গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে সবার উপস্থিতিতে বিদ্যালয়টির পুরাতন ভবন ভেঙে ৫ কক্ষ ও ৫ তলা বিশিষ্ট ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয়। মাটি কেটে সিসি ঢালাই শেষ করে কলামও প্রস্তুত করা হয়।
স্থানীয় সংসদ সদস্য বিএম মোজাম্মেল হক, ইউপি চেয়ারম্যান ইসমাইল মোল্যা ও সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তারা উদ্যোগ নিয়েও বিষয়টির সমাধান করতে পারেননি। ফলে বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এদিকে পুরনো ভবন ভেঙে ফেলায় শিক্ষার্থীদের পাঠদানে অসুবিধা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পারভেজ আক্তার। দ্রুত সমস্যা সমাধান করে ভবন নির্মাণে সবার সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।
বিদ্যালয়ের সভাপতি কাজী আমিনুল ইসলামের দাদা আইজদ্দিন কাজী ২৫ শতাংশ জমি বিদ্যালয়ের নামে দান করলে সেখানে ১৯৪৩ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে ৩শ’ ছাত্রছাত্রী ও ১০ জন শিক্ষক রয়েছেন। পিইডিপি-৩ প্রকেল্পর আওতায় বিদ্যালয়টির নামে ৫ কক্ষ বিশিষ্ট ৫ তলা ভবন অনুমোদন হয়। সে অনুযায়ী টেন্ডারের মাধ্যমে ওয়ার্ক অর্ডার অনুযায়ী গত সেপ্টেম্বর মাসে কাজ শুরু করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ভূঁইয়া কনস্ট্রাকশন।
বিদ্যালয়ের বর্তমান সভাপতি কাজী আমিনুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, বিদ্যালয়ের ভবনের জায়গার মধ্যে আমার ১২ ফুট জায়গা চলে যাওয়ায় আদালতে মামলা দায়ের করেছি। সে প্রেক্ষিতে আদালত ভবন নির্মাণ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন।
স্থানীয় সংসদ সদস্য বিএম মোজাম্মেল হক ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ইসমাইল মোল্যাসহ স্থানীয় মুরব্বিরা এসে ভবনের নকশা পরিবর্তন করে কাজ করার সিদ্ধান্ত দেন। কিন্তু উপজেলা প্রকৌশলী তাদের সিদ্ধান্ত মানছেন না।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পারভেজ আক্তার বলেন, বিদ্যালয়ের সভাপতি কাজী আমিনুল ইসলামসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয়ের পুরনো ভবন ভেঙে নতুন ৫ কক্ষ বিশিষ্ট বহুতল ভবন নির্মাণকাজ শুরু হয়। সে সময় ভবন নির্মাণে কারো কোনো আপত্তি ছিল না। সিসি ঢালাই শেষ করে কলাম প্রস্তুত চলছিল এ মুহূর্তে সভাপতি কাজ বন্ধের আবেদন করে আদালতে মামলা করেন। বিদ্যালয়ের নামে ২৫ শতাংশ জমির দলিল ও বিআরএস রেকর্ডও হয়েছে।
এ বিষয়ে সহযোগিতা চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর আবেদন করেছি। কিন্তু বিষয়টি মিমাংসার কোনো লক্ষণ দেখছি না। বর্তমানে ভবন নির্মাণ হবে কি না তা নিয়ে অনিশ্চিয়তার মধ্যে রয়েছি।
এদিকে পুরনো ভবন ভেঙে দেওয়ায় ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদানে অসুবিধা হচ্ছে। ভবনটি যাতে নির্মাণ হতে পারে সে ব্যাপারে সবার সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধান শিক্ষক।
জাজিরা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান শেখ বলেন, আদালত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত ভবন নির্মাণ শুরু করা সম্ভব নয়। তাই স্কুল কর্তৃপক্ষ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বিষয়টি দ্রুত মিমাংসার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। দ্রুত সমাধান করা না গেলে প্রকল্প বাতিল হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে স্কুলের জন্য বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে।
সেনেরচর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ইসমাইল মোল্যা এ বিষয়ে বলেন, মুসল্লিদের আপত্তি থাকায় স্থানীয় সংসদ সদস্য বিএম মোজাম্মেল হক স্কুলটি পরিদর্শনে গিয়ে নকশা পরিবর্তন করে ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত দেন। কিন্তু উপজেলা প্রকৌশলী সেটা মানছেন না। আর এ কারণেই ভবন নির্মাণ হচ্ছে না।
জাজিরা উপজেলা প্রকৌশলী ধীমলেন্দ্র সরকার বলেন, ‘সবার উপস্থিতিতে লে-আউট দিয়ে সিসি ঢালাই দিয়েছি। পরে স্কুলের সভাপতি আমাকে বিবাদী করে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। এটা শিক্ষা ডিপার্টমেন্টের বিষয়। আমরা হচ্ছি বাস্তবায়নকারী সংস্থা। আমি মামলার মধ্যে যাবো না। আর কেউ ভবনের নকশা পরিবর্তন করতে বললেই তো আর হবে না। তাছাড়া ঠিকাদারের ক্ষতিপূরণ কে দেবে। জুন মাসের মধ্যে প্রজেক্ট শেষ হয়ে যাবে। আমি আর কয়েকটা দিন দেখবো, তারপরে প্রজেক্ট ড্রপ দিয়ে দেব। আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি, তারাও বলেছে ড্রপ দিয়ে দিতে। ’
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩২ ঘণ্টা, ২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮
আরএ