহন খা‌তে ইন্টার্নশিপ কর‌তে। সেসময় শিক্ষক‌কে মজা করে জা‌নি‌য়েছি‌লেন, ছোটবেলা থেকে প‌রিবহন খা‌তে ইন্টার্নি কর‌ছি। জন্মের পর চোখ খুলে বাস আর গ্যারেজ দেখেছি। বাবা এক‌টি টেম্পু কিনে চা‌লি‌য়ে‌ছেন। তারপর ১৫ বছ‌রের বে‌শি একটি বাস চা‌লি‌য়ে শত বা‌সের মা‌লিক হ‌য়ে‌ছেন। পরিবহন খাত আমার কাছে নতুন নয়। 

‌সেই র‌মেন্দ্রনাথ ঘো‌ষের ছে‌লে রা‌কেশ ঘোষ। তার বাবা সড়কপ‌থের প‌রি‌চিত পরিবহন শ্যামলীর সার্ভিস শুরু ক‌রে‌ছি‌লেন।

একটি টেম্পো থেকে থেকে বাসের মালিক। প্রজ‌ন্মের সিঁড়ি বেয়ে শ্যামলী পরিবহনের ব্যবসা ছে‌লে রা‌কেশ ঘো‌ষের হা‌তে।  

আরও দক্ষ ও পু‌রোদস্তুর প‌রিবহন ব্যবসায়ী হ‌য়ে আ‌গের চে‌য়ে বিস্তৃত পরিসরে ছ‌ড়ি‌য়ে‌ছেন ব্যবসা। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে শ্যামলী ডানা মেলেছে প্রতিবেশী দেশ ভারতে।

শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) কলকাতাগামী এন আর ট্রাভেলসের বাসে বসেই একথা জানাচ্ছিলেন বাংলানিউজকে।

২০০৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন বাবা তাকে শ্যামলী বাসের ব্যবসায় জড়ান।  রাকেশ বলেন, একেবারে পিয়নের কাজ ফাইল বাঁধা, আনা-নেওয়া থেকে আমার শুরু। এ কারণে সবার সঙ্গে মিশে যাই।

আরও আশ্চর্যের বিষয় দেখা গেলো, রাকেশ ঘোষ বাস মালিক হয়েও হেলপার, চালক, সুপারভাইজর সবাইকে 'কাকা' সম্বোধনে ডেকে মাতিয়ে রাখেন। এমনকি ব্যক্তিগত সহকারী ফটোগ্রাফারকেও তাই। বিনিময়ে তাদের ভালোবাসা তাকে মুগ্ধ করে। তাদের এক টেবিলে নিয়ে খেতেও বসেন।  

এর ব্যাখায় রাকেশ জানান, শ্রমিকেরও দুঃখ আছে। আমি শ্রমিকের দুঃখ বুঝি। পুরনো শ্রমিকরা যুগ যুগ ধরে তার পরিবহন ব্যবসায় খাটছেন। তাদের ভালোবাসায় এগিয়ে যেতে চান রাকেশ ঘোষ।  

সবকিছুর পরও ২০১৫ সাল‌কে টা‌র্নিং প‌য়েন্ট ম‌নে ক‌রেন রা‌কেশ ঘোষ। ওই বছর তার চাচা র‌মেশ ঘোষ আলাদা হ‌য়ে যান। বাস ব্যবসাও হ‌য়ে যায় ভাগাভা‌গি। এক শ্যামলী তিন নাম নেয়। শ্যামলী পরিবহন, শ্যামলী এন্টারপ্রাইজ ও এনআর ট্রাভেলস। এর মধ্যে শ্যামলী পরিবহন শুধু তার চাচা রমেশ ঘোষের। বাকি দু’টি বাস রাকেশ ঘোষ ও তার বাবার মালিকানাধীন।

ভারতে যাত্রা শুরুর আগে অন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে রাকেশ ঘোষ/ছবি: বাংলানিউজভাগাভাগির পর এক‌দিন পুর‌নো প‌রিবহন শ্র‌মিকরা এ‌সে গাবতলী‌তে রা‌কেশ ঘোষ‌কে জ‌ড়িয়ে ধ‌রেন। বাবার পুর‌নো বা‌সের ব্যবসা ‌যেন বন্ধ না করেন এই আকু‌তি জা‌নান। তার হা‌তে ছিল তখন ১০০ বা‌সের মা‌লিকানা।  

একদিন সময় নিয়ে প‌রের দিন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন। নতুন উ‌দ্যোমে শুরু হয় রা‌কেশ ঘো‌ষের পরিবহন ব্যবসা। তার হাত ধ‌রে মাত্র দুই বছ‌রে একশো বাস থেকে চারশো বাস হয়।  

সড়কপ‌থে যাত্রী সেবার নতুন নতুন দিক খুঁজে বের করছেন রা‌কেশ ঘোষ। শীতাতপ ও বিলাসবহুল এ‌কের পর এক বাস না‌মি‌য়ে‌ছেন। সব‌শেষ তি‌নি গ্রিনলাইনসহ ক‌য়েক‌টি প‌রিবহনকে পেছ‌নে ফেলে সেবার মান বিবেচনায় বাংলা‌দেশ-ভারতের কয়েকটি রুটে বাসসার্ভিস প‌রিচালনার দা‌য়িত্ব পান।  

এর আ‌গে তার চাচার মা‌লিকানাধীন শ্যামলী প‌রিবহন বাংলা‌দেশ-ভারত রু‌টে বাস প‌রিচালনা কর‌তো। ২ ফেব্রুয়া‌রি থে‌কে এন আর ট্রা‌ভেলস বাংলা‌দেশ-ভারতের চার রু‌টে বাস প‌রিচালনা শুরু কর‌লো। নতুন ৬টি হুন্দাই বা‌সে আ‌গের চে‌য়ে অত্যাধু‌নিক ও আরামদায়ক সেবা যাত্রীরা পা‌বেন ব‌লে জানান রা‌কেশ ঘোষ।  

ঢাকা থে‌কে কলকাতাগামী প্রথম বা‌সের যাত্রী হ‌য়ে নি‌জেই যা‌চ্ছেন রা‌কেশ ঘোষ। স‌ঙ্গে বাসভ‌র্তি যাত্রী। পথে পথে বাসশ্রমিক-চালকদের ফুলের শুভেচ্ছা নিচ্ছেন রাকেশ।

রাকেশ ঘোষের ৬ ইউনিট বাস ঢাকা-কলকাতা, ঢাকা-শিলং-গৌহাটি, ঢাকা-খুলনা-কলকাতা, আগরতলা-ঢাকা-কলকাতা এবং ঢাকা-আগরতলা রুটে চলবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০২, ২০১৮
এসএ/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।