ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

লাউয়াছড়ায় পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের ছোঁয়া

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩০৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০১৮
লাউয়াছড়ায় পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের ছোঁয়া লাউয়াছড়ায় সীমানাপ্রাচীর নির্ধারণ-ছবি- বাংলানিউজ  

মৌলভীবাজার: লাউয়াছড়ায় পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। নানামুখী উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে। এতে সারাদেশ থেকে আগত পর্যটকরা লাউয়াছড়ায় খুঁজে পাবেন নানা সুবিধা। 

ইতোপূর্বে লাউয়াছড়ায় আধুনিক গণশৌচাগার বা ফ্রেস কর্নার ছিলো না। পর্যটকদের পড়তে হতো বিব্রতকর অবস্থায়।

ছিল না পর্যটক ছাউনি, সীমানাপ্রাচীর। এখন এ সবই হয়েছে, হচ্ছে। নানামুখী উন্নয়নের সুবিধা নিয়ে লাউয়াছড়া নিজেই অপেক্ষা করে রয়েছে পরিবেশবান্ধব ইকো-পর্যটকদের জন্য।   

শুধু তাই নয়, লাউয়াছড়ায় তৈরি করা হয়েছে মনোমুগ্ধকর প্রধান-ফটক। এই উদ্যানের অন্যতম প্রধান দুই প্রতীক ‘উল্লুক’ ও ‘অজগর’ প্রাণীকে তুলে ধরে নির্মাণ করা হয়েছে ফটকটি। নির্মাণ করা হচ্ছে রেল ক্রসিংয়ের অস্থায়ী ফটক। ফলে ঝুঁকিপূর্ণ যাতায়াত থেকে অনেকাংশেই সুরক্ষিত থাকবেন পর্যটকরা।  

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে সবচেয়ে বড় সাফল্য, এখানে গাছচুরি প্রায় দুই বছর ধরে বন্ধ। কর্তৃপক্ষের জোরদার টহলের কারণে এবং চিহ্নিত গাছচোরদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ায় তারা বনের গাছে দা-করাত লাগাতে সাহস পায় না।  পর্যটকদের জন্য নির্মিত ফ্রেস কর্নার।  ছবি- বাংলানিউজ  বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ সূত্র জানায়, সীমানাপ্রাচীর নির্ধারণ করে প্রায় অর্ধশত একর অবৈধভাবে দখল জায়গা উদ্ধার করা হয়েছে। আনারস-লেবু বাগানের মালিকরা ইতোপূর্বে লাউয়াছড়ার এ জায়গাগুলো অবৈধভাবে দখল করে রেখেছিলেন। সীমানাপ্রাচীর নির্ধারণের কাজ প্রায় চল্লিশ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে।  

বাগমারা এলাকার শ্রমিক ঠিকাদার ইউসুন মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, লাউয়াছড়ার সবচেয়ে বড় সাফল্য এর গাছপালা না কাটা। আগে তো ১০ টাকার বিনিময়ে প্রতিদিন ২০-৩০ জন বনে ঢুকে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করতো। গত দুই বছর ধরে এগুলো বন্ধ হওয়ায় বনের ছোট ছোট গাছ ও লতাগুল্ম বেড়ে উঠেছে।  

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মিহির কুমার দো বাংলানিউজকে বলেন, এখন লাউয়াছড়ায় নানা সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। পর্যটকরা এখন স্বস্তিতে বনভ্রমণ করতে পারবেন। পর্যটকদের জন্য বিশ্রামের স্থান।  ছবি- বাংলানিউজ  আমাদের নিরবচ্ছিন্ন মনিটরিংয়ের কারণে লাউয়াছড়ায় গাছচুরি পুরোপুরি বন্ধ। বিশেষ করে আমাদের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) তবিবুর রহমান অপরাধের খবর পাওয়ামাত্রই ঘটনাস্থলে ছুটে যান। এর ফলে অপরাধীরা অপরাধে সাহস পাচ্ছে না। এটা খুবই পজেটিভ দিক। এখন গাছচুরি হচ্ছে না বলেই আগামীতে হবে না– এমন তো না। তাই এটার ধারাবাহিকতাকে অবশ্যই ধরে রাখতে হবে। তাহলেই সুফল আসবে।  

ডিএফও বলেন, আরও একটি বিষয় হলো- যেকোনো সংরক্ষিত বনই কিন্তু রিনিউয়েবল ফরেস্ট। অর্থাৎ ওরা নিজ থেকেই জেগে ওঠে। প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া গাছপালাকে কেটে না ফেললে ক্রমে তাতেই কাজ হবে।

নানামুখী পজেটিভ কর্মকাণ্ড দিয়ে এই বনকে আগলে রাখলে আগামী দু-চার বছরে দেশের শ্রেষ্ঠ সমৃদ্ধ বন হবে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। আর এ জন্য প্রয়োজন তবিবুর রহমানের মতো বন কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০১৮
বিবিবি/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।