৫/৬ মিনিট আগে আরেকটি ট্রেন চলে যাওয়ার পর যানজট ঠেলে রেলগেটের মধ্যে আসে গাড়িটি। তখন রেলগেটে সিগন্যাল ব্যারিকেড ছিল না।
দূর থেকে ট্রেনের গর্জন। যানজটের কারণে গাড়ি পিছনে সরানোর উপায় নেই, সামনে এগোনোর পথ নেই; ত্রাহি অবস্থা। গাড়ির সবার মধ্যে ট্রেনে চাপা পড়ে মৃত্যুভয়! চালকও দ্বিধাগ্রস্ত। কয়েক সেকেন্ডের সিদ্ধান্তে বিপরীত সড়কের সামান্য ফাঁকা স্থানে নিলেন গাড়িটি। এর দু’এক মিনিট পরেই পাশ দিয়ে সাঁই সাঁই আওয়াজ তুলে চলে যায় ট্রেনটি।
এমন ঘটনা ঘটছে নিয়মিত।
যানজট রাজধানীর রেল ক্রসিংয়ে ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণে। বিশেষ করে, গুরুত্বপূর্ণ এ ক্রসিংগুলোতে সিগন্যাল বাতি না থাকা বা পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকা, সময়মতো ব্যারিকেড না দেওয়া, গেটম্যানের অনুপস্থিতি কিংবা গাড়িচালকদের অসচেতনতায় প্রতিনিয়ত মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে নগরবাসী।
মৃত্যুঝুঁকির পাশাপাশি রেলওয়ের এসব ক্রসিংয়ের কারণে প্রতিদিন সময় অপচয় হচ্ছে রাজধানীবাসীর। রেল কর্তৃপক্ষের দাবি, অসচেতন গাড়িচালক ও পথচারীদের এমন মৃত্যুঝুঁকিতে পড়তে হচ্ছে। অন্যদিকে, রাজধানীবাসীর অভিযোগ, কর্তৃপক্ষের অবহেলা, নাজুক সিগন্যাল ব্যারিকেড আর গেটম্যানের অনুপস্থিতি এমন দুর্ঘটনার ঝুঁকির জন্য দায়ী।
সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর কারওয়ান বাজার রেল গেট, তেজগাঁও রেল ক্রসিং ও মালিবাগ রেলক্রসিংয়ে সিগন্যাল ব্যারিকেড না নামানো, গেটম্যানের অনুপস্থিতি, সিগন্যাল বাতি না জ্বলা প্রতিনিয়ত ঘটনা। বিশেষ করে সপ্তাহে পাঁচদিন (রোববার-বৃহস্পতিবার) অতিরিক্ত গাড়ির চাপে হুইসেলে সবাইকে সতর্ক করার পরও গাড়ি রেল লাইনের উপর থেকে সরানো যায় না। ট্রেন কাছাকাছি চলে এসেছে, তবু লাইনের ব্যারিকেড নামাতে পারে পারছেন না গেটম্যান- এমন ঘটনা ঘটছে অহরহ।
এফডিসি-সোনারগাঁওয়ে চা বিক্রেতা হাশেম বলেন, কারওয়ান বাজার রেলগেটের অবস্থা প্রায়ই ভয়াবহ হয়। সন্ধ্যা হলে গেটম্যান থাকে না। ব্যারিকেড ছাড়াই গাড়ি চলে। প্রায়ই চাবি দিয়ে ট্রেন স্লো করতে হয়।
এই রেল ক্রসিংয়ের গেটম্যান মো. রব বাংলানিউজকে বলেন, কারওয়ান বাজার রেলগেটে আমরা ১৩ জন ২৪ ঘণ্টা ডিউটি করি। কারা ফাঁকি দেয় জানি না। অনেক সময় স্টেশন মাস্টার সিগন্যাল দিতে দেরি করে, সিগন্যাল বাতি কাজ না করায় আমাদের আন্দাজ করে ব্যারিকেড নামাতে হয়। আবার অনেক সময় চাবি দিয়ে লাল বাতি জ্বালিয়ে ট্রেন স্লো করতে হয়।
অতিরিক্ত গাড়ির চাপ ও ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় কারওয়ান বাজার রেল ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি হয় বলে জানান এই গেটম্যান।
বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) চারজনের মধ্যে মো. রব দায়িত্বে ছিলেন। তিনি জানান, সমস্যা হয়েছিল। স্টেশন মাস্টার সিগন্যাল দিতে দেরি করেছেন। এর মধ্যে রেল ক্রসিংয়ে এতো গাড়ি ঢুকে পড়ে যে ব্যারিকেড দিতে পারছিলাম না। আবার কয়েকটি ট্রেন আসায় এ সমস্যা হয়। সপ্তাহে চার দিন এখানে সমস্যা হয়। ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় এফডিসি থেকে উল্টো পাশে গাড়ি আসে। এখানে ট্রাফিক পুলিশ জরুরি।
এদিকে তেজগাঁও রেলক্রসিং ও মালিবাগ রেলগেটেও একই অবস্থা। স্থানীয়রা জানান, ট্রেন আসছে ঠিক এমন সময় রেলগেটের উপর গাড়ির জটলা- এ ঘটনা প্রতিদিনেই ঘটে। যারা এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করেন তারা জানেন।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, দেশের ২ হাজার ৮৭৭ কিলোমিটার রেলপথে প্রায় ২ হাজার ৫৪১টি লেভেল ক্রসিং রয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার ১৭০টি, অর্থাৎ ৮৫ শতাংশই অরক্ষিত।
রাজধানীর রেলগেটের দুর্ঘটনার ঝুঁকি রোধে করণীয় কী? এ বিষয়ে কথা হয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ঢাকায় রেলক্রসিং ও গেটে যে দুর্ঘটনা ঘটেছে বা ঝুঁকি রয়েছে সেটা অনেকটাই নিরাপত্তার অভাবে। এর মধ্যে দায়িত্বরত গেটম্যানের অসচেতনতা, সময়মতো ব্যারিকেড না দেওয়াও রয়েছে। চালক ও পথচারীদের সিগন্যাল ব্যারিকেড না মানার কারণেও দুর্ঘটনা ঘটে।
মানুষের সচেতনতার পাশাপাশি ব্যস্ততম রেলগেট ও ক্রসিংগুলো পরিকল্পনা করে উড়াল সড়ক নির্মাণ করাও প্রয়োজন বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০১৭
এমসি/এএ