ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

অ্যাম্বুলেন্স-ফায়ার সার্ভিস লেন জরুরি

আসিফ আজিজ, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০১৮
অ্যাম্বুলেন্স-ফায়ার সার্ভিস লেন জরুরি অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিসের ল্যাডার ও পুলিশের গাড়ি

ঢাকা: কামরুল হাসানের বাবা সকালে হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হলেন। একরাশ উৎকণ্ঠা, টেনশন নিয়ে ডাকলেন অ্যাম্বুলেন্স। বাবাকে নিতে হবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। রওয়ানা হলেন বনানী থেকে। সঙ্গে নিলেন পাশে থাকা দুজন বন্ধু ও পরিবারের দুই সদস্যকে। অক্সিজেন মাস্ক পরানো থাকার পরও তখন বাবার দীর্ঘশ্বাস উঠছে। কিন্তু মহাখালী যেতেই পড়লেন যানজটে। মিনিট দু’য়েক গাড়ির নড়াচড়া না দেখে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলেন ভিআইপি সিগন্যাল। এদিকে তার বাবার অবস্থা আরও অবনতির দিকে।

কামরুলের বন্ধু রাকিব অ্যাম্বুলেন্স থেকে নেমে গেলেন ট্রাফিক পুলিশকে তাদের অসহায়ত্বের কথা জানাতে। রোগীর আশঙ্কাজনক অবস্থা জেনেও  ট্রাফিক পুলিশ কিছুতেই ছাড়তে রাজি হলেন না।

এর মিনিট দশেকের মধ্যে মারা গেলেন কামরুলের বাবা। বন্ধুরা ক্ষেপে গিয়ে পেটালেন ট্রাফিককে। কিন্তু তাতে সমাধান কিছু হলো না। কামরুলের বাবা মারা গেলেন আর পুলিশ পেটানো বন্ধুরা ভয়ে দিলেন গা ঢাকা।

এটা একটি সত্য ঘটনা। এমন ঘটনা রাজধানীতে ঘটছে প্রতিনিয়ত। কোনো আমরা জানি, কোনোটা জানতে পারি না। মানুষের জীবন যখন যানজট আর ভিআইপি সিগন্যালের কাছে অসহায় তখন ভিআইপিদের জন্য আলাদা লেনের দাবি তোলায় শোরগোল পড়ে গেছে গোটা দেশে। মানুষের জীবনের চেয়ে নিশ্চয় কোনো ভিআইপি যাতায়াত জরুরি হতে পারে না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, গণমাধ্যমে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন দেশের সচেতন নাগরিকরা। ভিআইপি লেন নয়, উল্টো সবার দাবি অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিসের মতো জরুরি সেবা নির্বিঘ্নে পরিচালনা ও সম্পন্ন করার জন্য আলাদা লেন।

চীনের অ্যাম্বুলেন্স লেন্সগত ৫ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে ভিআইপি লেনের বিষয়টি উত্থাপন করা হয়। এর পরেই চারদিকে থেকে আসতে থাকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া।  

ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন দেশের পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার দেশ চীন, থাইল্যান্ডেও রয়েছে আপদকালীন জরুরি সেবার জন্য হাইওয়ে ও মেট্রোপলিটন সিটির মধ্যে রয়েছে আলাদা লেন। মনিটরিংয়ের জন্য রয়েছে ক্যামেরা ট্র্যাপিং পদ্ধতি। আইন ভাঙলে জরিমানা পৌঁছে যায় বাসায় কিংবা বাহনের গায়ে লাগিয়ে দেওয়া হয় স্টিকার বা টিকিট। শাস্তি আর্থিক জরিমানার পাশাপাশি লাইসেন্স বাতিল। উন্নত বিশ্বের মতো আধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার কথা না ভেবে বাংলাদেশে ভাবা হচ্ছে শুধু ভিআইপিদের কথা মাথায় রেখে আলাদা লেন।

ফায়ার সার্ভিসের ল্যাডার গাড়িদেশের সচেতন নাগরিক ও বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়ক, ফ্লাইওভার এবং দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ঢাকায় প্রবেশের মূল সকড় ও বিশেষ কিছু হাইওয়েতে অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাড়ি, ওয়াসা-বিদ্যুতের জরুরি সেবার জন্য আলাদা লেন জরুরি। তবে পুলিশ বিশেষ ক্ষেত্রে সেই লেনে পাইলটিং করে গার্ড দিয়ে ভিআইপিদের গন্তব্যে নিয়ে যেতে পারে।  

