ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

তিনজন দুস্থ নিয়ে চলছে জিয়া মেমোরিয়াল অরফানেজ ট্রাস্ট

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২০৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১৮
তিনজন দুস্থ নিয়ে চলছে জিয়া মেমোরিয়াল অরফানেজ ট্রাস্ট জিয়া মেমোরিয়াল অরফানেজ ট্রাস্টের ভবন/ছবি: বাংলানিউজ

বাগেরহাট: দূর থেকে দেখলে মনে হবে জনমানবহীন কোনো পুরোনো পরিত্যাক্ত বাড়ি। তবে ভেতরে প্রবেশ করার পথে দেখা গেল ভবনের ছাদ এবং দেয়ালের পলেস্তার খসে খসে পড়ছে। 

১৯৯৪ সালে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস এম মোস্তাফিজুর রহমান ১০ থেকে ১৮ বছর এতিম-দুস্থদের লালন-পালন ও সাবলম্বী করার জন্য জিয়া মেমোরিয়াল অরফানেজ ট্রাস্ট নামে প্রতিষ্ঠানটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

বর্তমানে মাত্র তিনজন দুস্থ নিয়ে চলছে বাগেরহাটে জিয়া মেমোরিয়াল অরফানেজ ট্রাস্টের কার্যক্রম।

সঙ্গে আছে নামমাত্র প্রশিক্ষণ কর্মসূচি ও প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়।

জেলার সদর উপজেলার বেমরতা ইউনিয়নের ফতেপুর গ্রামে ৩.৯০ একর জমিতে করা প্রতিষ্ঠানে ৫ কক্ষের অফিস ভবন, এতিম-দুস্থদের থাকার জন্য ৩০ শয্যা বিশিষ্ট দোতলা আবাসিক ভবন, ১৮ কক্ষের দোতলা প্রশিক্ষণ ভবন, একতলা ক্লিনিক ভবন, মসজিদ, পুকুর, দর্জি বিজ্ঞান প্রশিক্ষণ উপকরণ এবং ৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী সবই ছিল।

২০০০ সালে ৩০ জন এতিম ও দুস্থদের নিয়ে শুরু হয় এটি। তারপর থেকে গড়ে ১৫ থেকে ২৫ জন এতিম ও দুস্থ নিয়ে ২০১১ পর্যন্ত চলছিল। কিন্তু কোনদিনই ক্লিনিকটি চালু হয়নি।

তবে বর্তমানে দেখলে মনে হয় যেন ভূতের বাড়ি। শ্যাওলা পড়া ভবন। ছাদের পলেস্তার খসে পড়ছে, যেন দেখার কেউ নেই। এর মধ্যে ২০১০ সালে ওমান সরকারের অর্থায়নে প্রতিষ্ঠানটির সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ করা হয়।

অবিভাবক শূন্যতা এবং এলাকায় শিশুশ্রম বেড়ে যাওয়ায় প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। ২০১২ সালে ১২, ১৩ তে ১০, ১৪-তে ৬, ১৫-তে ৬, ১৬-তে ৫, ১৭-১৮ তে এ সংখ্যা ৩ জনে এসে দাঁড়িয়েছে।

খসে পড়ছে পলেস্তার/ছবি: বাংলানিউজপ্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখতে ২০০৯ সালে প্রাক-প্রাথমিক এবং ২০১২ সালে মহিলাদের দর্জিবিজ্ঞান প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করে। প্রাক-প্রাথমিকে ৪ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুরা পড়ে। বর্তমানে ২২ জন শিশু রয়েছে। দর্জিবিজ্ঞান কোর্সে ১৫ জন শিক্ষার্থী আছে।

দুস্থ হিসেবে থাকা জেলার কচুয়া উপজেলার পিঙ্গুরিয়া গ্রামের বেলা মল্লিকের ছেলে মুরাদ মল্লিক (১০) বলেন, একবছর আগে মাকে ছেড়ে বাবা চলে যাওয়ার পর আমাকে এখানে দিয়ে গেছে। ভাল আছি। কাজ শিখছি।

সদর উপজেলার বিজয়পুর গ্রামের অলিয়ার রহমানের ছেলে মিলন শেখ (১১) বলেন, আব্বা খোঁজ নেয় না। মা মানুষের বাড়ি কাজ করে। তাই আমি এখানে থাকি। পড়াশুনা না শিখতে পারলেও কাজ শিখছি।

এতো দুরাবস্থার মধ্যেও প্রতিষ্ঠানকে টিকিয়ে রেখেছেন অধ্যক্ষ আফতাব আলম। তবে তিনি জানেন না এটা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের টাকায় চলে বা নাকি অন্য কারো অর্থায়নে চলে।  

রোববার (০৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে কথা হয় অধ্যক্ষ আফতাব আলমের সঙ্গে। আফতাব আলম বলেন, ২০০০ সালে আমি দায়িত্বে এসেছি। তারপর থেকে প্রতিমাসে যে খরচ হয় তা স্যারের (সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস এম মোস্তাফিজুর রহমান) ছেলে পাঠাতো। এখন তিনি আমেরিকায় থাকেন। আমেরিকায় যাওয়ার পর থেকে স্যারের অ্যাকাউন্টেট হাসান সাহেব প্রতিমাসে খরচের টাকা পাঠান। বর্তমানে প্রতিমাসে ৬০-৭০ হাজার টাকা খরচ হয়। তা হাসান সাহেব প্রতিমাসে কুরিয়ারে পাঠান।

বর্তমান কার্যক্রম সম্পর্কে আফতাব আলম বলেন, বর্তমানে একজন করে অধ্যক্ষ, শিক্ষক, দর্জিবিজ্ঞান প্রশিক্ষক, ইমাম, বাবুর্চি ও ২ জন  গার্ড  আছে।

শুরু থেকে এ পর্যন্ত ২৬২ এতিম ও দুস্থ এখান থেকে পড়াশুনা করে প্রশিক্ষণ নিয়ে গেছে। বর্তমানে তিনজন দুস্থ আছে। যাদের দর্জি বিজ্ঞান প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু আছে, সেখানে ২২ জন শিশু পড়াশুনা করছে। নারীদের দর্জি বিজ্ঞান প্রশিক্ষণে ১৫ জন প্রশিক্ষাণার্থী আছে। সকালে মসজিদে স্থানীয় শিশুদের কোরআন শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে এতিম ও দুস্থদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে চেষ্টা করি।

সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস এম মোস্তাফিজুর রহমানের ছেলে ব্যবসায়ী রিয়াজুর রহমানের প্রতিনিধি হাসান বলেন, রিয়াজুর রহমান স্যার প্রতিমাসে টাকা পাঠাতে বলেন তাই পাঠিয়ে দেই। এর থেকে বেশি কিছু বলতে পারবো না।

উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা আবুল মোকাররম মোহাম্মদ ফজলে এলাহী বাংলানিউজকে বলেন, জিয়া চ্যারিট্যাবল ট্রাস্টের এতিমখানা আমাদের কার্যালয়ে নিবন্ধিত নয়।

সমাজসেবা অধিদফতরের উপ-পরিচালক কানিজ মোস্তফা বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের এখানে জিয়া চ্যারিট্যাবল ট্রাস্টের এতিমখানার কোনো তথ্য নেই।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়েরকরা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় ৮ ফেব্রুয়ারি ঘোষণা করা হবে। দুদক ও আসামি পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে ২৫ জানুয়ারি রায়ের জন্য দিনটি (৮ ফেব্রুয়ারি) ধার্য করেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান।  

বাংলাদেশ সময়: ০৭০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০১৮
এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।