ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

পর্যটন খাতে মুসলিম দেশগুলো একত্রে কাজ করতে পারে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০১৮
পর্যটন খাতে মুসলিম দেশগুলো একত্রে কাজ করতে পারে বক্তব্য দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিআইডি

ঢাকা: পর্যটন শিল্পে ওআইসিভুক্ত দেশগুলো একত্রে কাজ করতে পারে বলে মত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

তিনি বলেছেন, পর্যটন শিল্প অন্যতম ক্ষেত্র যেখানে একসঙ্গে কাজ করার বড় সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে। মুসলিম উম্মার জনগণের কল্যাণে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার বিপুল সুযোগ ও ক্ষেত্র আমাদের সামনে রয়েছে।

এক্ষেত্রে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার বিনিময় নিজেদের মানোন্নয়নে সহায়তা করতে পারে।  

মঙ্গলবার (০৬ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর পর্যটন মন্ত্রীদের ১০ম ইসলামিক সম্মেলনের উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।  

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান বিশ্বে ইসলামিক অর্থনীতি একটা নতুন বিষয় হিসেবে উপস্থিত হয়েছে। এর বিকাশ অব্যাহত থাকবে এবং সারাবিশ্বের মুসলমানদের দ্বারাই এটি পরিচালিত হবে। ইসলামিক পণ্য ও সেবার বিশ্বব্যাপী সার্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা এবং একটি বিশাল ভোক্তা থাকার কারণে, বিশ্বাস-ভিত্তিক পণ্য ও সেবার সম্প্রসারণের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে।  

‘এমনকি অমুসলিম সম্প্রদায়ের কাছেও এ সকল পণ্য ও সেবা জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। একই সঙ্গে আমাদের ইসলামিক সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। ’ 

হালাল পর্যটনের ব্যাপ্তি প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ইসলামিক পণ্য ও সেবার একটি বড় অংশ জুড়েই রয়েছে ভ্রমণ ও পর্যটন। হালাল খাদ্য, ইসলামিক অর্থনীতি, হালাল ওষুধ এবং প্রসাধনী, হালাল পর্যটন ইত্যাদি ইসলামিক অর্থনীতির বর্ধিষ্ণু খাতগুলোর মধ্যে অন্যতম।  

এই খাতগুলোর উন্নয়নে ওআইসিভুক্ত দেশসমূহকে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সহযোগিতা ও অংশীদারিত্ব আরও জোরদার করতে হবে বলে অভিমত দেন তিনি।  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পারস্পরিক সহযোগিতার শক্তিতে বিশ্বাস এবং যৌথ ধারণার প্রতি অনুপ্রাণিত হয়েই বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে ওআইসিতে (অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কোঅপারেশন) যোগ দেন। তখন থেকেই বাংলাদেশ সব সদস্য রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে।  

পর্যটনমন্ত্রীদের সম্মেলন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বব্যাপী পর্যটন একটি দ্রুত বিকাশমান খাত, যা বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। ওআইসিভুক্ত দেশের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে আগামীতে বৃহত্তর পরিসরে সহযোগিতা ও সমন্বয় বাড়াতে এ সম্মেলনের বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে।  

রোহিঙ্গা সঙ্কটের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাপী উদ্বাস্তু সমস্যা তীব্র আকার ধারণ করেছে। বাংলাদেশও দীর্ঘদিন ধরে উদ্বাস্তু সমস্যা মোকাবেলা করছে। মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বিতাড়িত বিপুল সংখ্যক উদ্বাস্তু সম্প্রতি আমাদের দেশে প্রবেশ করেছে।  

‘নিজ বাসভূমিতে জাতিগত নিধনের ভয়াবহ নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণে আমরা অস্থায়ীভাবে আশ্রয় দিয়েছি। ওআইসিসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ- যারা রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে দৃঢ়ভাবে সমর্থন দিয়েছে, তাদের আমি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। ’