বিশ্বের বহু দেশে ঘুরেছেন এমন একজন বিশিষ্ট সচেতন নাগরিকের মতে, বিশ্বের অধিকাংশ দেশে অ্যাম্বুলেন্স-ফায়ার সার্ভিসসহ জরুরি সেবার ক্ষেত্রে যেন কোনো বাধার সৃষ্টি না হয় সেজন্য আলাদা লেন রয়েছে। অথচ আমরা সেগুলোর কথা না ভেবে ভিআইপি লেন করার চিন্তা-ভাবনা করছি। এ চিন্তা বাদ দিয়ে জরুরি সেবার জন্য লেন করার দিকে সরকারের মনোযোগ দেওয়া উচিত। লেনগুলো এয়ারপোর্ট-শাহবাগের মতো গুরুত্বপূর্ণ সড়কসহ রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক, ঢাকার প্রবেশমুখ ও হাইওয়েতে কালার মার্ক করা আলাদা লেন প্রয়োজন। লেনটি শুধু জরুরি সেবার বাহন চলার কাজে ব্যবহার হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মুভমেন্টও জরুরি সেবার মধ্যেই পড়ে। আর ভিআইপিদের ক্ষেত্রে চাইলে পুলিশ বাইকে পাইলটিং করে নিয়ে যেতে পারে। তাতে সমস্যা কমবে। সুবিধা হবে সবার।  

ঢাকার সড়কে পুলিশের গাড়িতিনি জানান, বিদেশে লেন মেনটেইন ও গতি পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে ক্যামেরা ট্র্যাপিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এতে আলাদা লোকবলের প্রয়োজন নেই। বিশেষ লেনে সাধারণ গাড়ি ঢুকলে উচ্চহারে জরিমানা গাড়ি মালিকের বাসায় পৌঁছে যায়। এমনকী কলকাতায়ও গতি নিয়ন্ত্রণে ক্যামেরা ট্র্যাপিং পদ্ধতি চালু হয়েছে। আমরা এগিয়ে না গিয়ে কেন পশ্চাৎপদ সিদ্ধান্ত নেবো।

যানজটে এভাবেই আটকে থাকে অ্যাম্বুলেন্সবিশেষজ্ঞদের মতে, আলাদা লেন ও ক্যামেরা ট্র্যাপিং পদ্ধতি চালু করলে পুলিশের মোবাইল কোর্টের আর প্রয়োজন হবে না। আর পুলিশের বিরুদ্ধে যে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে সেটিও দূর হবে। তবে বিভিন্ন ব্যক্তিগত বাহনে পুলিশ বা বিশেষ কোনো বাহিনীর স্টিকার লাগিয়ে বিশেষ লেনে চলার বিষয়টি প্রতিরোধের দাবি জানান তারা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাড়ি দায়িত্বরত অবস্থায় চলতে পারে বিশেষ এ লেনে। ডিটেকটিভ বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী র‌্যাব-পুলিশের গাড়িতে হুডার থাকতে হবে, যেন বোঝা যায়।  

বিশেষ লেনটি অবশ্যই ফায়ার সার্ভিসের ল্যাডারসহ চলাচল করা বড় গাড়ি যেন চলতে পারে সেই অনুযায়ী করতে হবে বলে মনে করেন সচেতন নাগরিক সমাজ। এতে র‌্যাব-পুলিশ-ডিটেকটিভ, অ্যাম্বুলেন্স, ওয়াসার গাড়ি সহজেই চলতে পারবে। এতে যেমন সময় বাঁচবে, তেমন সেবা দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাবে দ্রুত। আর ভিআইপি সিগন্যাল বা যানজটে আটকে থেকে অকালে মরতে হবে না কোনো রোগীকে। লেন শুধু তৈরি করলেই হবে না, লেন তৈরি করে সেটির সঠিক ব্যবহার নিয়ে প্রচারণা ও সচেতনতাও জরুরি।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০১৮
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।