ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

নিজ ঘাঁটিতেই দিকশূন্য বিএনপি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১৮
নিজ ঘাঁটিতেই দিকশূন্য বিএনপি

ফেনী: বিএনপির রাজনীতিতে বরাবরই আলোচিত ছিল ফেনী। জেলাটি বিএনপির ঘাঁটি হিসেবেও পরিচিত। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সংসদীয় আসন ফেনী-১ থেকে বারবার নির্বাচিত হয়েছেন। জেলার বাকি দুটি আসনও অধিকাংশ সময় ছিল দলটির দখলে। 

কিন্তু বর্তমানে ফেনীতে বিএনপির সেই জৌলুস আর নেই। অব্যাহত মামলায় জর্জরিত হয়ে দলটির নেতা-কর্মীরা আন্দোলন তো দূরের কথা, উল্টো ফেরারী জীবন যাপন করছেন।

অপরদিকে মরার উপর খাড়ার ঘা হিসেবে রয়েছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল। বিএনপি যতবার আন্দোলন সংগ্রামের ডাক দিয়েছে ততবারই সক্রিয় ছিলেন ফেনী জেলা বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। বিভিন্ন সময় তাদের দলের পক্ষে সহিংস ভূমিকায়ও দেখা গেছে।

চলতি মাসের ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসনের দুর্নীতি মামলার রায় ও আসন্ন নির্বাচন নিয়ে দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা যখন সারাদেশের নেতা-কর্মীদের সক্রিয় হয়ে আন্দোলন-সংগ্রামের ডাক দিচ্ছেন; তখন বিএনপির এ দুর্গের নেতারা ছাত্রলীগ নেতা শাকিল হত্যা মামলায় পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এমন অবস্থায় আন্দোলন তো দূরের কথা নিজেদের অবস্থান জানান দিতেও ব্যর্থ হচ্ছে দলটি।

এ পরিস্থিতিতে অভ্যন্তরীণ কোন্দল যোগ করেছে বাড়তি মাত্রা। ফলশ্রুতিতে সাংগঠনিক কার্যক্রম অনেকটাই নিষ্ক্রিয়। তৃণমূল নেতাদের অভিযোগ নিজেদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অবস্থান টিকিয়ে রাখতে জেলার নেতারা ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে আঁতাত করে চলছেন। সাংগঠনিক কাজে তারা তেমনটা মনোযোগী নন।

দলটির প্রবীণ অনেক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফেনী জেলায় দলটির সুদিনের কথা। তারা জানায়, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ফেনীতে বিএনপির শক্ত অবস্থান ছিল। সেই সুদিন এখন আর নেই, দলটি এখন অনেকটাই নেতৃত্ব শূন্য। যার ফলশ্রতিতে ভেঙে পড়েছে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা।

দীর্ঘদিন ধরে দলটি চলছে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দিয়ে, একটি কমিটি গঠনও সম্ভব হয়নি অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে সাঈদ এস্কান্দার মারা গেলে তখন থেকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন আইনজীবী আবু তাহের। নানা গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছে ফেনী জেলা বিএনপি। বিজয় দিবস, একুশে ফেব্রুয়ারিসহ জাতীয় দিবসগুলোতে দেখা যায় বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নাল আবদীন ভিপি তার লোকজন নিয়ে মহড়া দিচ্ছেন। অন্যদিকে জেলা কমিটির নেতৃত্বের সঙ্গে দেখা অন্য নেতা-কর্মীদের।  

অন্যদিকে সাবেক সংসদ সদস্য রেহানা আক্তার রানু, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আবদুল আউয়াল মিন্টুরও রয়েছে আলাদা সমর্থকগোষ্ঠী। জেলা যুবদলের সভাপতি গাজী হাবিবুল্লাহ মানিক ও আনোয়ার পাটোয়ারীর মধ্যকার বৈরিতাও স্পষ্ট। তারা পৃথক পৃথকভাবেই রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করে থাকেন।

একই চিত্র ছাত্রদলের বিভিন্ন কমিটিরও। এক কমিটিতে নঈম উল্যাহ চৌধুরী বরাত সভাপতি, সালাহ উদ্দিন মামুন সাধারণ সম্পাদক। অপর কমিটিতে মেছবাহ উদ্দিন ভূঁইয়া সভাপতি, এস এম কায়সার এলিন সাধারণ সম্পাদক। উভয় পক্ষকে মাঝে মাঝেই আলাদা আলাদাভাবে দেখা যায় ঝটিকা মিছিল বের করতে।

দলের এমন অবস্থা নিয়ে কথা হয়, জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট আবু তাহেরের সঙ্গে। তিনি বলেন, এ জেলায় গণতান্ত্রিক রাজনীতির পরিবেশ নেই। সরকার দলীয় নেতা-কর্মীদের হামলা ও পুলিশের মামলায় আক্রান্ত বিএনপির নেতাকর্মীরা।

তিনি বলেন, দলের নির্বাহী কমিটির সভায় অংশগ্রহণ করেছি। দেশনেত্রীর নির্দেশনার আলোকে ফেনী থেকে সর্বাত্মক আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছি আমরা। এ ক্ষেত্রে কোনো দলীয় কোন্দল থাকবে না।

কথা হয় জেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান জুয়েলের সঙ্গেও। তিনি জানান, দলের অভ্যন্তরীণ বিষয় সমন্বয়ে ব্যর্থরা রয়েছে জেলা বিএনপির নেতৃত্বে।

ছাত্রদলের একাংশের সভাপতি নঈম উল্যাহ চৌধুরী বরাত বলেন, কোন্দল বুঝি না যারা প্রকৃতপক্ষে দল করেন তারা খালেদা জিয়া ও দলের ইস্যুতে ঘরে বসে থাকতে পারেন না। মামলা-হামলা হলেও আমরা রাজপথে থাকব।  

অপর কমিটির সভাপতি মেছবাহ উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, দলের মধ্যে মতপার্থক্য থাকলেও আশা করব দল ও নেত্রীর স্বার্থে সবাই এক হয়ে কাজ করবে।

বাংলাদেশ সময়: ০০২৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০১৮
এসএইচডি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।