নিজের বক্তব্যে বাংলাদেশের পর্যটন সম্ভাবনা ও খাতগুলোর বিষয়েও বিস্তারিত তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পরপরই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পর্যটন শিল্পের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। এজন্য তিনি ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন প্রতিষ্ঠা করেন।  

‘পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে নিতে আমাদের সম্পদের অভাব নেই। আমাদের রয়েছে সুদীর্ঘ মেরিন ড্রাইভসহ বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ ও নিরবচ্ছিন্ন সমুদ্র সৈকত, কক্সবাজার। বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল এবং রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসস্থল সুন্দরবন বাংলাদেশে অবস্থিত। সাগরকন্যা কুয়াকাটা অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি। এসব স্থান পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় হতে পারে। ’

তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ। শতশত নদী জালের মতো ছড়িয়ে আছে, যা আমাদের দেশকে করেছে ছবির মতো সুন্দর। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে শত শত সবুজ চা বাগান আপনাকে দেবে অবকাশ যাপনের চোখ জুড়ানো মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ।  

‘আমাদের হাজার বছরের প্রাচীন ইতিহাস ও প্রত্ন-সমৃদ্ধ স্থানসমূহ, বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি এবং প্রাকৃতিক ঐতিহ্যসমূহ আন্তর্জাতিক পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়। বাংলাদেশের বন্ধুভাবাপন্ন মানুষ, তাদের আতিথেয়তা এবং মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে আত্মোৎসর্গের গৌরবময় ইতিহাস আপনাদের জন্য স্মরণীয় অভিজ্ঞতা হতে পারে,’ যোগ করেন শেখ হাসিনা।  
 
পর্যটন উন্নয়নে সরকারের নানা পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও যোগাযোগ বৃদ্ধি করতে দেশের বিভিন্নপ্রান্তে বৃহৎ আকারের বেশকিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রমত্ত পদ্মা নদীর উপর ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। এটি ঢাকার সঙ্গে সুন্দরবনসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করবে।  

‘পর্যটন রাজধানী কক্সবাজারে একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণ করা হচ্ছে। এটি নির্মিত হলে বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকে পর্যটকরা সরাসরি কক্সবাজারে আসা-যাওয়া করতে পারবেন। এছাড়া কক্সবাজারকে রেলওয়ে নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে। আমরা পর্যটকদের জন্য অবকাঠামোগত সম্প্রসারণ এবং বিনোদনের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতেও পদক্ষেপ নিয়েছি। ’

পর্যটন শিল্পকে ‘দ্রুত বর্ধনশীল খাত’ হিসেবে চিহ্নিত করে সরকার স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের জন্য আকর্ষণীয় বিনিয়োগ প্রণোদনা এবং সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে বলেও জানান তিনি।  

ঢাকায় এবার ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর পর্যটনমন্ত্রীদের ১০ম সম্মেলন ঢাকায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবারের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ‘পর্যটন উন্নয়নের মাধ্যমে আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধি’।

আগামী দুই বছরের জন্য ইসলামিক কনফারেন্স অব ট্যুরিজম মিনিস্টারস (আইসিটিএম) দশম সেশনের চেয়ারপারসন নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশের পর্যটন মন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান কামাল।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান কামাল, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ ফারুক খান।  

বক্তব্য রাখেন ওআইসি মহাসচিব ড. ইউসুফ আল ওথাইমিন ও ইসলামিক কনফারেন্স অব ট্যুরিজম মিনিস্টারস (আইসিটিএম) নবম সেশনের চেয়ারপারসন বোতো আহমেত।

পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজারের পর্যটনমন্ত্রী বোতো আহমেত বাংলাদেশের পর্যটনমন্ত্রী শাজাহান কামালের হাতে চেয়ারপারসনের দায়িত্ব হস্তান্তর করেন।

স্বাগত বক্তব্য দেন বেসামরিক বিমান ও পর্যটন সচিব এসএম গোলাম ফারুক।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০১৮/আপডেট: ১৪১৯ ঘণ্টা
এমইউএম/এমএ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।