দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পাট সংগ্রহের নামে প্রতারণা করছে জড়িত ওই চক্রটি। এদের বিরুদ্ধে মামলা করলেও জামিনে বের হয়ে বহাল তবিয়তে রয়েছেন তারা।
জানা গেছে, ২০১৬ সাল থেকে মনোয়ার হোসেন মনো নামে রাজবাড়ীর এক পাট ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ইউএমসি জুট মিলের তৎকালীন পাট বিভাগীয় প্রধান (ম্যানেজার, জুট উপ-ব্যবস্থাপক, পাট বিভাগ) এস এ এইচ মনোয়ার আলী এক হাজার বেল অর্থাৎ ১০ ট্রাক পাট বিজেএমসিতে নেওয়ার নামে সংগ্রহ করেন। কিন্তু তার কোনো বিল না দিয়ে পাটগুলো অন্য নামে বিল করে চালান দেখান। এরপর মনোয়ার হোসেন এ চক্রের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় দুই দফায় গ্রেফতার হলেও জামিনে বের হয়ে এখনও অসাধু কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন মামলার প্রধান আসামি মনোয়ার আলী। মামলাটি বর্তমানে সিআইডিতে রয়েছে।
মনোয়ার আলী এখন আছেন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ জুট ফাইবার গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজের উপ-ব্যবস্থাপকের পদে। মামলার অন্য আসামিরা হলেন-মাদারীপুরের ইউএমসি জুট মিলের চরমুগুরীয়ার ভারপ্রাপ্ত পার্সেজার মোজাম্মেল হক, ইউএমসি জুট মিলের সহ-পাট ক্রয় কর্মকর্তা আব্দুল মজিদ দেওয়ান, ইউএমসি জুট মিল ঘাট কয়াল আব্দুস সাত্তার ওরফে কাজল, ইউএমসি জুট মিলের সহ-ব্যবস্থাপক (পাট) নুরুল ইসলামসহ সাতজন।
মনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ইউএমসি জুট মিলের পাট বিভাগীয় প্রধান মানোয়ার আলী ও মাদারীপুরের ইউএমসি জুট মিলের চরমুগুরীয়ার ভারপ্রাপ্ত পার্সেজার মোফাজ্জেল হকের মৌখিক নির্দেশে ১০টি ট্রাকে প্রতিটি ১৩০ কেজি ওজনের এক হাজার বেল পাট রাজবাড়ীর কালুখালী গুদাম থেকে সরাসরি নরসিংদীর ইউএমসি জুট মিলে পাঠানো হয়। যার মূল্য ৬২ লাখ ৮৭ হাজার ১২৫ টাকা।
অথচ পাঠানো চালানগুলো মোজাম্মেল হক, মনোয়ার আলী ও গুদাম ইনচার্জ আরিফুল ইসলাম পরিবর্তন করে পাট বহনকারী ট্রাক নম্বর ও চালকের নাম ঠিক রেখে কৌশলে নতুন বিল তৈরি করে ওই টাকা আত্মসাৎ করেন। পরবর্তীতে তিনি নরসিংদীর ইউএমসি জুটমিলে গিয়ে জানতে পারেন তার নামে কোনো পাটের চালান জমা হয়নি। একই অপকর্ম করা হয়েছে অন্য জেলা থেকে আসা পাটেও। এমন বিভিন্ন প্রমাণ রয়েছে। মনোয়ারসহ টাকা আত্মসাতকারীদের বিরুদ্ধে মাদারীপুর এবং নারায়ণগঞ্জে মামলা হয়েছে।
এ অবস্থায় সরকারি এ প্রতিষ্ঠান থেকে পাট ব্যবসায়ীরা মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন বলে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিজেএমসিতে অপরাধী প্রতারক চক্রের দাপটে সরকারের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে অভিযোগ করে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা ইতোমধ্যেই প্রতারণা শিকার হয়ে বিভিন্ন জেলায় মামলা করেছেন। পাট সরবরাহকারীদের টাকা পরিশোধ ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি দিয়েছেন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী (মাদ্রাসা ও কারিগরি) কাজী কেরামত আলী। চিঠি দেওয়া হয়েছে বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমকেও।
এ প্রতারক চক্রের কথা স্বীকার করে পাট প্রতিমন্ত্রী গত ২৯ জুন সংসদে কাজী কেরামত আলীকে বলেছিলেন, ঘটনা সত্য। শুধু আপনার ভাই না, আরও অনেকের টাকা এভাবে মেরে দিয়েছে ওই চক্র। তিনি মামলা করতে বলেন। তারপর আরেকটি মামলা করে এখনও কোনো সুরাহা হয়নি। এমনকি প্রধানমন্ত্রী বরাবর ডিও লেটার দিয়ে কাজী কেরামত আলী সুরাহা চাইলে প্রধানমন্ত্রী পাট সচিবকে নির্দেশ দেন ঘটনার সুষ্ঠু বিচার করে ব্যবস্থা নিতে। তাতেও কোনো কিনারা করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা।
কয়েক কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে রাজবাড়ী থানায় দায়ের করা মামলায় নুরুল ইসলাম ও আরিফুল ইসলামকে পুলিশ ঢাকা থেকে গ্রেফতারও করেছিল। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এ দু’জনই ঘটনার জন্য দায়ী করেন প্রধান আসামি মানোয়ার আলীকে। এরপর মনোয়ার আলী মামলায় হাজিরা দিতে গেলে আদালত জামিন না দিয়ে তাকে হাজতে পাঠিয়ে দেন। তবে পরে জামিনে মুক্তি পেয়েই বিজেএমসি ও মন্ত্রণালয়ের বিশেষ মহলের সুবিধা নিয়ে বহাল তবিয়তেই রয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে মনোয়ার হোসেন, শহীদুল্লাহ সরকার, কার্তিক চন্দ্র সাহাসহ পাট ব্যবসায়ীরা কৃষকের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। অবিলম্বে এর সুরাহা না হলে আগামী মৌসুমে পাট কেনার আগেই বড় ধরনের আন্দোলনে যেতে প্রস্তুত সারাদেশের পাট ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ সময়: ১০০৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০১৮
এসএম/ওএইচ/আরআর