২০১৭ সালে ২ ফেব্রুয়ারি সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ চলাকালে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন সমকাল পত্রিকার শাহজাদপুর প্রতিনিধি আব্দুল হাকিম শিমুল। পরদিন ৩ ফেব্রুয়ারি বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ঢাকায় নেয়ার পথে হাটিকুমরুল গোলচত্বর এলাকায় তার মৃত্যু হয়।
শিমুলের মৃত্যুর পরপরই সিরাজগঞ্জসহ সারাদেশের সাংবাদিকদের মাঝে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। শাহজাদপুরে সাংবাদিক ছাড়াও রাজনৈতিক, সামাজিক ও পেশাজীবী মানুষ আন্দোলনে নামে। সভা, সমাবেশ ও মানববন্ধনে উত্তাল হয়ে ওঠে সমগ্র দেশ।
এদিকে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শিমুলের স্ত্রী নুরুন্নাহার খাতুন বাদী হয়ে শাহজাদপুর পৌরসভার মেয়র হালিমুল হক মিরু ও তার ভাইসহ ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে শাহজাদপুর মামলা দায়ের করেন। ঘটনার তিনদিন পর ৫ ফেব্রুয়ারি মামলার প্রধান আসামি হালিমুল হক মিরুকে ঢাকার শ্যামলী এলাকা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য আসামিদেরও গ্রেফতার করা হয়। দ্রুত এগিয়ে চলে মামলাটির তদন্ত কাজ। তদন্ত শেষে ৩৮ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ।
নিহত সাংবাদিক শিমুলের পরিবারকে পুনর্বাসন করতে তাঁর স্ত্রীকে অ্যাসেনশিয়াল ড্রাগে চাকরি দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। এছাড়াও জেলা প্রশাসন ও শাহজাদপুর উপজেলা প্রশাসন তার দু সন্তানের শিক্ষার দায়িত্ব নিয়েছে।
এদিকে শিমুল হত্যার প্রকৃত খুনিকে আড়াল করে মেয়র মিরুকে ফাঁসানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে আসামিরা। সম্প্রতি সিরাজগঞ্জ প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে শিমুলের প্রকৃত খুনিদের বিচার দাবি করেন জামিনে থাকা মামলার ২৯ আসামি।
শাহজাদপুর উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতি শীতিকন্ঠ ঘোষ শিমুল, থানা আওয়ামী লীগের সদস্য কে এম নাসির উদ্দিন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহবায়ক আবুল হাসেমসহ শিমুল হত্যা মামলার একাধিক আসামি বলেন, ঘটনার দিন পৌর আওয়ামী লীগের বৃহিষ্কৃত এক নেতার নেতৃত্বে মিছিল নিয়ে মেয়র মিরুর বাড়িতে হামলা চালায়। তারা বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি ও বোমা বর্ষণ করে। হামলাকারীদের গুলিতে সাংবাদিক শিমুলসহ মেয়রের বাড়িতে থাকা ৩ কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়।
এ ঘটনায় থানায় মামলা করতে গেলেও পুলিশ মামলা নেয়নি। পরে মেয়রের স্ত্রী লুৎফুন নেছা পেয়ারী বাদী হয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলাটি জুডিশিয়াল তদন্তে ১৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয় এবং বিস্ফোরক ও দণ্ডবিধির ২ ধারায় বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ ও সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারাধীন। তারা বলেন, মেয়রের সমর্থক সাহেব আলী, কালু প্রামাণিক ও জহির আলী এখনও শরীরে স্প্রিন্টার বহন করে চলেছেন।
আসল হত্যাকারীকে চিহ্নিত করতে মামলাটির পূনঃ তদন্তের দাবি জানিয়ে মেয়র হালিমুল হক মিরুর ছোট ভাই হাফিজুল হক পিন্টু বলেন, পুনঃতদন্ত না হওয়া পর্যন্ত মামলাটি দ্রুত বিচার আদালতে পাঠানো স্থগিত চেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করা হয়েছে।
এদিকে মেয়র মিরুর নেতৃত্বেই শিমুলকে হত্যা করা হয়েছে এমন দাবি করে শাহজাদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খাজা গোলাম কিবরিয়া বলেন, তদন্তে প্রাথমিকভাবে ৩৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে।
মেয়র মিরুর বাড়িতে হামলা, গুলিবর্ষণের ঘটনায় দায়ের করা মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পুলিশি তদন্তে এ ঘটনার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। মেয়রের বাড়ির তিনজন লোক কীভাবে গুলিবিদ্ধ হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, তাদের গুলিতেই তারা গুলিবিদ্ধ হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ জজ আদালতে পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আব্দুর রহমান বলেন, আগামি ১০ এপ্রিল আদালতে মামলাটির চার্জ গঠন হওয়ার কথা রয়েছে। সাক্ষ্যদাতারা সঠিক কথা বললে জজ আদালতেই ন্যায় বিচার সম্ভব।
স্থানীয় সংসদ সদস্য হাসিবুর রহমান স্বপন মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের দাবি জানিয়ে বলেন, শিমুল হত্যাকাণ্ডে যেই দোষী হোক না কেন আমরা তার দ্রুত বিচারের মাধ্যমে শাস্তি চাই।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৪ ঘণ্টা, ০৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮
আরএ