ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

জ্বলে ওঠার আগেই নিভে গেলো আশার প্রদীপ!

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১৮
জ্বলে ওঠার আগেই নিভে গেলো আশার প্রদীপ! নিহতদের স্বজনদের আহাজারি/ছবি: বাংলানিউজ

রাজশাহী: শাহার বানুর আশা ছিলো ছেলে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার পর ভর্তি করবেন ভালো কোনো ক্যাডেট কলেজে। সেখান থেকে উচ্চ শিক্ষা লাভের পর দেবেন সেনাবাহিনীতে।

সেখানে কর্মরত সার্জেন্ট স্বামী আবদুল মোমিনকেও টপকে যাবে ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান। কিন্তু একটি সড়ক দুর্ঘটনায় তার সব লালিত স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেলো।

সারা জীবনের জন্য কান্না ছেড়ে গেলো নাড়ী ছেড়া সন্তান আর প্রাণপ্রিয় স্বামী। সকালে হাসি মুখে বিদায় দিয়েছিলেন।

এভাবে শোকের সাগরে ভাসিয়ে তারা না ফেরার দেশে চলে যাবেন ভাবেননি কখনও। তাইতো কান্না থামছেনা তার। গগণ বিদারী কান্নায় পুরো এলাকার আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। কোনো সান্তনাতেই বুক ফাটা আর্তনাদ বন্ধ হচ্ছে না একই সঙ্গে স্বামীও সন্তান হারানো শাহারা বানুর!

সোমবার (০৫ ফেব্রুয়ারি) রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার তারাপুর সড়কে বাসের ধাক্কায় প্রাণ হারান এসএসসি পরীক্ষার্থী মোস্তাফিজুর রহমান ও তার বাবা সেনাবাহিনীর সার্জেন্ট আবদুল মোমিন। একই ঘটনায় প্রাণ যায় সহপাঠির সঙ্গে মোটরসাইকেলে চড়ে পরীক্ষা দিতে যাওয়া রাকিব হোসেন।

তাই সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত রাকিবের পরিবারেও চলছে শোকের মাতম। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে রাকিবের দিনমজুর বাবা-মা এখন পাগল প্রায়। অনেক আশা ছিলো ছেলে শিক্ষিত হয়ে বড় চাকরি করবে, তাদের দুঃখ গোচাবে। কিন্তু জ্বলে ওঠার আগেই নিভে গেলো দুঃখিনী মা-বাবার আশার প্রদীপ।

সড়ক দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। এর পর পরই সেখানে ছুটে যান নিহতদের স্বজনরা। এ সময় স্বজনদের কান্না আর আহাজারিতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।

নিহত এসএসসি পরীক্ষার্থী মোস্তাফিজুরের দুঃসম্পর্কের চাচা আলম হোসেন জানান, তার ভাই আবদুল মোমিন সৈয়দপুরের ১১ বেঙ্গল রেজিমেন্টের সার্জেন্ট পদে কর্মরত ছিলেন। ছেলে মোস্তাফিজুরের এসএসসি পরীক্ষার জন্য ছুটিতে বাড়ি এসেছিলেন। তাদের চার বছরের আরও একটি ছেলে রয়েছে।

গ্রামের বাড়ি পুঠিয়া উপজেলার ভাল্লুকগাছি ইউনিয়নের তেলিপাড়া। তবে ছেলের লেখাপড়ার সুবিধার্থে পুঠিয়া পৌর এলাকার ৮নম্বর ওয়ার্ডের কাঠালবাড়িয়া পূর্বপাড়া গ্রামে বাড়ি করেন আবদুল মোমিন। সেখান থেকেই সকালে মোটরসাইকেলে ছেলে ও তার সহপাঠী রাকিবকে নিয়ে বানেশ্বর ইসলামী উচ্চ বিদ্যালয়ের পরীক্ষা কেন্দ্রে যাচ্ছিলেন মোমিন। কিন্তু দুর্ঘটনায় পথেই প্রাণ হারান তারা।

রাজশাহীর পুঠিয়া পিএন উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক শামীম হোসেন বলেন, মোস্তাফিজুর ও রাকিব দুজনই এ স্কুলের শিক্ষার্থী। এর মধ্যে মোস্তাফিজুর তার বোনের ছেলে। আর রাকিব হোসেন কাঠালবাড়িয়া এলাকার কাবিল হোসেনের ছেলে। তার বাবা দিনমজুর। মা রাবেয়া বেগম বাড়িতে কাজ করেন। রাকিবের ছোট বোন লায়লা খাতুন স্থানীয় একটি প্রাথমিক স্কুলে তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে।

সকালে দেরি হয়ে যাচ্ছিলো বলে দুজনকেই মোটরসাইকেলে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন আবদুল মোমিন। কিন্তু উপজেলার তারাপুর সড়কে পৌঁছেই দুর্ঘটনায় পড়েন এবং ঘটনাস্থলেই নিহত হন।  

রাজশাহীর পুঠিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার বিকাশ কুমার সরকার বাংলানিউজকে বলেন, মূলত মুখ ও মাথায় গুরুতর আঘাত ছিল তাদের। মাথায় আঘাত লাগায় ব্রেন হেমারেজ হয়। এতেই তাদের মৃত্যু হয়। আর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনার আগেই তারা মারা গেছেন।

এদিকে, সড়ক দুর্ঘটনার পর দুপুর সোয়া ১টার দিকে পুঠিয়া সদরে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা। এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে বের হয়ে নিজ নিজ এলাকায় পরীক্ষা কেন্দ্র দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করতে থাকে তারা। পরে খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় এবং বিক্ষুব্ধদের সড়িয়ে ১৫ মিনিটের মধ্যে আবারও সড়কটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়।

পুঠিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সায়েদুর রহমান খাঁন বাংলানিউজকে বলেন, প্রথমে ময়নাতদন্ত ছাড়াই নিহতদের মরদেহ হস্তান্তরের কথা ভাবা হয়। কিন্তু নিহদের একজন সেনাবাহিনীতে কর্মরত থাকায় ময়নাতদন্তের সিদ্ধান্ত হয়। পরে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহগুলো রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। সন্ধ্যার মধ্যেই মরদেহগুলো হস্তান্তর করা হবে।

দুর্ঘটনার পর থেকে ঘাতক বাসটিকে এখন পর্যন্ত শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তবে চেষ্টা চলছে।  এ ঘটনায় থানায় মামলা হবে বলেও জানান পুঠিয়া থানার এ পুলিশ কর্মকার্তা।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০১৮
এসএস/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।