আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি নবাবগঞ্জ পার্ক দখল করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) বহুতল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে যাচ্ছে। কমিউনিটি সেন্টারের নামে বহুতল ভবন নির্মাণের এ কার্যক্রম বন্ধের দাবি জানিয়েছে ১৯টি পরিবেশবাদী সংগঠন।
এ দাবিতে মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘পার্ক-মাঠে কমিউনিটি সেন্টার বা বহুতল ভবন নয়’ শীর্ষক মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে সংগঠনগুলো।
আয়োজক সংগঠনগুলো হলো-পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম, পুরান ঢাকা নাগরিক উদ্যোগ, সুবন্ধন সমাজ কল্যাণ সংগঠন, পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চ, বিসিএইচআরডি, নোঙর, সচেতন নগরবাসী, ইয়ুথ সান, জন উদ্যোগ, বাংলাদেশ সাইকেল লেন বাস্তবায়ক পরিষদ, বাংলাদেশ নিরাপদ পানি আন্দোলন, পুস্পাসাহা পুকুর রক্ষা কমিটি, আদিবাসী যুব পরিষদ, মার্শাল আর্ট ফাউন্ডেশন, ডাব্লিওবিবি ট্রাস্ট, ঐবাঁক, হীল, হিউম্যান রাইটস ডিফান্ডারস ফোরাম।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, সিটি কর্পোরেশনের এ উদ্যোগ এলাকার পরিবেশ বিপর্যয়সহ এলাকাবাসীর বিশেষ করে শিশুদের শারিরীক ও মানসিক বিকাশ হুমকির মুখে ঠেলে দিবে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। তাই নবাবগঞ্জ পার্ক কমিউনিটি সেন্টারের নামে বহুতল ভবন নির্মাণের কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে।
তিনি বলেন, জনসংখ্যা অনুসারে প্রত্যেক এলাকায় পর্যাপ্ত পার্ক-মাঠ, ব্যায়ামাগার, কমিউনিটি সেন্টার, পাঠাগার ইত্যাদি সেবামূলক স্থাপনা থাকা প্রয়োজন। কমিউনিটি সেন্টারে ব্যায়ামাগারসহ শারীরিক, মানসিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশের সুবিধা থাকলেও সেটি সব অনুষ্ঠানের জন্য বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত হয়।
আবু নাসের খান বলেন, ঢাকায় এমনিতেই খোলা জায়গার সংকট রয়েছে। সেখানে কখনই পার্ক-মাঠের জায়গা দখল করে এ ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করা উচিত নয়।
সিটি কর্পোরেশনের উচিত জনসংখ্যা অনুসারে এলাকা ভিত্তিক পর্যাপ্ত পরিমাণে ব্যায়ামাগার, পাঠাগার, সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে সেবামূলক স্থাপনা গড়ে তোলা।
তিনি বলেন, কমিউনিটি সেন্টার নয়, শারিরীক ও মানসিক বিকাশের জন্য আমরা পরিবেশ সম্মত পার্ক চাই।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, বর্তমানে একটি আদর্শ নগরীর জন্য ২৫ শতাংশ খোলা এলাকা রাখার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। ঢাকা শহর স্ট্রাকচার প্ল্যান ১৯৯৫ অনুসারে পুরান ঢাকায় ৫ শতাংশ নতুন ঢাকায় ১২ শতাংশ এলাকা সবুজ ও খোলা জায়গা দেখানো হয়েছে। ১৯৯৫ সালের পরিকল্পনায় ২০১৫ সালের মধ্যে ঢাকায় ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য ২০ শতাংশ খোলা এলাকা গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে দীর্ঘ ২২ বছরে এ লক্ষ্যে কোনো কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়নি।
বক্তারা আরও বলেন, সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ঢাকার অনেকগুলো পার্ক ও উম্মুক্ত স্থান ইতোমধ্যে গ্রাস করেছে। যেমন- টিকাটুলি পার্ক, উত্তরা ১ নম্বর সেক্টর পার্ক, মোহাম্মদপুরস্থ শহীদ পার্ক, আজিমপুর পার্ক ইত্যাদি।
এছাড়া অনেকগুলো পার্ক ও উম্মুক্ত স্থানের অংশ বিশেষ ওয়াসার পাম্প স্টেশন, সিটি কর্পোরেশনের কমিউনিটি সেন্টার, কমিশনারের অফিস, ক্লিনিক ইত্যাদির জন্য দখল করা হয়েছে। যেমন-নবাবগঞ্জ পার্ক, যাত্রাবাড়ি ক্রসিং পার্ক, নয়াটোলা শিশু পার্ক, লালমাটিয়া নিউ কলোনী পার্ক, পান্থকুঞ্জ, সলিমুল্লাহ রোড মাঠ ইত্যাদি।
এটা খুবই দুঃখজনক যে নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ নিজেই ঢাকার মূল্যবান পার্ক ও উম্মুক্ত স্থানের বিষয়ে সচেতন নয়। সিটি কর্পোরেশনের পার্ক ও উম্মুক্ত স্থানে আরও কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এভাবেই ছোট ও মাঝারি আকারের পার্ক, খেলার মাঠ ও উম্মুক্ত স্থান বলপূর্বক দখলের ঝুঁকিতে রয়েছে।
মানববন্ধনে এসময় উপস্থিত ছিলেন-নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মো. তৈয়ব আলী, সুবন্ধন সমাজ কল্যাণ সংগঠনের সভাপতি হাবিবুর রহমান, নোঙরের সভাপতি সুমন শামস প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০১৮
এসজেএ/আরবি/