সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভরণ-পোষণের পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের জন্য ২৫ হাজার সোলার প্যানেলযুক্ত ঘর তৈরি করে দিতে চায় তুরস্ক। প্রতিটি বাসায় থাকবে এলইডি টিভি এবং সারাক্ষণ ইন্টারনেট সংযোগ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট উইংয়ের সূত্র বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। সূত্রটি বলছে, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভাসোগলু প্রথম রোহিঙ্গাদের খোরপোষের এ ঘোষণা দিয়েছিলেন। এরপর থেকে অব্যাহতভবে এ দায়িত্ব নেবার বিষয়ে বাংলাদেশকে বলে আসছেন দেশটির সংশ্লিষ্টরা।
২০১৭ সালের ৭ সেপ্টেম্বর তুরস্কের ফার্স্ট লেডি এমিন এরদোগান ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভাসোগলু কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালংয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেন।
ওই সময় তারা বলে যান, মিয়ানমারে জাতিগত সংঘাতের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের পাশে থাকবে তুরস্ক সরকার। তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাভাসোগলু সাংবাদিকদের বলেছিলেন, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ‘যোগাযোগ’ রাখবেন ফার্স্ট লেডি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশ কোনো রোহিঙ্গাকে স্থায়ী আশ্রয় দিতে চায় না। তাই এ বিষয়ে এখনই কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তুরস্ককে জানায়নি বাংলাদেশ। তবে অবস্থা বুঝে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, তুরস্ক সোয়া লাখ রোহিঙ্গার সব ধরনের খোরপোষের দায়িত্ব নিতে বারবার বাংলাদেশকে তাগিদ দিচ্ছে। তারা এসব রোহিঙ্গার জন্য দুই রুমের ২৫ হাজার বাড়ি বানিয়ে দেবে বলেও জানিয়েছে আমাদের।
সূত্র জানায়, প্রাথমিক আলোচনায় তুরস্ক এসব ঘর নিজ দেশ থেকে তৈরি করে নিয়ে আসবে বলে জানায়। নানা আলোচনা শেষে শেষ পর্যন্ত ১০ ফুট বাই ১০ ফুট ঘর তৈরি করে দেবে তুরস্ক, যদি বাংলাদেশ সম্মতি দেয়।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী এর চেয়ে ছোট ঘর বানালে তা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল হতে পারে বলে মনে করে দেশটির কর্তৃপক্ষ।
তুরস্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, যতদিন এ সোয়া লাখ রোহিঙ্গা তাদের দেশে ফিরে না যায় ততদিন তাদের বসবাস, খাদ্য, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ সব দায়িত্ব নেওয়া হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা জানান, চলতি মাসের ১ তারিখে ঢাকায় নিয়োজিত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত ডেভরিম ওসতুর্ক মন্ত্রণালয়ে ফের এ প্রস্তাব দিয়ে গেছেন। তিনি জানিয়েছেন, তুরস্ক দশকের পর দশক ধরে প্রায় ৩০ লাখ আরব শরণার্থীকে নিজ দেশে আশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে।
‘তাদের দক্ষ কর্মী বাহিনী এসব ঘর তৈরি করে দেবে। প্রতিটি ঘর হবে স্টিল নির্মিত অত্যাধুনিক ও সোলার প্যানেল বসানো এবং বাথরুম সংযুক্ত। ’
তিনি জানান, বাংলাদেশ এখনও ওই প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি। এতো গেল সোয়া লাখ রোহিঙ্গার কথা, বাকি রোহিঙ্গাদের কীভাবে রাখা হবে তা নিয়েও আমাদের ভাবতে হবে। কারণ প্রাণ ভয়ে পালিয়ে আসা মানুষগুলোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কোনো বৈষম্য সৃষ্টি করতে চায় না।
গত বছরের ২৫ আগস্ট রাখাইনে ‘জাতিগত নিধন’ শুরু করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় স্থানীয় মগরা।
পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, রাখাইনে তাদের বাড়ি-ঘরে আগুন দেওয়া থেকে শুরু করে হত্যা, লুণ্ঠন ও ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটানো হয়েছে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া অনেকের শরীরে ক্ষতের চিহ্নও রয়েছে।
বাংলাদেশে সময়: ০০০১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০১৮
কেজেড/এমএ